ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
২৩১৬

পক্ষী সমাচার – ২

আজিজুস সামাদ ডন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৩ ৮ এপ্রিল ২০১৯  

বৈশাখ আসন্ন। যদিও পিতার মৃত্যুর প্রায় দুই দশক আগেই মাতৃবিয়োগে আমাদের পরিবারের ছন্দপতন ঘটিয়াছিল। কিন্ত প্রায় দেড় দশক আগের বৈশাখে পিতার মৃত্যুর পর আমাদের পরিবার চূড়ান্ত এতিম হইয়া পড়িলেও বাবার রাখিয়া যাওয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঐকান্তিক ভালবাসার ছোঁয়ায় পথচলা সার্বক্ষণিকভাবে প্রায় মসৃণই ছিল।

সকলের সহযোগিতায় বিশাল এক পরিবার পাইয়াছি, যাহাদের বাড়ানো বন্ধুত্বের হাত সর্বদা আমার পথচলায় সাহস যোগাইয়াছে। ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়তার সহিত সকল প্রতিকুল পরিবেশের মোকাবেলায় তাহাদের আন্তরিকতা আমাকে শুধু মুগ্ধতায় বিস্ময়াভিভূত করে নাই, অনুপ্রেরণা যোগাইয়াছে আরও আরও সামনে আগাইয়া যাইবার।

 

কাহারও কখনো আমার নিকট কোন দাবী নাই, শুধুই আমার প্রতি তাহাদের শুভকামনার প্রতীক হইয়া থাকিয়া এমন এক কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আমাকে আবদ্ধ করিয়াছে যে, কখনো কখনো মনে হয়, কিভাবে এতো ঋণ শোধ করিবো। কাহারো কোন চাওয়া পাওয়ার দাবী না থাকায় এখন শুধু মনে একটাই আশা, সকলে যেন আমরা সুস্থ-সুন্দর ভাবে আমাদের সকলের বাকি জীবনটা একত্রে কাটাইতে পারি। একই সাথে আমরা সকলে সকলের সুখে-দুঃখে পাশে থাকিতে পারি। একই সাথে আমাদের সকলে বন্ধুর মত হাতে হাত রাখিয়ে কালের গর্ভের শেষ সীমানায় পৌঁছাইতে পারি।

 

তবে এতো শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে দুই একজন কুম্ভীরাশ্রু ঝরাইবার মত মানুষ যে আমাদের চলিবার পথে পাই নাই তাহা জোর গলায় বলিতে পারি না। দুই একজনের অশ্রুসিক্ত নয়নপানে তাকাইলে সকলেই বিশ্বাস করিতে বাধ্য যে, তাহারা আসলেই আমার জন্য বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অন্ধের মত তাহারা আমার পিছনে যত্রতত্র হাত চালাইয়া খুঁজিতে থাকে, কেন এতো ভালবাসা সত্ত্বেও আমরা সামনের প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গাইতে পারিতেছিনা।

 

কখনো কখনো তাহারা আমার ভালবাসার মানুষদের ওপর ক্ষুব্ধ হইয়া তাহাদের অতি আবেগকে দোষারোপ করেন, আবার কখনো আমার কোন লেখা বা বলা একটি শব্দ লইয়া তাহাই বিশ্লেষণ করিয়া সকলকে বুঝাইয়া দেন যে, ইহাই আমাদের ব্যর্থতার কারণ সমূহের অন্যতম। যেই কারণে আমি সর্বদা বেশ তটস্থ থাকি, আমার নিজস্ব চাওয়ার আকাংখ্যাকে একটা গন্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ রাখিতে। তাহারা কখনোই বুঝিতে চাহেন না যে, চাওয়া পাওয়ার মাঝে ব্যবধান থাকিতেই পারে এবং সেই ব্যবধানের কারণ শুধুই আমাদের ব্যর্থতা ছাড়াও আরও নানাবিধ কারণেও তৈরী হইতে পারে। তাহারা বুঝিতেই চাহেন না যে আমরা জানি, হাতি কাদায় পড়িতেই পারে, আর তখন ব্যাঙ-চামচিকারা লাত্থি মারিতেই পারে।

 

এই সমস্ত কারণেই আমি আজকাল বিভিন্ন বাংলা প্রবাদ, বাগধারা, কবিতা লইয়া মাথা ঘামাইয়া থাকি, যাহাতে আমাদের কুম্ভীরাশ্রু ঝড়ানো নিকটাত্মীয়গণ আমাদের ওপর চড়াও হইলে নিজেকে সান্ত্বনার বাণী শুনাইবার উপকরণ কিছু হাতের নাগালের মধ্যে থাকে। এই বিশ্লেষণ কর্মে বর্তমানে একটি বাংলা গানের দুর্বোধ্য কথামালার কারণে আমি আমার মস্তিস্ক বেদনায় ও অন্তহীন ভাবনায় জর্জরিত হইয়া প্রায় শয্যাশায়ী অবস্থা।

গানটি বিশ্লেষণে গিয়া আমি নাকাল।

 

"আরে কথায় বলে গাছে বেল পাকিলে তাতে কাকের কী?"

 

কাকের কি মানে? ইহা কোন কথা হইলো? পরের লাইনেই তো বলিয়া দেওয়া হইতেছে

 

"ওরে কাকের কাকা ডাকে যদি একে একে

গাছের বেল ঝরিয়া যায় তাতে দোষের কী?"

 

আহারে, কি সমস্ত বিপজ্জনক কথাবার্তা। আগের লাইনেই বলিলেন "কাকের কি", আর এখন কিনা কাকেদের আশ্চর্যজনক ক্ষমতার কথা বলিতেছেন, কাকের তারস্বর চিৎকারে গাছের সব বেল চিৎপটাং হইয়া যাইবে এবং তাহা নাকি দোষের কিছু হইবে না, অর্থাৎ, কাকেদের সাত খুন মাফ। ইহা কোন ধরনের কথা হইলো। তাহার পরের লাইন তো আরও দুর্বোধ্য-

 

"উপর দিকে থুথু দিলে নিজের গায়ে থুথু পড়ে"

 

তাহা হইলে কি এই যায়গাতে কবি হাত পা বাঁধিয়া দিয়াছেন, অর্থাৎ, কাকের অবস্থান সব সময়ই উপরে থাকিবে ধরিয়াই নিয়েছেন, সুতরাং, উক্ত কাকের প্রতি থুতু ছিটাইতে গেলে নিজের গায়ে আসিয়াই পড়িবে।

 

"চোখ বুজিয়া লম্ফ দিলে পাও ভাঙ্গিয়া যায়"

 

কোথায় কাক, কোথায় পদ, কাহার পদ, কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। কাকের পা ভাঙিবার কথা যে বলা হয় নাই এখানে উহা তো নিশ্চিত। তাহা হইলে ইহা কাক তাড়ুয়াদের উদ্দ্যেশ্যে বলা হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া নিতে হইবে। যদি তাহাই হয় তবে তো ইহা অবশ্যই অবশ্যম্ভাবীভাবে ইংরেজিতে যাহাকে বলে "ব্ল্যাকমেইল", কবি সেই কালো চিঠি পাঠাইয়া দিয়াছেন।

এমতাবস্থায়, কাক তাড়ুয়ারা চক্ষু বুজিয়া লম্ফ দিলে পদযুগল ভাঙ্গিতে পারে তাহা মানিয়া লইয়াই বলিতে চাহিতেছি, কোন মানুষ লম্ফ দিবার আগের মুহূর্তে চক্ষু বন্ধ করিতেই পারে কিন্ত সেই মানুষ লম্ফ দিবার বহু আগেই তাহার মাপ-জোক শেষ করিয়াই লম্ফ দিবার প্রস্তুতি নেয়। সেইক্ষেত্রে এই লাইনে এই ধরনের শব্দ প্রয়োগ করিয়া তিনি এক্ষণে হাত পা ভাঙ্গিবার হুমকি দিবার কারণে আমার সমস্যা সমুহের আলোচনায় কোন সমাধান আসিতে পারে কিনা তাহা লইয়াই আমি বিশেষ চিন্তিত।

 

এইবার তাহা হইলে আমার ভাবনার কথাটা একটু খোলাসা করিয়াই বলি।

আমি যদি এখন কাক তাড়ুয়ার ভূমিকায় নামিয়া পড়ি, তাহা হইলে কবির ভাষ্যমতে কাকেদের কা-কা রবে গাছের পাকা বেল দুই একটা আমার মাথায় পড়িয়া মাথা ফাটিয়া যাইবার সম্ভাবনা কতটুকু অথবা কবির কথা মত যদিও চক্ষু বুঁজিয়া লম্ফ দিবো না, তাহার পরেও আমার হস্ত-পদ ভাঙ্গিবার সম্ভাবনা কতটুকু এই সমস্ত বিষয় লইয়া ভাবিতে ভাবিতে আমি ক্লান্ত।

আমার নৈরাশ্যবাদী অবস্থানের কারণ, এই সঙ্গীতটিতে কাক এবং বেল লইয়া কবি কথা সমুহ বলিয়াছেন, বাংলায় বেল সংক্রান্ত একখানা প্রবাদ এই গানের সমর্থনে আছে,

"ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়"।

 

এই প্রবাদের কারণ খুঁজিতে যাইয়া মনে হইলো, গাছে বেল পাকিলে কাকেদের কা-কা রবেই হউক আর কাকেদের যাহা সামনে পায় তাহাই খাইবার জন্য একটা খাইখাই অভ্যাস থাকিবার কারণেই হউক, তাহারা পাকা বেলেও ঠোক্কর দিয়া দেখিবার চেষ্টা করিয়া থাকে। আর কাক সমুহের ঐ ঠোক্করে বেলের কিছু হয়না বটে, কিন্ত পাকা বেল সমুহ ঝরিয়া যায়।

 

উপরিউক্ত আলোচনায় তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে যে, দুইটি কারণে ন্যাড়া বেলতলা একবার গেলে দ্বিতীয়বার যাইতে চাহে না -

 

প্রথমত, পাকা বেল ভাবিয়া ন্যাড়ার মস্তকে কাকেরা ঠোক্কর দিয়া বসে।

 

দ্বিতীয়ত, কাকেদের ঠোক্করে গাছের পাকা বেল যখন ঝরিয়া পড়িতে থাকে তখন ন্যাড়ার চুলহীন মস্তকে সেই বেল পড়িলে ন্যাড়া বড়ই আঘাত পায়।

 

আমার নিজের মাথায় এখনো কিছু চুল থাকিলেও আজকাল কেন যেন সবকিছু মিলাইয়া নিজেকে ন্যাড়া ন্যাড়া মনে হওয়া শুরু হইবার কারণে বড়ই মনকষ্টে ভুগিতেছিলাম।

কিন্ত কবি সুকুমার রায়ের সুখ বাণী শ্রবণ করিয়া কিছুটা নিশ্চিত আছি। তিনি বলিয়াছেন,

"...নেড়াকে তো নিত্য দেখি

আপন চোখে পরিষ্কার—

আমাদেরি বেলতলা যে

নেড়া সেথা খেলতে আসে

হরে দরে হয় ত মাসে

নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার।”

 

ব্যাস, তাহা হইলে তো আর কথাই নেই। প্রতি মাসে অন্তত পঁচিশবার আমি কথন করিতেই পারি, তাহাতে কাক ও বেল সমাচার আমার প্রতি প্রযোজ্য হইলেও নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার আমি বাউলি কাটিয়া বেল মাথার ওপর পড়িবার হাত হইতে নিশ্চিত বাঁচিয়া যাইবো তো বটেই। উপরন্তু আমার ন্যাড়া সম মাথায় কাকেরা ঠোক্কার দিবে না, এই প্রত্যাশা লইয়া আমার সমস্যার কিয়দাংশ আলাপ করিতে চাহিলে করিতেই পারি।

 

একজন কলমিস্টের (কলামিস্ট নহে) লেখা লইয়া আমার প্রচুর সন্দেহ আছে। এই কলমিয়া (কলামিস্ট নহে) নিজে না লিখিয়া অন্য কাহাকেউ দিয়া লেখাইয়া নিজের নামে চালাইয়া দিয়া থাকেন বলিয়া আমি সন্দেহ করিয়া থাকি। যেই কারণে আমি তাহার লেখা সাধারণত পড়ি না। কয়েকদিন আগে তাহার একটি লেখা পত্রিকায় পাশ কাটাইয়া যাইতে গিয়া লেখাটির নাম দেখিয়া কৌতুহলবশত চোখ বুলাইবার চেষ্টা করিলাম। যাহা বলিয়াছিলাম, ঠিকই আমার দৃষ্টি যাইয়া ঐ লেখনীর এমন এক যায়গায় পড়িল, যাহাতে আমার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হইলো।

 

অন্য এক যায়গায় আসিয়া আরেকটি বিষয় আমার অন্তরের আরও গভীরে নাড়া দিল। সনাতনী সমাজের প্রায় সকলে যেইখানে পঞ্চপাণ্ডবদের অস্ত্রশিক্ষা গুরু কে "আচার্য দ্রোণ" বা "দ্রোণাচার্য" বলিয়া থাকে, সেই যায়গায় বহু সনাতনী জ্ঞান প্রদর্শন করতঃ তিনি "মহামতি দ্রোণ" লেখিয়া দিয়াছেন। আমার সন্দেহ দৃঢ় হইয়া উঠিলো। যাহাদের মতিগতির ঠিক নাই তাহারা কাহাকে কখন যে মহামতি, মহামহিম বা অন্য কিছু বলিয়া নিজস্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট হইবে তাহা অবশ্যই বলা দুষ্কর।

 

যাহাই হউক, আজকাল একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা লইয়াও পড়িয়াছি একই ধরনের জ্বালায়। পত্রিকা খুলিলেই তাহাদের বিশাল বিশাল তৈলাক্ত বক্তব্য চক্ষুদয়ের পীড়ার কারণ হইবার জন্য যথেষ্ট। তাহারা তেল মারিতে যাইয়া তেলের ভান্ডার শেষ করিয়া ফেলিতেছে কিন্ত কেন কি কারণে এই অযাচিত তৈলমর্দন তাহা বুঝা অন্ততপক্ষে আমার জন্য বেশ কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। ঐ ধরনের তৈলাক্ত কথা, দেশের, দশের, তাহার নিজের কোন উপকারে আসিতেছে তাহা বুঝিবার চেষ্টায় আমার মাথার চুল সব পাকিয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে। কয়েকজন তো কিছুদিন পরপরই এই বলিয়া রণহুংকার দিয়া ওঠেন, "কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসী আন্দোলন শুরু করিয়া দিতেছে"।

আহারে দিবাস্বপ্ন। যতদিন তিনি মন্ত্রী ছিলেন, ততদিন তিনি এই দিবাস্বপ্ন দেখিবার সুযোগ পান নাই। আজ যেহেতু কেহ তাহাকে পাত্তা দিতেছে না তাই আশা করিতেছেন যে, দেশবাসীর এই মুহুর্তে আর খাইয়া দাইয়া কোন কাজ নাই, তাহাকে মন্ত্রীর চেয়ারে বসাইবার জন্য আন্দোলনে নামিয়া পড়িল বলিয়া।

 

আমি এইসব বিষয় লইয়া আমার মস্তিষ্কের উপর অকারণ অত্যাচার করিতে রাজি নহি। কিন্ত কি করিবো, আসিয়া চোখের সামনে পরিলে মস্তকের দোষ দিয়া লাভ কি।

এই যেমন সেইদিন আমাকে একজন একটি ভিডিও পাঠাইয়া দিলেন। ভিডিওটি আমি এই লেখার সহিত সংযুক্ত করিয়া দিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত আলোচনা সভা। সেইখানে দেখিলাম আমেরিকার বোদ্ধা সমাজ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীদলের উপর ইস্রাইল লবিস্টের প্রভাব লইয়া বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং তাহারা মনে করিতেছে যে, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে বসিয়া ইস্রাইলি লবিষ্টের সমালোচনা করা যায় না, অতএব, ইস্রাইলি লবিষ্টেরা ঐ দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করিতেছে। আমি যাহা বলিতে চাহিতেছি তাহা হাইপোথিসিস, অর্থাৎ, আমার হাতে উহা প্রমাণ করিবার যথেষ্ট উপাত্ত নাই (ইহাকেই বলে মনগড়া কথা)।

গল্পটি শুরু করি।

 

ইস্রাইল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়া মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব যাহা করাইতেছিল, কিভাবে বিশ্ববাসী তাহা শুধু অনুধাবন করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, চৈনিকেরা রীতিমত তাহা অনুসরণ ও অনুশীলন শুরু করিয়া, উত্তর কোরীয়া কে দিয়া দূর-প্রাচ্যের রাজনীতিতে সেই নীতি প্রয়োগ প্রয়োগ শুরু করিয়া তাহাদের এই দুষ্টু আবাধ্য সন্তানকে দিয়া সম্পুর্ণ অঞ্চলকে ত্রাসের মধ্যে রাখিয়াছে।

 

এই ত্রাস সঞ্চারণের মধ্যে তাহাদের আরেক দুশ্চিন্তার নাম বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী মহল খুঁজিয়া হয়রান হইয়া গিয়াছে ইহা ভাবিয়া যে, কিভাবে এই দেশটি এত তাড়াতাড়ি সামাজিক সূচকে তাহার আশেপাশের দেশকে ছাড়াইয়া মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হইল। এখন আবার বাংলাদেশ ঘোষণা করিয়াছে, আগামী ২০ বছরের মধ্যেই নাকি বাংলাদেশকে উন্নত দেশের সারিতে লইয়া যাইবেই যাইবে। সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হইল, তাহাদের জনসংখ্যা। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে যদি তাহারা কর্মঠ করিয়া তুলিতে পারে তবে তো ঠিকই কাজটি সম্পাদিত করিয়াই ছাড়িবে।

এক চীনকে লইয়াই তাহাদের হিমশিম খাইবার অবস্থা!! বাংলাদেশ যদি এইভাবে আগাইয়া যাইতে থাকে তাহা হইলে তো এই অঞ্চল হইতে তাহাদের পাততাড়ি গুটাইতে হইবে।

 

যাহাই হউক, তাহারা একটি গবেষক দলকে বাংলাদেশে পাঠাইলো এই সমস্ত দাবীর সম্ভবনা যাচাইয়ের জন্য এবং এই গবেষক দল যদি মনে করে যে, সত্য সত্যই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলিয়া যাইবে, তাহা হইলে বাংলাদেশ কে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাখিবার বন্দোবস্ত করা যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিবার দায়িত্ব দেওয়া হইলো।

 

গবেষক দল বাংলাদেশ আসিলেন। বহুদিন এই দেশে থাকিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বহু টাকা খরচ করিয়া, বহু যাচাই বাছাই পূর্বক রিপোর্ট পেশ করিলেন, বাংলাদেশের অতি শীঘ্রই উন্নত দেশের কাতারে চলিয়া যাইবার সম্ভবনা প্রবল।

তাহার পরেও সম্ভবনার কথা হইল, বাংলাদেশের রাস্তা ঘাটে যেমন কাকের অত্যাচারে মানুষ অতিশয় অতিষ্ঠ, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক দল সমুহে কাক শ্রেণীর একধরনের মানুষ জড়ো হইয়াছে, যাহাদের ভিড়ে সত্যিকারের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের খুঁজিয়া বাহির করা অসম্ভব। এবং এই কাক শ্রেণীর পক্ষীরা নিজেদের লইয়া যতটা চিন্তিত, তাহার কানা কড়ি পরিমান দেশ লইয়া চিন্তিত নহে। সুতরাং,..... ।

 

যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক যন্ত্র গবেষক দলটির উপর খুব বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হইল। তাহারা গবেষক দলের নিকট বিশাল একখানা চিঠি পাঠাইল যে, বাংলাদেশের উন্নত বিশ্বে পরিনত হইবার প্রচেষ্টা আটকাইবার পন্থা খুঁজিয়া বাহির করিবার উদ্দেশ্যে এই গবেষক দলটিকে বাংলাদেশে পাঠানো হয় নাই। বরং যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বাস করে যে, আঠারো কোটি মানুষের ছত্রিশ কোটি হাত কর্মঠ হইয়া উঠিবার সম্ভাবনা কোন আকাশকুসুম কল্পনা নহে এবং তাহারা ইহাও বিশ্বাস করে যে, এই ছত্রিশ কোটি কর্মঠ হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ অতি শীঘ্রই উন্নত বিশ্বের কাতারে যাইতেই পারে। গবেষক দলের দায়িত্ব ছিল, সেই ক্ষেত্রে কিভাবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাখা যায়, তাহা খুঁজিয়া বাহির করা।

 

গবেষক দল উত্তর পাঠাইলো, আমরা আমাদের গবেষণাকে প্রথমেই লইয়া গিয়াছিলাম এই দেশের রাজনীতিকে বুঝিবার জন্য। যেহেতু আগেই বলা হইয়াছে, কাক নামক পক্ষীরাই এখন রাজনৈতিক দল সমুহে রাজত্ব করিতেছে, অর্থাৎ, কোয়ালিটির চাইতে কাক শ্রেণীর কোয়ানটিটি রুল করিতেছে, তাহাদের কর্মকান্ডের কারণে বাংলাদেশের পক্ষে উন্নত বিশ্বের তালিকায় যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হইয়া দাঁড়াইতে পারে।

 

তবে, যদি কোন কারণে ঐ সমস্ত কাকশ্রেণীর এই স্ববিরোধী কর্মকান্ডকে পাশ কাটাইয়া বাংলাদেশকে উন্নত দেশ বানাইয়াও ফেলিয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলেও যুক্তরাষ্ট্রের কোন অসুবিধা হইবে না, বাংলাদেশের জনগন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই থাকিবে।

কারণ, আমরা বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজের সহিত আলাপ আলোচনা করিয়া বুঝিয়াছি যে, হলিউডে নির্মিত অলিক মুভির কল্যাণে তৈরী হওয়া তাহাদের মনোজগতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত যে অলৌকিক ধারনা জন্মাইয়াছে, সেই কারণে এই শিক্ষিত সমাজ যুক্তরাষ্ট্র কে হলিউডি স্বপ্নের দেশ মনে করিয়া থাকে এবং তাহারা যুক্তরাষ্ট্র কে ভালবাসে। আর যাহারা স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত তাহাদের যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীক ধারনা আরও বায়বীয়, তাহাদের যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য বিশ্ব শক্তির ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কিত ধারনা হইতেছে, আকাশের কোন এক যায়গায়, পাত্তা দিতেই রাজি নহে।

 

এই রিপোর্ট আমার দৃষ্টিকোণ হইতে দেখিতে যাইয়া বুঝিলাম, আমার মত মূর্খভাবিক মানুষের এখন

"ভাল আছি ভাল থেকো

আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো"

গানটি শিখিবার সময় সমাগত। ট্রাম্প মহোদয় ইস্কাবনের টেক্কার ওভার ট্রাম্পের খেলায় পড়িয়া হলিউডি কায়দায় (হাজার হইলেও উনি শিক্ষিত তো) হাবুডুবু খাইতে খাইতে জেরুজালেমকে প্রায় হজম করিয়া ফেলিয়াছেন, গোলানও গিলিয়াছেন প্রায়।

 

আর আমার দেশ বাংলাদেশ???

ট্রাম্প মহোদয় দয়া করিয়া একটি গবেষক দল আমাদের দেশে পাঠাইয়াছিলেন এই স্বপ্নেই আনন্দিত হইয়া আমরা লম্ফঝম্প শুরু করিয়া দিতেই পারি। তবে একটা কথা বলিয়া যাই, আমাদের দেশের এই সমস্ত মস্তিষ্ক বেদনা উৎপাদনকারী এই মনুষ্য জাতীয় কাক-কলমিয়া-হুংকারিয়ারা যাহাই করুক না কেন, অবশ্যম্ভাবীভাবে বাংলাদেশ অতি অচিরেই উন্নত বিশ্বে পরিনত হইতেছে ইনশাআল্লাহ, আটকাইবার পথ নাই।

 

লেখক : রাজনীতিক, বিশ্লেষক

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর