ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬০৮

ফিজিওথেরাপিতে ঝুঁকি নেই

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:০৩ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

গবেষণাধর্মী ও স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বা রোগে সব বয়সী মানুষ এ থেরাপি নিতে পারে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এ কারণে দিন-দিন জনপ্রিয় হচ্ছে চিকিৎসার এ পদ্ধতিটি।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ফিজিওথেরাপিস্টরা পুনর্বাসন চিকিৎসায় মানবদেহের কর্মক্ষমতা, শারীরিক সঞ্চালন, চলন ব্যাপ্তির নিয়ন্ত্রণ, সর্বোচ্চ শারীরিক সক্ষমতার উন্নতি, ব্যথাজনিত উপসর্গ নিরাময় এবং শারীরিক ব্যাধি, অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধিতার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করে থাকেন। ফিজিওথেরাপিস্টের পরিধি বিস্তৃত। তিনি মাস্কুলোস্কেলেটাল, নিউরোলজিক্যাল, পেডিয়াট্রিক, জেরিয়াট্রিক ও কার্ডিওপালমোনারি রোগীদের চিকিৎসা দেন।

 

কারা দেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরাই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে গণ্য হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল-২০১৮-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা স্বাধীনভাবে পেশার চর্চা করেন। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর পর্যালোচনা ও সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত চিকিৎসা দেন। তিনি লব্ধজ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়ায় সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বনির্ভর।

 

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্র

ফিজিওথেরাপিস্টরা স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসা দেন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট যেসব রোগ বা সমস্যায় চিকিৎসা দেন, সেগুলো হলো মাস্কুলোস্কেলেটাল ও অর্থোপেডিকস কন্ডিশন, নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতান্ত্রিক কন্ডিশন, রেসপিরেটরি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কন্ডিশন, পেডিয়াট্রিক বা শিশুদের সমস্যাজনিত কন্ডিশন, স্পোর্টস বা খেলাধুলায় আঘাতজনিত সমস্যা, গায়নোকলজিক্যাল কন্ডিশন, মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল কন্ডিশন, জেরিয়াট্রিক বা বার্ধক্যজনিত সমস্যা, পেলিয়াট্রিক কেয়ার এবং আর্গোনমিক্যাল উপদেশ।

 

যে কারণে দেয়া হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

যেসব কারণে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয় এর অন্যতম হলো ব্যথা উপশম, অস্থিসন্ধির সচলতা, নড়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যথাযথ অবস্থা বজায় রাখা; মাংসপেশির শক্তিবৃদ্ধি এবং যথাযথ অবস্থা বজায় রাখা, যেকোনো অঙ্গ বিকলাঙ্গতা থেকে রক্ষা করা, শারীরিক ভারসাম্যের উন্নতি করা, মাসলটোনকে স্বাভাবিক করা, ফুসফুসের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও এর ধারণক্ষমতা যথাযথ বজায় রাখা এবং উন্নতি করা, শ্বাসকষ্ট উপশমের ব্যবস্থা করা, স্নায়ুতান্ত্রিক যেকোনো রোগাক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা (যেমন: সেরিব্রাল পালসি, স্পাইনা বাইফিডা ও অটিজম) এবং জেরিয়াট্রিক ও গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রশমন।

 

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসারে প্রতিবন্ধকতা

সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় দেশের প্রান্তিক জনগণ সঠিক এবং মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সারা দেশের প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা ভুয়া এবং নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।

 

যথাযথ সরকারি তদারকি না থাকায় যেখানে-সেখানে ফিজিওথেরাপি সেন্টার গড়ে উঠছে। অনেক ভুয়া ডিগ্রিধারীরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ মৃত্যুহার বাড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বিপুল চাহিদার পরও পর্যাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে রোগীরা মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রসারে করণীয়

সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসম্পন্ন ও কার্যকর চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। যথাযথ আইন প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা মান ও নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং ভুয়া ডিগ্রিধারীদের ফিজিওথেরাপি অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হবে। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে (সিআরপি) ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন, কিন্তু ঢাকার শহরেই প্রায় ২,৩০০ ফিজিওথেরাপি সেন্টার আছে, যেখানে নামেমাত্র ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

 

‘এরই পরিপ্রেক্ষিতে যদি গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট, ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপি এবং ফিজিওথেরাপি অ্যাসিস্ট্যান্ট নিবন্ধন নম্বর করার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে উপজেলা হাসপাতাল থেকে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি পদে নিয়োগ হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ফিজিওথেরাপির সঠিক চিকিৎসা পাবেন।’