ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১৫৮৯

সর্বাত্মক প্রস্তুতি, ছুটি বাতিল

ফণী’র আঘাত শনিবার !

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:২৯ ১ মে ২০১৯  

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ফণীউপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দুর্যোগ মোকাবিলায় সব পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। খোলা রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অফিস।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও।

 

ঘূর্ণিঝড়টি পর্যবেক্ষণ করে তা মোকাবিলায় ছুটির দিনেও সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ দপ্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করছেন।

এছাড়াও জেলা-উপজেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

 

ত্রাণ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে মে সকালে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে।

বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ফণী বিষয়ক বৈঠকে একথা জানান তিনি।

 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বর্তমানে ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করছে। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২০৫ কিলোমিটার। ১৯ জেলা তার প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ফণীপ্রবণ এলাকায় সব সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী,  কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট,  পুলিশ, আনসারসহ সব স্বেচ্ছাসেবকদের। 

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে যেতে পারে। সেই সঙ্গে কক্সবাজার চট্রগ্রামে আঘাত হানতে পারে। তবে ফণী মে সকাল নাগাদ আঘাত হানতে পারে। 

 

প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে। সিপিসির হেড কোয়ার্টার উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের কন্ট্রোলরুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। 

সিপিপির ৫৬ হাজার ভলান্টিয়ারকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত আছে। তারা এরইমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। মানুষের অন্ন-বস্ত্র চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।


স্যালাইনের সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ লন্ডনে যাওয়ার আগে তার মুখ্য সচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করি হতাহতের ঘটনা আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারবো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৪ এপ্রিল গভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় বর্তমানে মহাপ্রলংকারী রূপ নিয়ে গভীর সমুদ্রেই রয়েছে। বর্তমানে মোংলা বন্দর থেকে তা এক হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ফণী তামিলনাড়ু উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে। কিন্তু এখন তা ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রমের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পশ্চিমা বায়ুর ঘূর্ণায়নে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।

বৈঠকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, 
শক্তিশালী ফণী যদি গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি মোংলা হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যা হয়ে আমাদের দেশে আসে তাহলে তা অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে। 

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারত সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এলাকাগুলোতে নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে এটা , বা নম্বর সংকেতে উন্নীত হতে পারে। এই বিপদ সংকেত বেড়ে যদি , বা ১০ উন্নীত হয় তাহলে তা হবে মহাবিপদ সংকেত।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আরও বলেন, এই মহূর্তে এর গতিপথ যেভাবে রয়েছে তাতে প্রথমে এটি ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত করবে, এরপর পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু এর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয়ে সমুদ্রের কোল ঘেষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এটি খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে ভয়াবহ আকারে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল বুধবার বিকেলে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের অফিস সব খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি আছে। জেলায় জেলায় ডিসিরা সভা করেছেন।

 

সচিব বলেন, আমরা শুকনো খাবার প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। এরইমধ্যে সব জেলায় তা পৌঁছে গেছে। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

 

এছাড়া মে বিকেল ৫টায় ডাকা হয়েছে আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক। জেলা প্রশাসকদের বরাবর প্রাথমিকভাবে নগদ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সাইক্লোন সেল্টারগুলো ঠিক করে রাখা হয়েছে। উপকূলীয় ১৯টি জেলাকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী করণীয়।

এদিকে, আবহাওয়া অফিস সবশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার ২৩৫ কি. মি. দক্ষিণ -পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার ১৯০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার ৯৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার ১০০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

 

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ট্রাক পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিদিন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে এখন প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। কিন্তু প্রথমে তামিলনাড়ুর দিকে আঘাত করার সম্ভাবনা থাকলেও পরে ডান দিকে মোড় নিয়ে ওড়িশার দিকে আঘাতের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আরো ডান দিকে এলে পশ্চিমবঙ্গের আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। তবে আরো ডান দিকে মোড় নিলে সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এভাবে আরো ডানদিকে মোড় নিলে কক্সবাজারের দিকে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি প্রতিনিয়ত মুভ করছে। আমরা পুরো উপকূলীয় এলাকাকে সতর্কে রেখেছি।

 

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা পায়রা সমুদ্রবন্দরকে নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।