ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৬৫৮

টিকা নেওয়া কি জায়েজ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:২০ ২৪ আগস্ট ২০২১  

অনেকে মনে করেন, রোগ প্রতিরোধে টিকা নেওয়ার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক। পশ্চিমারা এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ওষুধ কিংবা ভ্যাকসিনে ক্ষতিকর উপাদান আছে বলে প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও তারা এমন অভিযোগ করেন। তাদের এ বক্তব্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু সঠিক?

 

ভ্যাকসিন নেওয়া কি জায়েজ?

মূলত রোগ-ব্যাধির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ভ্যাক্সিন বা টিকা নেওয়া জায়েজ। ব্যাপারে ইসলামে কোনো ধরনের বাধা নেই। বরং রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে অগ্রিম প্রতিরোধ করা অধিক উত্তম। বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে ক্ষয়-ক্ষতির চেয়ে— বিপর্যয় থেকে বাঁচার আগেভাগে কোনো মাধ্যম অবলম্বন করা অধিক উত্তম। এই ব্যাপারে অন্তত কোনো বুদ্ধিমানের দ্বিমত থাকার কথা নয়।

 

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই। সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন বিষ এবং যাদু তার কোনো ক্ষতি করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৬)

 

এ হাদিসে তিনি অগ্রিম প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও তিনি সকাল-সন্ধ্যা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর এবং ঘুমানের পূর্বে বিভিন্ন দোয়া ও জিকির শিক্ষা দিয়েছেন, যেন মানুষ জিন-শয়তান, যাদু ও বদনজর ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়। এগুলোও অগ্রিম প্রতিরোধ মূলক উপায়।

 

নবী-জীবনে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে যাওয়ার আগে শিরস্ত্রাণ ও বর্ম দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করেছেন। যাতে করেশত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয়। এটি তার পূর্ব প্রস্তুতি ও অগ্রিম আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা।

 

এভাবে আমরা রাসুল (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন করলে— শত শত উদাহরণ খুঁজে পাব। অসুখ-বিসুখ, দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার অগ্রিম নির্দেশনা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সুতরাং যারা টিকা নেওয়াকে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও তাওয়াককুল (আল্লাহর ওপর ভরসা), সবর (ধৈর্য) পরিপন্থী বা পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র বলার চেষ্টা করে, তারা ভুলের মধ্যে আছে। তারা ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী বুঝতে পারেনি।

 

চিকিৎসা গ্রহণে ইসলামের উৎসাহ

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি, যার ওষুধ অবতীর্ণ করেন নি। (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রতিটি রোগ-ব্যাধির সাথে সাথে সেগুলোর প্রতিষেধকও অবতীর্ণ করেছেন। সেগুলো কেউ জানে আর কেউ জানে না।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৩৫৭৮; বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৮)

 

আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন— সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহভীরু, সবরকারী ও তাওয়াক্কুলকারী। কিন্তু তিনি নিজেই চিকিৎসা করেছেন এবং চিকিৎসার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজে অগ্রিম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উম্মতকেও এই ব্যাপারে সতর্ক করে শিক্ষা দিয়েছেন।

 

প্রসঙ্গত, যদি বিশেষ কোনো ওষুধ বা ভ্যাক্সিন সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞ স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে— এটা ক্ষতিকারক, তাহলে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা, জেনে-বুঝে ক্ষয়-ক্ষতি ও ধ্বংস ডেকে আনা ইসলামে নিষিদ্ধ।