ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৫৭৮

গণতন্ত্র ও মমতাজ উদদীন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৭ ২ জুন ২০১৯  

প্রখ্যাত নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকাল পৌনে ৪টায়  মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

মমতাজ উদ্দীন প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী এবং গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: রাজশাহী কলেজের ছাত্র হিসেবে ভাষা আন্দোলন এবং স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার কারাবরণ এবং আত্মগোপনে বাস। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ এবং দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে সাফল্য লাভ। ১৯৯৬ সালের গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য অগণতান্ত্রিক বিরোধী শক্তির উচ্ছেদের জন্য সর্বজন পরিচিত ‘জনতার মঞ্চ’ আন্দোলনের সৃজন ও সংগ্রামে অংশগ্রহণ। কারাবাস এড়িয়ে চলার জন্য আত্মগোপন। ফজলুল হক হলে বার্ষিকী সম্পাদক, ঢাকা হলের (ডঃ শহীদুল্লাহ হল), সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন। তাছাড়া ১৫ ও ২৩ মার্চে এবারের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম দুটি লোকনাট্য (যাত্রাপালা) রচনা ও পরিচালনা করে প্রায় ২ লাখ দর্শকের সামনে উপস্থাপন।

নিয়মিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ ও কলাম রচনা অব্যাহত রাখেন প্রথিতযশা লেখক অধ্যাপক মমতাজ। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্র রচনার জন্য প্রায় ১০ বছর নিয়মিত কলাম ও প্রবন্ধ রচনা। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সামরিক শাসনবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা।

নিউইয়র্কের জাতিসংঘে বাংলাদেশের অবস্থান ও পরিচয় বিষয়ে গ্রন্থ রচনা। মহান অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনকে নিয়ে একটি গ্রন্থ এবং বিশ্বসাহিত্য বিষয়ক আলোচনা গ্রন্থ-অমৃত সাহিত্য।

১৯৯৬ সালের গণআন্দোলনে জনতার মঞ্চের ভূমিকা সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত চরমপত্রের লেখক ও কথক এম.আর আখতার মুকুল লেখেন, বিরোধীদলীয়  (সে সময়) নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকা পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ১৮ মার্চ (১৯৯৬) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বিশাল জনতার মঞ্চ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সেই মঞ্চ পুলিশ ভেঙে দেয়। ১৯ মার্চ পুনরায় নির্মিত ওই মঞ্চে বিকেলে ‘জনতার মঞ্চ’ থেকে অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সার্বিক দায়িত্বে অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমদ। ২৮ মার্চ অপরাহ্ণে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতায় এক পর্যায়ে বিএনপি নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদত্যাগের আমন্ত্রণ  জানান।

৩১ মার্চ কাকরাইলের রাস্তায় আয়োজিত জনসভায় বেগম জিয়া পদত্যাগ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে “জনতার মঞ্চের” অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে। এ জনতার মঞ্চের প্রাণপুরুষ ছিলেন অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ। এটা ছিল তার জীবনের তৃতীয় পর্ব। এরপর দেখতে পাই মমতাজ ঢাকার পত্রিকাগুলোতে চুটিয়ে ‘কলাম' লেখেন। এ প্রতিবেদনগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পর আর এ ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক কলাম রচিত হয়নি। প্রতিবেদনগুলোর মূল সুর হচ্ছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালি জাতির বন্দনা এবং মৌলিক আদর্শ হচ্ছে গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা।

মমতাজউদদীন আহমদের সুদৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, আদর্শের বিষয়ে তিনি কখনো কোনো আপোষ করতে রাজী নন। নীতি-আদর্শে দৃঢ়চেতা, স্বাধীনচেতা, নির্লোভ-নিরহংকার, তারুণ্যভরা চির নতুন, আধুনিক সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রপথিক এমন ব্যক্তিত্ববান সফল পুরুষ সম্পর্কে জানবার-জানাবার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরই। খুব কঠিন সময়ের কঠিন কথাগুলো অতি সহজ করে হাস্যরস দিয়ে আনন্দ বর্ণনায় সার্বজনীন উপস্থাপনের নিপুণ কারিগরের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-গভীর ভালোবাসা।  

শিল্প-সাহিত্য বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর