ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১১৭৯

বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১২ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১  

এখন ভাদ্র মাস, প্রকৃতিতে শরৎ ঋতুর আগমন ঘটেছে বেশ কয়েক দিন হলো। শরৎ'কে ঋতুর রাণী বললেও ভুল হবে না।এসময় নদী তীরবর্তী স্থান গুলো সাদা কাশফুলে ছেয়ে থাকে। একসময় আকাশে স্বচ্ছ নীল মেঘের উড়াউড়ি ও ঝিরঝিরি বতাসের ছোঁয়ায় শরীর ও মন জুড়িয়ে যেতো।

 

কিন্তু এমন নৈসর্গিক প্রকৃতি এখন সচারাচর দেখা মেলে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ঋতু গুলো তাদের নিজস্বতা হারাচ্ছে। এছাড়া এখন নিয়মিত বৃষ্টি হলেও ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম কমছে না ! রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার (কৃষি ও সিনপটিক) সূত্রে জানা গেছে, গত ১ সপ্তাহ থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় দিনের বেলা তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অবস্থান করছে।রাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসছে।

 

গত ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি পাত রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার (কৃষি ও সিনপটিক) সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য। ভাদ্র মাসে কখনও মুষলধারে আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। গত কয়েক মাস নিয়মিত বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কমছে না প্রকৃতিতে। বৃষ্টির সময় কিছুটা ঠান্ডা অনুভূতি হলেও বৃষ্টি থেমে গেলেই ভ্যাপসা গরমে নাকাল হচ্ছে মানুষজন।

 

এ সময়ের এই ভ্যাপসা গরমের কারণ জানতে কথা হয় রাজীবপুর সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক শামছুল আলম এর সাথে, তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারনে এবং সূর্যের আলো দিনব্যাপি না থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।

 

তিনি আরও জানান, বৈশাখ মাস থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে বাংলাদেশে। জ্যেষ্ঠ মাসে দেশের কোন কোন অঞ্চলে তারমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায়। অথচ বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে এবং মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হলে শুকাতে চায় না। শরৎ ঋতুতে অর্থাৎ ভাদ্র ও আশ্বিনে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা নামা করে। তাপমাত্রা কমলেও যেহেতু  বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে সে কারনেই মূলত গরম বেশি অনুভূত হয়।এতে অস্বস্তি বেড়ে যায় জনজীবনে।

 

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ জাকির হোসেন বলেন, বৈশাখ মাসে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। আবার ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্প খুব বেশি থাকে। তাই শরীর ঘেমে যায়। এই ঘাম সহজে না শুকানোর কারনে গরম বেশি অনুভূত হয়।

 

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভাদ্র মাসে দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময় আকাশে মেঘ থাকে। দিনের বেলা সূর্যের তাপ মেঘের বাধার কারণে ওপরে উঠতে পারে না সেজন্যও গরম সহজে কমতে চায় না।এ কারণে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম লাগছে এবং স্যাঁতসেঁতে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা যা আছে, তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে।

 

গত ১ মাস থেকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে প্রায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে।বৃ ষ্টির সময় কিছুটা স্বস্তি মিললেও বৃষ্টি শেষে আবারও সেই অস্বস্তিকর গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে।

 

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে আরও জানা গেছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে সারা দেশেই গত বেশকিছু দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প সাধারণত  ৯০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ওঠা নামা করছে। এই মাত্রায় জলীয় বাষ্প যদি বায়ুমণ্ডলে থাকে, তাহলে জলীয় বাষ্পের উর্ধ্বগমন ঘটে এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে  মেঘমালা তৈরি করে।

 

এই মেঘমালা যে  অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেখানেই বৃষ্টিপাত ঘটে। এক মেঘমালা থেকে অন্য মেঘমালার মধ্যে দূরত্ব থাকলে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এছাড়াও এসময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম হওয়ার কারনেও এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। 

 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি বিভিন্ন রুপে বিরূপ আচরণ করছে। বাংলাদেশে শীতের ব্যাপ্তিকাল কমে আসছে এবং বছরের বেশিরভাগ সময় গরম অনুভূত হওয়ার কারন বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার বেড়েছে।একই সাথে বেড়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার। এতে জনজীবনে দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করার ফলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও বেড়েছে।