ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৬৯

আলাদা কক্ষে ট্রাংকভর্তি ব্যালট!

উত্তেজনায় বন্ধ রোকেয়া হলের ভোট

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:১৮ ১১ মার্চ ২০১৯  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন চলাকালিন একটি কক্ষে ট্রাংকভর্তি ব্যালট পেপার পাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ায় রোকেয়া হলের ভোট বন্ধ হয়ে যায়।

 

রোকেয়া হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ২ হাজার ৬০৭টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ কারণে বেলা সোয়া ১২টা থেকে ভোট নেয়া বন্ধ রাখা হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল মিলিয়ে এ নির্বাচনে ভোটার মোট ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। এর মধ্যে রোকেয়া হলের ভোটার ৩ হাজার ৭১৮ জন।

 

সোমবার সকাল ৮টা থেকে সব হলে একসঙ্গে ভোট শুরুর কথা থাকলেও ব্যালট বাক্স সিলগালা করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রভোস্টের বাদানুবাদে ভোট শুরু হতে এক ঘণ্টা দেরি হয়।

 

বাম সংঠনগুলোর প্যানেল থেকে এ হলের জিএস প্রার্থী মনিরা দিলশাদ অভিযোগ করেন, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে খালি ভোট বাক্স প্রার্থীদের দেখিয়ে সিলগালা করার দাবি জানানো হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তাতে কর্ণপাত করেননি।

 

তিনি বলেন, ভোটবাক্স খালি দেখালেও তিনি আমাদের সামনে সিলগালা করতে চাননি। এ নিয়ে বাদানুবাদ হয়। তিনি বারবার আমাদের বলছিলেন, তোমরা এমন কিছু করতে চাইলে আমাকে লিখিতভাবে জানাও। পরে দু-একজন সাংবাদিককে নিয়ে আমরা তার কাছে গেলে তিনি তাদের সামনে পরে ভোটবাক্স সিলগালা করেন।

হলের সমাজসেবা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াচমীন আক্তার বলেন, আঠারোটি হলের মধ্যে আমাদের হলেই সবচেয়ে বেশি ভোটার । সে হিসেবে নয়টি ব্যালট বাক্স আসার কথা, কিন্তু এসেছে মাত্র ছয়টি। বাকি তিনটির কোনো হদিস নেই।

 

ভোটবাক্স সিলগালা করার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সকাল ৯টায় ভোট নেয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভোট কক্ষের পেছনে আরেকটি কক্ষে ব্যালট পেপার বোঝাই ট্রাংক পেলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।

 

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ভোটগ্রহণ কক্ষের পেছনে আমরা একটি কন্ট্রোল রুম করেছিলাম। সেখানে একটি ট্রাংকে ব্যালট পেপার রাখা ছিল। ছাত্রীরা অভিযোগ করছে, এই ব্যালট পেপারে সিল মারা ছিল আগে থেকে। কিন্তু আমি বলছি, ব্যালট পেপারগুলোতে কোনো সিল মারা ছিল না। তারা ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে যাওয়ায় আমরা ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছি।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াচমীন আক্তার বলেন, ভোট শুরুর পরে ওই ঘরে ব্যালট বাক্সগুলো ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আমরা কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করি। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের বার বার বলেন, প্রক্টরিয়াল টিম এলে তাদের সামনে ব্যালট বাক্স খোলা হবে। এভাবে ঘণ্টাখানেক পার হয়।

 

এই পরিস্থিতির মধ্যে ডাকসুর ভিপি পদে ছাত্রলীগের প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, এবং জিএস পদপ্রার্থী গোলাম রাব্বানী রোকেয়া হলে গেলে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়।

 

ইয়াচমীন আক্তার বলেন, হল সংসদে ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী ফাল্গুনী দাস তন্বী আমাকে মারতে উদ্যত হয়। ওই সময় আমার সমর্থকরা ছাড়াও সাধারণ ছাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে ব্যালট পেপারগুলো ছিনিয়ে নেয়।

রোকেয়া হল সংসদে ছাত্রলীগের জিএস প্রার্থী সায়মা আক্তার প্রমি বলেন, গুজবের ওপর ভিত্তি করে মেয়েরা এ কাজটি করল। এখন ভোটের কী হবে? আমরা আমাদের ভোটের অধিকার চাই।

 

 

এদিকে রোকেয়া হলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার মাঝে কোটা আন্দোলনকারী প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী নুরুল হক নূর মারধরের শিকার হয়েছেন। তার অভিযোগ, ছাত্রলীগ প্যানেলের লোকজন তাকে আঘাত করেছে।

 

বাম জোট থেকে বেগম রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জিএস মুনিরা দিলশাদ ইরা সাংবাদিকদের বলেন, সকালে যখন ভোট শুরু হয়, তখন আমরা ব্যালট বাক্স দেখতে চাইলেও দেখানো হয়নি। পরে আমরা বিক্ষোভ শুরু করলে ৯টার দিকে ব্যালট বাক্স দেখানো হয়। রোকেয়া হলে ব্যালট বাক্স থাকার কথা ৯টি। তবে আমাদেরকে দেখানো হয়েছে ছয়টি।

 

রোকেয়া হলে ভোটকেন্দ্র করা হয় টিভি রুমে। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। হল গেট থেকে বলা হচ্ছে এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না।

 

এই তিনটি ব্যালট বাক্স সরিয়ে ফেলার অভিযোগ থেকে শুরু বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

 

এর আগে সকালে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে হাজারখানেক ব্যালট পেপারে আগে থেকে সিল মারা থাকার কারণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ভোট বর্জন করেন। হলের প্রাধ্যক্ষ ড. শবনম জাহানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের পর সেখানে ভোট নেয়া শুরু হয়।