ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮৬২

প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করলেন নুর

‘মাতৃত্বের ছায়া পেয়েছি’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১১ ১৬ মার্চ ২০১৯  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ীরা সব শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করবেন। এমনই আশা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, কে ভোট দিল কে দিল না— এটা নয়। যে নির্বাচিত হয়েছে, সে সব শিক্ষার্থীর জন্যই কাজ করবে। কে হলো কে হলো না সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। ভোটটা সুষ্ঠু হোক।

 

শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে নবনির্বাচিত ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদের নেতারা  দেখা করতে গেলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

 

ডাকসুর ভিপি পদে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের পরাজয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিপি পদে আমাদের শোভন জয়লাভ করেনি। আমার কাছে আসলে আমি বলেছি— যে জিতেছে তাকে অভিনন্দন জানাতে। ধন্যবাদ জানাই শোভনকে। আমি তাদের পরিবারের সবাইকে চিনি। এটাই হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতিতে হারজিত তো থাকবেই।

 

ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহস থাকা ভালো। তবে আন্দোলনে সুযোগসন্ধানীরা থাকে। তাদের ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে ছাত্রনেতাদের।

 

তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব খুঁজি। আর ছাত্রজীবন থেকেই তা গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য স্কুল পর্যায়ে ক্যাবিনেট চালু হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগে রাজনীতির পরিবেশ এত সুষ্ঠু ছিল না। এখন সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। নেতৃত্ব তুলে আনতে এই ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানমঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বক্তব্য দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নুরুল হক নুর, গোলাম রাব্বানী।

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কোটা আন্দোলন করছে, যুক্তি দিয়ে আন্দোলনের বিষয়টি বলতে হবে।

 

কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ! তার বেডরুম পর্যন্তু যাওয়া, ভিসির গাড়িতে আগুন দেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কোটা আন্দোলনের নামে এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সময়েও ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান-ধর্মঘট করা হতো। খুব বেশি কিছু হলে ভিসির বাড়ির ফুলের টবই ভাঙা হতো।

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাবির ছাত্রী হলগুলোতে অস্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। যখন জেনেছি ছাত্রীরা নিরাপদে হলে ফিরে গেছে, তখন বিশ্রামে গিয়েছি।

 

বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ডাকসু নির্বাচনে সংঘাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির আমল থেকে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। ডাকসু নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের জন্য। আমরা সেটা করতে পেরেছি।

 

শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। গুলি-বোমা ছিল প্রতিদিনকার ব্যাপার। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এক দলের নেতাকর্মীরা অন্য দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করতো। খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন— আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ঠ। আমি ছাত্রলীগের হাতে কলম তুলে দিয়ে জবাব দিয়েছিলাম, অসির থেকে মসির জোর বেশি। সেটাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে চিন্তা করলাম— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্ত্রের প্রতিযোগিতা কেন থাকবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো লেখাপড়ার জায়গা। তবে এখন এটা স্বস্তির যে, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়নি।

 

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানান।

 

এর আগে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে নিজের মায়ের ছায়া দেখতে পান বলে জানান।

তিনি বলেন, আমি আড়াই বছর বয়সে মাকে হারাই। ছোটবেলায় আমার একজন স্কুল শিক্ষিকার মাঝে মায়ের ছায়া দেখতে পেয়েছি। এখন আরেকজনের মধ্যে আমি মাতৃত্বকে খুঁজে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মাঝে আমি মাতৃত্বের ছায়া খুঁজে পেয়েছি।

 

শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও উন্নয়নকাজ বিশ্বে তাকে প্রশংসনীয় অবস্থানে নিয়েছে উল্লেখ করে ডাকসু কার্যকরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন নুর।

 

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে নুরুল হক নুর তাকে কদমবুসি করে দোয়া চান। প্রধানমন্ত্রী তার মাথায়-কাঁধে হাত রেখে দোয়া করেন।

এ সময় ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী ও পরাজিত ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হাস্যজ্জ্বল মুখে প্রধানমন্ত্রীর দু'পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

শনিবার দুপুর ২টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আসতে শুরু করেন ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বাসে তারা গণভবনে পৌঁছান।

সবার শেষে বিকাল ৩টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে গণভবনে পৌঁছান ডাকসু ভিপি নুর। ওই গাড়িতে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন ছিলেন।

গেল ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুর। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়লাভ করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর