ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৩১

মুনিয়া ও অনাগত মুনিয়ারা

রওনক আফরোজ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৩২ ১ মে ২০২১  

একজন কন-আর্টিস্ট ( Con-artist) মানে অভিজ্ঞ ধাপ্পাবাজ চতুরতার সাথে  কাউকে তার ফাঁদে ফেলার জন্য যখন অস্ত্র ও কৌশল প্রয়োগ করে, সেটা শনাক্ত করা একজন অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্যও খুব সহজ কাজ না, সেটা সবাই জানে।


বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের ব্রেনের বিকাশ ও পরিপক্কতা পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হতে মোটামুটি ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত লেগে যায়। ব্রেনের prefronatal cortex সব চাইতে দেরিতে বিকাশিত ও ম্যাচু্্যর হয়।

 

জ্ঞানভিত্তিক, লক্ষ্যনির্ভর ও বুদ্ধিভিত্তিক নির্বাহী কাজে সফলতার জন্য প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের ব্যবহারের জটিল দিকগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেও পরিপক্ক প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অপরিহার্য।


মুনিয়ার বয়স কতো? কি অভিজ্ঞতা ছিল?


আনভীর-এর বয়স কত? অভিজ্ঞতা?  


দু'জনের অপরাধের বিস্তৃতি একই?


চাটুকারিতা, তথাকথিত ভালোবাসায় নতজানু নিবেদন, দামি উপঢৌকন, মিথ্যে প্রলোভন, আবেগের আতিশয্য, চমক দেখিয়ে ছলে ও কৌশলে একজনকে আকৃষ্ট ও মানসিকভাবে বন্দী করা হয়।

 

সমাজের বিত্তবান ও ক্ষমতাশালী মানুষের জন্য কাজটি কতো সহজ সেটা বলাই বাহুল্য, শিকার যখন মুনিয়ার মতো অতিসাধারণ মধ্যবিত্ত, শক্ত অভিভাবকীন সামাজিক ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের।

 

এরপরে যতদিন ইচ্ছা ব্যবহার করে উত্তেজনা কমে এলে শিকারের সাথে শুরু হয় বিপরীত ব্যবহার। শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। ক্রমাগত বিভিন্ন মাত্রার  অপমান ও অন্যান্য ইমোশনাল যন্ত্রণা দিয়ে মেয়েটির মনে অপরাধবোধ ও কষ্ট সৃষ্টি করা হয়। মেয়েটার বিশ্বাস, স্বপ্ন ও আশায় ধস নামে । শুধু সামাজিকভাবেই না মানসিকভাবেও সে নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। তখন সে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চায় অথবা প্রতিবাদ করলে শারীরিক অত্যাচার কিংবা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।  এই কাহিনী সবার জানা।


আমরা কি আমাদের কন্যা সন্তানদের এসব ধান্দাবাজ, হৃদয়হীন, খেলুড়ে শনাক্ত করতে শেখাই?  তাদের হাতে তুলে দেই আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা, আত্মমর্যাদা ও আত্মপ্রেমের মতো শক্তিশালী অস্ত্র? আত্মরক্ষাকারী এইসব গুণাবলী মেয়েদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেবার জন্য যে আর্থসামাজিক অবস্থা, শিক্ষা, সময় , ধৈর্য  দরকার ক'জন মাতা-পিতা, অভিভাবকের সেটা আছে? ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে মধ্যবিত্ত হারাচ্ছে মূল্যবোধ আর উচ্চাশা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত। 
অন্যদিকে উচ্চবিত্তের সন্তানেরা ভোগবিলাস আর প্রাচুর্যে থেকে নির্দয়, লোভী, স্বেচ্ছাচারী, অহংকারী হয়ে ওঠে। পুর্ণাঙ্গ মনোবিশ্লেষণ করলে এদের অনেকের মধ্যে নার্সিসিজমের কীট ও অন্যান্য সাইকোপ্যাথি পাওয়া যাবে। 


মুনিয়ার মতো একজনকে ফাঁদে ফেলতে আনভিরকে খুব কষ্ট করতে হয়নি। সহজ, অনেকটা নিরুপায় মেয়েরাই এইসব দাঁতাল ধান্দালদের শিকার হয়! 


মুনিয়া অবিবাহিতা। সে হয়তো সত্যিই ভালোবেসে স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু চল্লিশোর্ধ, শিক্ষিত, সংসারী, অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী লোকটি কি চেয়েছিল? তার বিবেক, বিবেচনা বলে কিছুই নেই? মুনিয়া তেমন লোভী ও কূটবুদ্ধি সম্পন্ন হলে, স্বার্থ উদ্ধার করে সরে পড়তে পারতো। 


সামাজিক মুল্যবোধের অবক্ষয়, অমানবিকতা, নারীর প্রতি পুরুষের সহিংসতার আরও একটি দলিলের নাম মুনিয়া। আশাকরি মুনিয়া ন্যায্য বিচার পাবে। আমরাও সত্যটা জানবো।  


মুনিয়াকে যারা বেশ্যা বলে গালি দিচ্ছে তারা যেন নিজের ঘর আর আচরণের দিকে খেয়াল রাখে। 


মুনিয়া দোষ করেনি সেটা বলছি না। প্রলোভনের হাতছানিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেনি এটা তার দূর্বলতা।  কিন্তু শুধু ওর দোষ দেখলে আমরা আসল সমস্যাগুলো দেখতে পাবো না, এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। 


কেউ কেউ বলছে, মুনিয়াকে কচি নাবালিকা বললে অর্থাৎ অপরাধী সাব্যস্ত না করলে অন্য তরুণীরা মুনিয়ার পথে যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। বেশতো, তারা যদি মুনিয়ার পরিণতি দেখেও না শেখে তো মুনিয়াকে বেশ্যা সাব্যস্ত করলেই কী এরা সব সুশীলা, সুমতিসম্পন্না হয়ে যাবে??


ডা. রওনক আফরোজ
ওহাইও, এপ্রিল ৩০, ২০২১

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর