ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৪৭

আশুরার রোজা নিয়ে মহানবীর বাণী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৪ ২৯ আগস্ট ২০২০  

আবহমান কাল থেকেই মহররম বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্য বহন করে আসছে। হিজরি বা আরবি বছরের প্রথম মাস মহররম। অনেকের ধারণা, কারবালায় নির্মম ঘটনার কারণে ইসলামি শরিয়তে আশুরার এত গুরুত্ব। অথচ এ ধারণা সঠিক নয়। কেননা কারবালার কাণ্ডের বহুকাল পূর্বে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে। 
অবশ্য এ তারিখটি মুসলিম বিশ্বের কাছে গভীর শোকের দিন। এ দিনে বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। তাই ঐতিহাসিকভাবে দিনটি অনেক গুরুত্ববহ। এছাড়া আশুরায় রোজা রাখার নির্দেশ আমরা মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ থেকে পেয়ে থাকি।
এ দিনে রোজা রাখার গুরুত্ব হাদিসে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (মুসলিম)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) মদিনায় এসে ইহুদিদের আশুরার রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এটা কিসের রোজা রাখ? তারা উত্তরে বললেন, আশুরা একটি বড় দিন। এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তিদান করে ফেরাউন এবং তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন। ফলে মুসা (আ.) ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। আর আমরা তার অনুকরণ করে এ রোজা রেখে থাকি।
মহানবী (সা.) তাদের বললেন, তোমাদের তুলনায় মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে আমাদের হক বেশি। অতএব, মহানবী (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রাখার নির্দেশ দিলেন। (মিশকাত)
হজরত আবু কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা পালন করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও সেই কালে রোজা পালন করতেন। মদিনায় এসেও তিনি রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও নির্দেশ দিলেন। রমজানের রোজার আদেশ নাজিল হলে আশুরা দিবস বর্জন করা হয়। এখন কেউ চাইলে তা পালন করুন, আর চাইলে তা বর্জন করুন। (বুখারি)
পবিত্র এ মহররমে আশুরা উপলক্ষে দুই দিন অর্থাৎ ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখতে বলেন। তখন তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বলল-হে আল্লাহর রাসুল! 
এ দিনে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরাও রোজা পালন করেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ চাইলে আমরা পরের বছর নবমীর দিন (মহররমের ৯ তারিখও) রোজা পালন করব। কিন্তু পরের বছর বিশ্বনবী ইন্তেকাল করেন। (মুসলিম)
মহানবী (সা.) প্রতিমাসেই কমবেশি নফল রোজা রাখতেন। কিন্তু রমজানের পর মহররম মাসের রোজাকে তিনি অনেক গুরুত্ব দিতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। (মুসলিম, জামে তিরমিজি)
অপর বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি। (বুখারি)
পরিশেষে এটাই বলব, আশুরা উপলক্ষ্যে অনৈসলামিক কোনও কার্যক্রম না করে বরং হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগের কথা চিন্তা করে এবং মহররম মাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের রোজা, নফল ইবাদত, দোয়া, ইস্তেগফারে রত থেকে অতিবাহিত করা উচিত।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার ওপর আমল করা তৌফিক দান করুন, আমিন।