ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
২২৭৪

যে গরু হাম্বা ডাকেনা সে আন্টি

দেশি গরুর দুধে ‘সোনা’ থাকে! (ভিডিও)

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০১ ৫ নভেম্বর ২০১৯  

দেশি গরুর দুধে ‘সোনা’ থাকে। এ মন্তব্য করলেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।  
বর্ধমানের টাউন হলে সোমবার ‘ঘোষ এবং গাভীকল্যাণ সমিতি’র এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন দাবি করেন। 
তার ভাষায়, ‘গরুর দুধে সোনার অংশ থাকে। তাই দুধের রঙ হলুদ হয়।’ 
তার ব্যাখ্যা - ‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনালি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে, সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’ 
এদিন বিদেশি গরু নিয়েও কথা বলেন দিলীপ। তার ভাষায়, ‘বিদেশ থেকে যে গরু আনা হয়, তা হাম্বা আওয়াজ করে না। আর যে হাম্বা ডাকে না, সে গরুই নয়। গোমাতা নয়, ওটা আন্টি। আন্টির পুজো করে দেশের কল্যাণ হবে না।’
 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্য বিজেপি সভাপতির মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নাগরিক তালিকার মাধ্যমে বিদেশি গরুও চিহ্নিত করা হবে?

সোমবার ছিল গোপ অষ্টমী। এদিন দেশজুড়ে গোসেবা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। গাভী কল্যাণ সমিতির অনুষ্ঠানে গরু পালনের তাৎপর্য ও গোজাত পণ্যের নানা উপকারিতা তুলে ধরেন দিলীপ। তিনি বলেন, পুষতে হলে দেশি গরু পুষুন। ঘুরবে-ফিরবে, খড়-কুটো খাবে আর দুধ দেবে। অসুখ-বিসুখও হয় না।

গরুর মাংস খাওয়াকেও ‘সমাজবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন দিলীপ। তার ভাষায়, ‘শিক্ষিত-বুদ্ধিমান লোকেরা কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরুর মাংস খান। আমি তাদের বলব, কুকুরের মাংসও খান। যত জন্তু জানোয়ার আছে সবার মাংস খান। কিন্তু বাড়ি বসে খান। কোনও আপত্তি নেই। আমরা মায়ের দুধ ছাড়ার পর গরুর দুধ খেয়ে বড় হয়েছি। তাই গরু আমাদের কাছে মায়ের সমান। মায়ের অপমান হলে আমরা যেমন আচরণ করি, গরুর ক্ষেত্রেও তেমনই করব। ভারতবর্ষের পবিত্র মাটিতে গরুকে হত্যা করা, গরুর মাংস খাওয়া মহা অপরাধ। যারা এ কাজ করে, তাদের আমরা সমাজবিরোধী হিসেবেই দেখবো।’

এদিকে বিজেপি নেতার দেশি গরুর দুধে সোনার উপস্থিতির ‘তত্ত্ব’ শুনে রীতিমতো বিস্মিত বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এমন ‘বৈজ্ঞানিক’ গবেষণা দুনিয়ার কোথাও হয়েছে বলে তাদের জানা নেই।

এর আগে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি মন্ত্রী রেখা আর্য দাবি করেছিলেন, ‘গরুই একমাত্র পশু, যে শ্বাস গ্রহণের সময় শুধু অক্সিজেন গ্রহণ করে না, প্রশ্বাসের সঙ্গে তা পরিবেশে ফিরিয়েও দেয়।’

বিজেপি দলীয় এমপি সাধ্বী প্রজ্ঞা-ও দাবি করেছিলেন, তিনি স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। গোমূত্র পান করে আর পঞ্চগব্য গ্রহণ করে নিজেকে সারিয়ে তুলেছেন।

বছর তিনেক আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-র নিজ রাজ্য গুজরাটের জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশেষজ্ঞ ৪০০ গরু নিয়ে একটি সমীক্ষা করেন। পরে তারা দাবি করেন, গোমূত্রে সোনা আছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান বিএ গোলাকিয়া এদিন দাবি করেন, ‘ছয়টি প্রজাতির গরুর শতাধিক মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে সোনার উপস্থিতি পেয়েছি। এই সোনা রয়েছে ক্লোরাইড যৌগ হিসেবে।’ 
কিন্তু গোদুগ্ধে সোনা পেয়েছেন কি? গোলাকিয়ার জবাব, ‘আমরা শুধু গোমূত্রের ব্যাপারটা বলতে পারবো।’

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (ডেয়ারি) তরুণকুমার মাইতি বলেন, ‘গরুর দুধে অনেক কিছুই থাকে। তবে সোনা আছে বলে শুনিনি।’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস’-এর শিক্ষক তড়িৎ রায় চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও গরুর দুধের রাসায়নিক বিশ্লেষণে সোনা মিলেছে বলে জানা নেই।’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তীর টিপ্পনী, ‘গরুর দুধে যদি সোনা থাকত, তা নিয়ে তো কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো।’ 
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন জানার মন্তব্য, ‘বিজেপি আর বিজ্ঞান—মেলানো কঠিন। ওরা বিলক্ষণ জানেন, গোদুগ্ধে কী আছে। অযথা এসব বলে জনতাকে বিভ্রান্ত করছেন, অনেক বড় সমস্যা থেকে তাদের নজর ঘুরিয়ে দিতে।’ 
পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘গরুর দুধে সোনার তত্ত্ব শুনে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।’   আনন্দবাজার, জি নিউজ।