ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৭৭

জুস করে না গোটা ফল, কোনটা খাবেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২২ ১৪ এপ্রিল ২০২১  

ফল নিংড়ে রস বের করে পান করে বিরাট আত্মতৃপ্তি অনুভব করি আমরা। আর সেই সুবাদে স্বাস্থ্যকর খাদ্যটি পরিণত হয় অস্বাস্থ্যকর পানীয়ে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-ভিটা ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও শুধু চিনি ও ক্যালোরির দোষে দুষ্ট হয়ে তা আমাদের ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লাগে।


ভাবছেন, চিনি কোথা থেকে এল, সে-তো ফলে ছিলই। ফ্রুকটোজ নামে। ফলেই যদি ছিল, তা হলে আর তা ক্ষতিকর হয় কী করে, তাই তো? কিন্তু হয়। বাড়াবাড়ি করলে ও নিয়ম না মানলে অবশ্যয় হয়। ডাক্তার আপনাকে সারাদিনে ৪০০ গ্রাম ফল খেতে বলেছিলেন। 


অর্থাৎ ৮০ গ্রাম করে পাঁচটা সার্ভিং। একটা সার্ভিং মানে ছোট টেনিস বলের মাপ। রস করে নয়, তিনি বলেছিলেন কামড়ে, চিবিয়ে বা চুষে খেতে, যাতে ফলটা শেষ করতে খানিকটা সময় লাগে ও ছিবড়েটুকুও শরীরে যায়। কিন্তু আপনার তো অত সময় নেই। 


কাজেই ৩-৪টি ফল জুসারে ফেলে রস করে ঢক ঢক করে খেয়ে নিলেন। আর নিমেষের মধ্যে তিন-চার গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে ঢুকে শোষিত হয়ে সোজা গিয়ে হাজির হল লিভারে! সময়াভাবের অজুহাতে প্যাকেটের জুস খেলে, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


এ রকমই হওয়ার কথা। কারণ অন্য সব চিনি, যেমন গ্লুকোজ, সুক্রোজ ইত্যাদি ভাঙতে যেমন শরীরের সব কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফ্রুকটোজ মেটাবলাইজ করতে পারে একমাত্র লিভার। মাপমতো এলে এর কাজে ব্যাঘাত হয় না। 


কিন্তু যতখানি হ্যান্ডেল করতে পারে তার চেয়ে বেশি এসে গেলে চিনির বেশ খানিকটা ফ্যাটে (ট্রাইগ্লিসারাইডে) পরিণত হয়ে রক্ত ও লিভারে জমতে শুরু করে। সূত্রপাত হয় সেন্ট্রাল ওবেসিটি (পেট-কোমরে চর্বি জমা) ও ফ্যাটি লিভারের। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। 


একইসঙ্গে বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের আশঙ্কা, যা কি-না ডায়াবেটিসের পূর্ব শর্ত। বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডও। না, এর মানে ফলের রস একেবারে পান করা যাবে না এমন নয়। আপনি যদি রোগাপাতলা ও অ্যাকটিভ হন, সপ্তাহে দু'-চারবার ছোট এক গ্লাস (১০০ মিলি) খেতে পারেন। 


কিন্তু ওজন বেশি হলে ও কোনও মেটাবলিক সমস্যা, যেমন-হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি থাকলে মোটামুটি সপ্তাহ দশেকের মধ্যে সমস্যা বাড়বে। যত বেশি খাবেন, তত বেশি বাড়বে। 


মোটামুটি ওভার ওয়েট একজন মানুষ যদি দিনে ৪৮০ মিলি আঙুরের রস মাস তিনেক ধরে পান করেন, তার কোমরের মাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে চোখে পড়ার মতো। আবার দিনে দুই সার্ভিংয়ের বেশি ফলের রস পান করলে মহিলাদের মধ্যে গাউটের রিস্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।


এবার দেখা যাক, গোটা ফল খেলে কী হত। ফলের ছোট একটি টুকরো যখন কামড়ে, চিবিয়ে ও গিলে খাওয়া হয়, এক একবারে শরীরে অল্প করে ফ্রুকটোজ ঢোকে। সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয় শরীরে। পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তি হয়। 


লিভারেরও কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু এর বদলে যদি এক গ্লাস ফলের রস পান করেন, যা বানাতে কম করে ৩-৪টি ফল লাগে, সেই অনুযায়ী ক্যালোরিও বাড়ে, (৩৫০ মিলি কোক-এ যেখানে ১৪০ ক্যালোরি থাকে, ৩৫০ মিলি আপেল জুসে থাকে ১৬৫ ক্যালোরি)। 


কিন্তু তরল খাদ্য বলে খিদের তেমন সুরাহা হয় না। খানিক ক্ষণের মধ্যে আবার কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে টোটাল ক্যালোরি ইনটেক অনেক বেড়ে যায়। এর উপর যদি সঠিক জুসার ব্যবহার না করেন বা নিয়ম মেনে ফল না ধুয়ে নেন, বিপদ আরও বাড়ে।


ঘরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেন্ট্রিফিউগ্যাল জুসার, যা ফল কেটে ছিন্নভিন্ন করে রস ছেঁকে বের করে। ফলে ফলের ফাইবারে আটকে থাকা পেস্টিসাইড ও ইনসেক্টিসাইড রসে মিশে যায়। উল্টো গিয়ার জুসার ফল চেপে রস বের করে বলে এ ভয় অনেক কম। কাজেই ফ্রুট জুস যদি পান করতেই হয়, ব্যবহার করুন গিয়ার জুসার।


জুস বানানোর আগে ফল ভালো করে ধুয়ে নিন। প্রথমে রানিং ওয়াটারে ২-৩ বার রগড়ে ধুয়ে বড় গামলায় এমন পরিমাণে পানি নিন যাতে ফলগুলো ডুবে থাকে। তাতে মেশান সিকি কাপ সাদা ভিনিগার ও সিকি চামচ সি-সল্ট। ছোট ফল হলে পাঁচ মিনিট ও বড় ফল হলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। 


অত ঝামেলা না চাইলে নিরাপদ ভেগি ওয়াশও কিনে নিতে পারেন। মিনিট দশেক পর দেখবেন পানি আবার ময়লা হয়ে গেছে, কটু গন্ধও পাবেন। এই পানি ফেলে রানিং ওয়াটারে আরও দু-তিন বার ধুয়ে নিন। এরপর ইচ্ছে হলে পানিতে পেঁয়াজ ও লেবুর টুকরো দিয়ে তাতে ৫ মিনিট ভেজাতে পারেন। 


এরপর ধুয়ে নিলে নিশ্চিত থাকবেন যে অন্তত ৮০ শতাংশ বিষমুক্ত হয়েছে ফল। সময়াভাব তো আছেই। কিন্তু সেই অজুহাতে যদি ঠিক করেন প্যাকেটের জুস পান করবেন, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। কারণ যতই '১০০ শতাংশ ফ্রুট জুস' বা 'নট ফ্রম কনসেনট্রেট' লেখা থাকুক না কেনও, আদতে ব্যাপারটা তেমন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। 


এর কারণ নানাবিধ। প্রথমত, ফল থেকে রস বের করার পর প্যাকেট করার আগে তাকে বেশ কিছু দিন অক্সিজেনহীন টাঙ্কে জমিয়ে রেখে প্রসেস করা হয়। কিছু গুণ এর ফলে নষ্ট হয়। প্রায় পুরো ফ্লেভারটুকুই উবে যায়। মেশাতে হয় কৃত্রিম ফ্লেভার। যতই তা পারমিসিবল তালিকায় থাক না কেনও, আসলের মতো তো আর নয়। 


কাজেই দামি প্যাকেটের ফ্রুট জুসের সঙ্গে টাটকা বানিয়ে খাওয়া জুসের তফাত্ৎ একটা হয়েই যায়। আর কম দামি জুস নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। সেসব আসলে ফ্লেভার মেশানো চিনির পানি ছাড়া আর কিছুই নয়।