ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৯০৬

বটি VS বালিশ !

সোহেল মাহমুদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:২৩ ২১ মে ২০১৯  

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক

আমি যে সমাজে থাকি, সেখানে কারো গায়ে হাত তোলা অসম্ভব। তুললে হত্যাচেষ্টা মামলা নির্ঘাত। মুখ থেকে মুখের দুরত্ব মাত্র দুই তিন ইঞ্চি। একজন আরেকজনকে গালিতে গালিতে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু, কোনভাবে মারার হুমকি নয়। এটা অসম্ভব। এরপরও, যুক্তরাষ্ট্রে খুনখারাবি কম হয় না। শুধু গুলিতেই বছরে মরে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। আরো নানান কায়দায় প্রতিদিন মানুষ মরছে। তাই বলে, অন্যায়, অনিয়ম, অপরাধ এখানে সংস্কৃতি হয়ে ওঠেনি। সাধারণ মানুষের মাঝে আইন মানার, মানবিক হওয়ার, সৎ থাকার চেষ্টা অবিরাম চলমান।

 

আমি যে রাষ্ট্রে থাকি এখানে ধর্ষণ আছে। নারী নির্যাতন আছে। অনিয়ম আছে। দুর্নীতি আছে। চুরি, ডাকাতি সব আছে। রাজনীতিতে কেনাবেচা আছে। তদবির আছে। কিন্তু, এর কোনটি ঘটনা নয়। মানে নিয়ম করে, নিয়মিত হয়না। দুর্ঘটনাক্রমে হয়। আইন ভাঙলে বিচার হয়। এখানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা লাগে না। কোন কোন গোষ্ঠীর অপরাধ সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় না। এর মানে, নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে সেগুলো।

 

এখানে ঘুষ আছে। কিন্তু, সেটা চলে খুব নিয়ন্ত্রিত সীমাবদ্ধ কায়দায়। ঘুষ দিলে কাজ হয়ে যাবে কিনা, সেটি ভাবতে শ্রমঘণ্টা নষ্ট করার সময় নেই মানুষের। ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা খেয়ে জীবনের সর্বস্ব খুঁইয়েছেন এমন ব্যক্তি যদি আপনার সামনে উদাহরণ হিসেবে জ্বলজ্বল করে, তাহলে আপনি ঘুষ দিতে যাবেন কোন দুঃখে? এর মানে, ঘুষের চর্চা গণ নয়।

 

সমাজে অপরাধীর বড় গলা নয়।

এখানে অপরাধী ধরা পড়বেই।

সমাজে অপরাধী কখনো রাষ্ট্রের অনুগ্রহ পায় না।

 

আমি বড় হয়েছি এমন এক সমাজে, যেখানে অপরাধীকে সারাক্ষণ দাপিয়ে বেড়াতে দেখেছি। সমাজে যেদিকে তাকিয়েছি, দুর্নীতিবাজ লোকদের বড়াই দেখেছি। একটা শিশু বড় হয় আইনভাঙা লোকগুলোর দাপট দেখে। বিপরীতে, সে দেখে আইনমানা লোকগুলো সমাজে নীচুস্বরে কথা বলে। আগ্রাসী নয়।

 

এমন একটা সমাজ নিষ্পাপ শিশুর সামনে, যেখানে আইন ভাঙা পান্তা ভাত। খুব সোজা। আর আইন মানা সবচেয়ে কঠিন কাজ। এমন এক সমাজ, যেখানে কারোর গায়ে হাত তুলতে কাউকে ভাবতে হয় না। কিন্তু, হাত তোলা ঠেকাতে দশবার ভাবতে হয়।

 

১৯৯৫ সালে শাহবাগে ডায়াবেটিক হাসপাতালে ডা. আজাদ খান বটি কিনেছিলেন ২০ গুণ বেশি দামে। আর এখন বালিশ কেনা হয় ৩০ গুণ বেশি দামে।

 

পার্থক্য কি?

মানে? না, সংখ্যায়?