ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৩১

ডেঙ্গুর কবল থেকে মুক্তির উপায়

ঈদযাত্রার আগে করণীয়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১৯ ৮ আগস্ট ২০১৯  

পবিত্র ঈদুল আজহায় পরিবার সদস্যদের নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন? তাহলে জেনে রাখুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ এবং ডেঙ্গুজ্বর থেকে রক্ষায় যেগুলো উপকারে আসবে সবারই।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর হতে ঘরমুখী মানুষের জন্য সরকারিভাবে ডেঙ্গু সম্পর্কে কতিপয় সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রাণঘাতি এ জ্বর থেকে রেহাই পেতে এসব পরামর্শ দেয়া হয়।

যা করতে হবে : 

>> বাসার সব কক্ষের দরজা, জানালা ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে

>> টয়লেটের কমোড ঢেকে যেতে হবে

>> বাথরুম / টয়লেটের জানালা বন্ধ রাখতে হবে

>> বালতি, বদনা ও ড্রাম খালি অবস্থায় উল্টো করে রেখে যেতে হবে

>> বারান্দায় ফুলের টব বা এমন কোনো পাত্র রেখে যাওয়া যাবে না, যেখানে বৃষ্টির পানি জমতে পারে

>> সোফা, পর্দা ও ঝুলন্ত কাপড়ের নিচে লুকিয়ে থাকে এডিস মশা। এসব জায়গায় অ্যারোসল স্প্রে করে যেতে হবে

>> ফ্রিজের পানি জমার জায়গায় ন্যাপথলিন দিয়ে রাখতে হবে

>> রান্নাঘরে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, তা খেয়াল করতে হবে

>> যাওয়ার আগে ঘরের মেঝে, বারান্দা ও বাথরুম পরিষ্কার করে অ্যারোসল স্প্রে করে যেতে হবে

>> অব্যবহৃত বোতল বা কন্টেইনার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে

কোরবানির ঈদে ১২ দিনের ছুটির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে, সেই বিষয়ে আলাদা পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

এতে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১২ দিন বন্ধ থাকবে। স্বভাবতই এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত থাকেন না। এ সময়ে খেলার মাঠ, ফুলের টব, পানি জমে এমন যে কোনো পাত্রে এডিস মশার প্রজনন প্রক্রিয়া আরও বেগবান হয়ে উঠতে পারে। এতে সরকার কর্তৃক গৃহীত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত ও ডেঙ্গু আরও বিস্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে : 

>> ঈদের ছুটির সময় একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে কর্মচারী, স্কাউট, বিএনসিসি এবং শিক্ষার্থী সমন্বয়ে ছয় থেকে ১০ জনের টিম গঠন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আশপাশের সব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার সম্ভাবনা থাকে (যেমন ফুলের টব, পানির ট্যাপের আশপাশের এলাকা, পানির পাম্প, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার ট্রে, বাথরুমের পানির বদনা, বালতি, হাই কমোড, আইসক্রিম বক্স, ডাবের খোসা, টায়ার ইত্যাদি) সেসব জায়গা চিহ্নিত করে একদিন অন্তর অন্তর পরিষ্কার করতে হবে।

>> বাথরুমের বদনা এবং বালতি পানিশূন্য করে উল্টিয়ে রাখতে হবে। হাই কমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে। বাথরুমের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে।

>> কোনো জায়গায় জমাটবদ্ধ পানি থাকলে লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে অথবা জমাটবদ্ধ পানি নিষ্কাশন করতে হবে।

>> ১২-১৩ অগাস্ট ছাড়া ছুটির অন্যান্য দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষ খোলা রাখতে হবে। রোস্টার ডিউটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

>> ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন / পৌরসভার এ সংক্রান্ত টিমে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ ঈদের ছুটিতে গেলে তার স্থলে উপযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

 

শরীরে যেসব লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় যা -

১. ডেঙ্গুর লক্ষণ

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে। ঘাম দিয়ে ছেড়ে দেয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

২. জ্বর হলে কী করবেন?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সঙ্গে সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোনও বিষয় জড়িত থাকলে, সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।

৩. বিশ্রামে থাকতে হবে

সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। এ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করেন। অনেক কাজ করেন। সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম দরকার।

৪. কী খাবেন?

প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। অবশ্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে তা নয়, পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

৫. যেসব ওষুধ খাওয়া যাবে না

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তা হলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৬. রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয়। প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোনও প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

৭. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে -  'এ', 'বি' এবং 'সি'। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী 'এ' ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোনও দরকার নেই।

'বি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন -  পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময়, দুই দিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

'সি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ'র প্রয়োজন হতে পারে।

৮. ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ, এ সময়ে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, এর সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এবছর জুন থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়।

৯. এডিস মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে সেগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। 

১০. কোথাও পানি জমিয়ে রাখা যাবে না

এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে। এরা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। তাই কোথাও তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।

এ পানি যেকোনও জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে, বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।