ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২০৬৭

জৌলুস নেই হালখাতায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:২৫ ১৪ এপ্রিল ২০১৯  

 “বাকির নাম ফাঁকি”, “বাকি দেওয়া বড় কষ্ট, বাকিতে হয় বন্ধুত্ব নষ্ট” এধরনের লেখা সম্বলিত অনেক স্টিকার দোকানে লাগানো থাকে; তারপরও ক্রেতাদের বাকি দিতে হয়। ব্যবসায়ের জন্য কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে হলেও দোকানদারদের বাকি দেওয়া পড়ে। এই বাকি বেচাকেনার সাথে ‘শুভ হালখাতা’ কথাটি জড়িত। যার সাথে বাঙালি জাতিসত্তার এক অনন্য সম্পর্ক। বাকি না থাকলে হালখাতা থাকতো না। হালখাতা না থাকলে বৈশাখের উৎসব একঘেয়েমি হয়ে যেতো। একঘেয়েমি বৈশাখের উৎসবের ফলে বাঙালি তার প্রাণের অস্তিত্ব হারাতো।

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল ধরেই হালখাতার আয়োজন করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তাই বৈশাখ এলেই ব্যবসায়ীরা খুশিতে বাগবাগ হয়ে ওঠে। যদিও এতে পত্র প্রাপকের পকেটের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। হালখাতা শুধু হিসাবের নতুন খাতা খোলা নয়, পাওনা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের আপ্যায়নের মাধ্যম। হালখাতার এই ঐতিহ্য সুদীর্ঘ কাল বহন করে চলছে বাঙালির আনন্দ উৎসব আর সম্প্রীতির গৌরবগাঁথা।

নববর্ষের হালখাতায় ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলেন। এই উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দের ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করেন। চিরাচরিত পহেলা বৈশাখে হালখাতার এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই বাঙালির সম্পর্ক অটুট রাখার প্রয়াস। বছরের প্রথমদিন হালখাতার রেওয়াজ থাকলেও এটা প্রায় পুরো বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলে।

এক সময় সার্বজনীন উৎসব হিসেবে ‘হালখাতা’ ছিল বাংলা নববর্ষের প্রাণ। ইতিহাস মতে, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ মার্চ সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতা’র প্রচলন হয় তৎকালীন ভারতবর্ষে। পশ্চিমবঙ্গেও এ অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তা-ই ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত।

অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পূণ্যাহ’ প্রচলিত ছিলো। বছরের প্রথমদিন প্রজারা সাধ্যমতো ভালো পোশাকাদী পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় ‘পূণ্যাহ’ বিলুপ্ত হয়েছে। তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নববর্ষে হালখাতার আয়োজন করে আজও। বাংলা সনের প্রথমদিন দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার এ প্রক্রিয়া পালন করা হয়। ব্যবসায়ীরা এদিন তাদের দেনা পাওনার হিসাব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের আগের বছরের সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে নববর্ষের দিন তাদের মিষ্টিমুখ করান ব্যবসায়িরা। আগে একটিমাত্র মোটা খাতায় ব্যবসায়িরা তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিন নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করার এ রীতি থেকেই উদ্ভব হয় হালখাতার। একসময় বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিলো হালখাতা।