ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬৭৬

করোনা ভাইরাসে হাজারে মরছে ৪০ জন? 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪৩ ২ মার্চ ২০২০  

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি কতটা? বলা কঠিন! তবে গবেষকদের মতে, প্রতি হাজারে ৫-৪০ জনের মৃত্যু হতে পারে। সবচেয়ে কাছাকাছি অনুমান হচ্ছে, এক হাজারে ৯ জন। অর্থাৎ এক শতাংশ।
তবে এ মৃত্যু অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যেমন: আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, নারী না পুরুষ, স্বাস্থ্য ভালো না খারাপ এবং আক্রান্ত ব্যক্তি যে দেশের, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেমন ইত্যাদি।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি কতটা, সেটা নিরূপণ করা পিএইচডি গবেষণার মতোই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রেই এ সংক্রমণের খবর পাওয়া যাবে না। কারণ, সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে অনেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন না।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ঠিক কত মানুষ মারা যাচ্ছে, সেই বিষয়ে বিশ্বের একেক জায়গা থেকে একেক রকম হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির ধরনে ভিন্নতার কারণে মৃত্যুহার একেক জায়গায় একেক রকম হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
বরং ব্রিটেনে ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষণা বলছে, ভাইরাসটি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একেক দেশের ক্ষমতার ওপর মৃত্যুর এ হার কম বেশি হওয়া নির্ভর করছে। কোনো দেশে যদি সংক্রমণের হিসাব ঠিক না হয়, তখন সেদেশে মৃত্যুহার বেশি মনে হবে। কারণ আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে, সেটা হিসাবের বাইরেই থেকে যাবে। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে।
এসব সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেও বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহারের চিত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। যাদের শরীরে সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে, এরকম ব্যক্তি, যেমন চীন থেকে ফিরিয়ে আনা লোকজনকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শুধু তাদের হিসাব থেকে যদি মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয়, তা হলে একরকম চিত্র পাওয়া যাবে।
আবার যদি শুধু চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে পাওয়া তথ্য বিবেচনা করা হয়, তাহলে হিসাবটি হবে আরেক রকম। কারণ, চীনের অন্যান্য এলাকা থেকে এ প্রদেশে মৃত্যুহার অনেক বেশি। এ কারণে বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট কোনো হারের কথা বলেননি। তারা বলেছেন, মৃত্যুহার হতে পারে ১০০০ জনে ৫ থেকে ৪০। কিন্তু এ থেকেও মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না।
তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কিছু মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। যেমন: বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তি, ও পুরুষ। চীনে আক্রান্ত ৪৪,০০০ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, মধ্যবয়সী মানুষের চেয়ে বয়স্ক মানুষের মৃত্যুঝুঁকি ১০ শতাংশ বেশি।
মৃত্যুহার সবচেয়ে কম ৩০ বছরের কম বয়সী লোকজনের মধ্যে। এরকম ৪,৫০০ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে, আছে উচ্চ রক্তচাপ অথবা হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুসের সমস্যা; তাদের মধ্যেও করোনা ভাইরাসে মৃত্যুঝুঁকি অন্তত পাঁচগুণ বেশি। এছাড়া নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যেও সামান্য বেশি এ মৃত্যুহার।
এগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ কারণে প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক মানুষের ব্যাপারে এ মৃত্যুহার সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে ৮০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে মৃত্যুহার যত হবে, ইউরোপ অথবা আফ্রিকার কোনো দেশে একই বয়সী মানুষের মধ্যে মৃত্যুহার তত হবে না।
আক্রান্ত হওয়ার পর কী ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে, সেটার ওপরেও এ হার নির্ভর করে। অর্থাৎ ভাইরাসের প্রকোপ মহামারী হিসেবে রূপ নিলে এটি মোকাবেলায় সেখানে কী ধরনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আছে, সেটার কারণেও মৃত্যুহার কম-বেশি হতে পারে।
মৃত্যুর এ হার তুলনা করাও কঠিন। কারণ, ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি দেখা দিলেও অনেকে ডাক্তারের কাছে যান না। ফলে ঠিক কতজনের আসলে সর্দি কাশি হয় অথবা কতজন নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হন, এর সঠিক হিসাবও নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু তবুও ফ্লুর কারণে প্রত্যেক শীতেই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
তবে আশা করা হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে বিজ্ঞানীরা একটি পরিষ্কার চিত্র খুঁজে বের করতে পারবেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কোন ধরনের মানুষের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি বেশি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, হাত ধুয়ে এবং যাদের কাশি হয়েছে; কিংবা হাঁচি দিচ্ছে, তাদের এড়িয়ে চলার মাধ্যমে এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।