ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৭৯

মুমিনের কত গুণ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:০৭ ৭ অক্টোবর ২০২১  

মুমিন তাকে বলা হয়, যিনি আল্লাহ তাআলাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার পাশাপাশি সর্বাধিক ভয় করেন। একজন মুমিনের ধ্যান-জ্ঞান ও ইচ্ছা-অভিলাষ— সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু কেবল মহান আল্লাহ। আল্লাহর নির্দেশনাবলী সে এমনভাবে মান্য করবে, যেন এটাই তার অভ্যাস— আল্লাহর চাওয়াই তার চাওয়া; আল্লাহকে পাওয়া-ই তার পরম আরাধ্য।

 

সবার প্রতি দয়ার্দ্র ও হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়া

কোনো মানুষ যদি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের এমন পর্যায়ে যেতে পারে, তখন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও সে ভিন্ন এক মানুষ হয়ে ওঠে। তার হৃদয়াত্মায় অবচেতনভাবেই মানুষের প্রতি দয়ার্দ্রতা, নিষ্ঠা ও ন্যায় মনোভাব তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই ওপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৭১)

 

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও কোমলতার ক্ষেত্রে মুমিনের উদহারণ হলো- একটি দেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গে ব্যথা হয়, তখন তার সারা শরীর বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে— দুঃখে সমান অংশীদার হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০/ ৪৩৮)

 

মানুষের সঙ্গে সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহার

আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করা মুমিনের গুণ। সবসময় পরোপকারের বাসনা তার মনে জীয়ন্ত থাকবে। তার কোনো ভুলত্রুটি যদি অন্য কোনো মুমিন ভাই দেখিয়ে দেয়— তাহলে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করবে; সংশোধনে সচেষ্ট হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫/৩২০)

 

পরস্পর অন্যায়-অবিচার করবে না

মুমিন হবে ‘রাব্বানি’ মানুষ। এক মুমিন কখনোই অপর মুমিনের প্রতি অন্যায়-অবিচার করবে না। কেউ যদি অন্যায়-অবিচার করে, তাহলে মুমিনের দায়িত্ব হলো- তার ভাইকে মুক্ত করে ইনসাফ কায়েম করা। হাদিসে আছে, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে কখনো তার ওপর জুলুম করে না, এবং জালিমের হাতে তাকে ছেড়ে দেয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫/৯৭)

 

অন্য হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য করো; চাই সে জালেম হোক অথবা মাজলুম। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টি বুঝলাম, কিন্তু জালেমকে কীভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তার হাত শক্ত করে চেপে ধরো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫/৯৮)

 

কিছু কাজ মুমিন কখনো করে না

মুমিন যখন কথা বলবে, খুবই নরম আওয়াজে বলবে। গিবত ও পরনিন্দা করবে না। গালি দিবে না। কাউকে ছোট করে কথা বলবে না। কখনো কাউকে কথা বা কাজে আহত করবে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে যার হাত ও জবান থেকে অন্যান্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১/৫৩)  মুমিনের জবান কেবল অন্য মুমিন নয়, অবিশ্বাসীদের গালমন্দ করা থেকেও নিরাপদ থাকবে। এমনকি অবিশ্বাসী যদি কটুকথা বলে, তখন তাকে ‘সালাম’ দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।

 

আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে সবসময় ভয় করা

আল্লাহ যেন অসন্তুষ্ট না হন, মুমিনের হৃদয়ে সবসময় এই ভয় ও আশঙ্কা থাকবে। এই ভয়ের উৎস ভালোবাসা থেকেই। এই কারণে কখনো আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করবে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর কালাম পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে; এবং যারা কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের ওপরই ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ০২)

 

মুমিন সবসময় মনে রাখবে— আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণে আছেন। সবসময় সবকাজে কিয়ামত দিবসের মালিকের সামনে জবাবদিহি করতে হবে— এই চিন্তা তার থেকে কখনো দূর হবে না। এছাড়াও আল্লাহ তাআলা তাকে যেই নেয়ামত দিয়েছেন, সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ ও কৃতার্থ হবে।  আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।