ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৮০৩

‘চুমুকে চুমুকে সময় কাটে’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৫ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

সুন্দরবনের নদীগুলোর এক একটার চরিত্র একেকরকম। বলেশ্বর থেকে রায়মঙ্গল, হাড়িয়াভাঙ্গার মোহনা... এক কথায় বিচিত্র।

নদী হিসেবে সব বড় নদীই ভয়ঙ্কর, খরস্রোতা। আর সাগরের দিকে যেতে যেতে সেই স্রোতের সঙ্গে যোগ হয় হালকা ঢেউ। মানে রোলিং শুরু। এক একটা সময় ট্রলার থেকে সবকিছু ছিটকে বেরিয়ে আসতে চায়। তাই সব সময় নিজেদের জিনিসপত্র বেঁধে রাখতে হয়।

তাহলে আমরা তখন কী করি? শক্ত করে ট্রলারের কোনো কিছু ধরে চুপচাপ বসে থাকি। বিশেষ করে বড় নদীগুলো যেখানে এক হয়, সেখানে এমনি এমনিই পানি উথলায়। প্রথম প্রথম বেশ মজা লাগতো। তারপর একটু একটু ভয় লাগতো। আর এখন এগুলো সয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশী রোলিং-এ পড়তে হয় নদীগুলোর মোহনা পার হতে। এক একটা মোহনা প্রস্থে ১১ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তাই মাঝ মোহনায় রোলিং শুরু হলে বেশ টেনশনেই কাটে। আমাদের ট্রলার যখন ঢেউ কেটে এগিয়ে যায়, তখন দুপাশের পানির ঝাপটায় সবকিছু ভিজে যায়। মাঝে মাঝে পানি ট্রলারের এপাশ থেকে ওপাশে পার হয়ে যায়! লেপ, কম্বল, কাঁথা, বালিশ মাঝে মধ্যেই দিনভর রোদে শুকাতে হয় আমাদের!

এর মধ্যেই মজার কিছু ঘটনা ঘটে। ঢেউ’র ধাক্কায় সফরসঙ্গীদের ঘুম না ভাঙ্গলেও নোনা পানির ঝাপটায় উঠতে বাধ্য হয় ঘুমন্ত সহযাত্রীরা।

তবে এর মধ্যেও কোত্থেকে যে এক কাপ চা চলে আসে! সুন্দরবনের প্রায় সবাই জানে, আমার প্রিয় পানীয় হলো চা। তাই ঝড় ঝাপটা যাই আসুক, যেখানেই যাই চা আমার পিছু ছাড়বে না। তো সেই রোলিং’র মধ্যেও এক হাতে চা কাপটি ধরে রাখি। চুমুকে চুমুকে কিছুটা সময় কাটে।

দীর্ঘ সময়ের সফরসঙ্গী পলিনের অবশ্য এরকম সময় ঘুম বেশী আসে। সাতক্ষীরার রাজিব, বাগেরহাটের ইয়ামিন আলী- সবাই বেশ আয়েশ করে ঘুমান তখন। জিজ্ঞেস করলে বলেন, ভাই, আপনি তো আছেনই, টেনশন কীসের? আমি হাসি, আর মনে মনে বলি, আরে ভাই নদী সাগরের পানি কী মোহসীন-উল হাকিম চেনে?

(বেশী ঢেউ এর সময় ছবি তোলা সম্ভব হয় না। নিজে কিছু নমুনা ভিডিও দিলাম। পশুর, আড়পাঙ্গাসিয়া, শিবসা, মালঞ্চ নদীর ভিডিও।)