ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৯৯৪

সাম্যবাদ ও মানুষের মহাঐক্য

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪৫ ১৪ আগস্ট ২০১৯  

 

১. বাংলাদেশ থেকে প্রায় দেড় লাখসহ সারা দুনিয়ার প্রায় ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ বছর হজব্রত পালন করছেন। হজ্জের ক্রম অনুযায়ী আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আছরের নামাজ একসাথে পালনের পর সরাসরি মুজতালিফায় চলে আসা এবং মাগরিব ও এশার নামাজের পর সেখানে রাত্রি যাপন করা হয়।

২. মুজতালিফা খোলা একটি জায়গা। চারিদিকে পরিবহনের হাজার হাজার গাড়ির চলাচলের শব্দ। রাতে একদম খোলা মাটিতে চাদর বিছিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাত্রি যাপন করতে হয়। সহজ স্বীকারোক্তি, উন্মুক্ত আকাশের নীচে মরুর অমসৃণ পাথরযুক্ত মাটির কোলে রাতে এটিই আমার প্রথম রাত্রি যাপন। লাখো লাখো আশেকান জাগতিক প্রলোভন ভুলে সারাজীবনের কৃতপাপের কথা স্মরণ করে পরিশুদ্ধ জীবনে নতুন করে প্রবেশের উপাচার হিসেবে এই পর্বটি সমাপণ করেন। আমার সীমিত মেধা আর জ্ঞান মুজতালিফায় অবস্থানের ঐশী ব্যাখ্যা দিতে প্রায় অপারগ। কিন্তু, নিজ চোখে দেখা বিষয়গুলি ব্যক্তিগত বোধ - বিচার দিয়ে ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করছি মাত্র।

৩. কেবলমাত্র সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের জন্য হজ্জ ফরজ হলেও সৌদি আরবের বাসিন্দাসহ নিকটবর্তী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বহু কালোচামড়ার মানুষ সহনীয় খরচে হজ্জব্রত পালন করতে সক্ষম হন। ফলে ইউরোপ আমেরিকার এশিয়ার অনেক বিলোনিয়ারের পাশাপাশি '' সচ্ছলতা'র সীমানা ছুঁয়ে যাওয়া লাখ লাখ পূণ্যপ্রাণ হজ্জব্রত পালন করছেন। এক কাতারে নামাজ আদায় করছেন। সৌদী সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থার দেয়া পানি, খেজুর ইত্যাদি খাবার পরম মমতায় খেয়েছেন।

৪. আমি যেখানে রাত্রি যাপন করি সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে দেশ বরেণ্য সামরিক বেসামরিক চিকিৎসকগন,প্যারামেডিক্স ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ একই সারিতে সূচের মত শরীরে বিঁধে যাওয়া সুতীব্র বাতাস আর খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আর্থ -সামাজিক অবস্থানে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকলেও এই পুণ্যাত্মাদের কথা - আচরণে অহংবোধ প্রকাশ পায়নি বা বিচ্ছিন্নভাবে সামান্যই প্রকাশ পেয়েছে।

৪. মাটির মানুষের হাতে স্রষ্টা প্রথমেই ' বিদ্যার আলো ' তুলে উচ্চারণ করান ' ইকরা'। শিক্ষাগ্রহণের জন্য সুদূর চীন দেশে পর্যন্ত যেতে বলা হয়েছে। চার খলিফার সময় ইসলামের প্রজ্ঞা স্পেনসহ ইউরোপের বহুদেশে আদৃত হয়েছিল। সেইসব বিদগ্ধ আলেমগণের জীবনাচার ছিল সরল, বাহুল্য আর বিলাসিতা বিহীন। বিভেদহীন সমাজে সবাইকে একই আইনের দৃষ্টিতে দেখে সাম্যবাদী সমাজ গঠন করা হয়েছিল।

৫. আজ জাগতিক প্রলোভন, ক্ষমতার উন্মত্ততা, রাজনীতির কূটকৌশল, নিত্য নতুন মনগড়া ফতোয়া মুসলিম দেশগুলোর ভেতরে শুধু অনৈক্যই আনে নাই, ভাতৃপ্রতিম দেশগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। পরাশক্তির কূটচালে বিভ্রান্ত আরব জগতে নানা ছুতায়  একে একে সাদ্দাম গাদ্দাফিসহ আকাশচুম্বী নেতাদের হত্যা করা হয়েছে । মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে ফিলিস্থিনি, ইরাক, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমনসহ বিভিন্ন জনপদকে। রাষ্ট্র হন্তারক হলেও এইসব দেশের হাজিরা একই সাথে হারাম শরীফকে সাত সাতবার ঘুরে 'গগন বিদারী সুরে লাব্বায়িক, আল্লাহুম্মা লাব্বাহিক ' ধ্বনিতে আকাশ - পাতাল মুখরিত করে ভাইয়ে ভাইয়ে মহাঐক্যের জন্য কেঁদে জার জার হয়েছে। সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে বৈষম্য পীড়িত সমাজের বিপরীতে সাম্যবাদী সমাজের জন্য এক কাতারে পরম স্রষ্টার কাছে রোনাজারি করেছে।

৬. লাখো চোখের অশ্রুধারায় মানুষের প্রতি মানুষের নিস্পেষণ, অত্যাচার, দিকভ্রান্ত ধর্ম ব্যবসায়ীদের নিজেদের মনগড়া ফতোয়া ভেসে যেয়ে ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ দেখাক।