ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬৯০

শুধু মেধা নয়, দরদি মানুষ চাই

খায়রুল আনাম 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১৭ ৯ অক্টোবর ২০১৯  

অচিন্তনীয় সব অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে সকল দেশের সেরা আমার প্রিয় জন্মভুমিতে। কখনো মাথায় বাড়ি দেয় মোটা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে, ধড়ফড় করে নিমিষে মরে যায় তাজা মানুষ। কখনো এরশাদ সিকদার বুকের উপর লাফালাফি করে হাড়গোড় চূর্ণবিচূর্ণ করে হৃদ্যন্ত্র কলিজা সব ফাটিয়ে জ্যান্ত মানুষকে নিমিষে চ্যাপ্টা লাশে পরিনত করে। কখনো হরেক কায়দায় হত্যা করে সাত জনের লাশ ডুবিয়ে রাখে শীতলক্ষার জলে। কখনো গুলি করে, কখনো গলা কেটে, কখনো এফোঁড় ওফোঁড় করে, কখনো পায়ুপথে বাতাস পাম্প করে সব কিছু ফাটিয়ে, কখনো পুড়িয়ে, কখনো ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে (বাড্ডায় রেনুর মতো) হত্যা করে। কখনো আবরারের মতো কাউকে পিটিয়ে পিটিয়ে থেতলিয়ে থেতলিয়ে তথাকথিত মেধাবীদের পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করে। 
আরো কতো বেশুমার কায়দায় মানুষকে আহত করা ও নিহত করা এ জনপদের নিয়মিত ঘটনা। ব্যতিক্রমী অমানুষ ছাড়া সবাই বাকরুদ্ধ হয়, বিষাদে বিষন্ন হয় অসহনীয় বিমূর্ত বেদনায় ; প্রতিবাদ করে, সোচ্চার হয়। 
মানুষকে খুন জখম করা ছাড়াও বড় বড় আর্থিক অপরাধ সহ বাস্তবে আরো অপরাধ করে অপরাধীরা ; মোটাদাগে কারণ, উগ্র স্বার্থপরতা ভিত্তিক বাস্তব লাভ ক্ষতির হিসাব। যারা এ সব অপরাধ করে তারা কেউ সহজ সরল হাবা গোবা নয়, অনেক বুদ্ধিসম্পন্ন চালাক চতুর, কেউ কেউ মেধাবী হিসাবেও গণ্য। তারা মায়া মমতার ধার ধারেনা, নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা করেনা, ধর্মীয় অনুশাসনের ধারে কাছে যায়না; তাই তারা এমন বেপরোয়া হতে পারে। 
কিছু খারাপ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে নতুন অপরাধ জন্ম নেয়। সমস্ত ঘটনা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল এমন --- ঘটনার বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্টমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ; কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তিও হয়, কিন্তু নব নব কায়দায় আবার অপরাধ হয়। সব অপরাধের মধ্যে থাকে চরম অমানবিকতা আর নির্মমতা।

শুধু শাস্তি দিয়ে ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবেনা, যদি গভীরের বিমুর্ত কারণ দূর করা না যায়।

নিজেদের অজান্তেই এ দেশের অনেক মানুষের মন থেকে অপরাধনিরোধক ধ্রুপদী বোধ, নীতি নৈতিকতা উধাও হয়ে গেছে উগ্র স্বার্থপরতা ভিত্তিক বাস্তব লাভ ক্ষতির অসুস্থ হিসাবের চর্চায়, উবে গেছে সব বিমূর্ত মানবিক অনুভুতি ; যেগুলোর ভিত্তি ছিল স্বাভাবিক ন্যায়বোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন। তথকথিত উগ্র প্রগতিবাদীরা দাপটের সাথে ধর্মীয় দর্শনকে মোটামুটিভাবে ঝেটিয়ে বিদায় করতে সমর্থ হয়েছে সাফল্যের সাথে, স্বাভাবিক বিমূর্ত মানবিক অনুভুতি ও ন্যায়বোধ পালিয়ে গেছে। সামষ্টিক বেখেয়ালের মাঝে সমাজ পতিত হয়েছে অচিন্তনীয় দর্শন সংকটে। এ শূন্যস্থান যতদিন শূন্য থাকবে ততদিন নতুন নতুন অপরাধ আর সংকট আবির্ভুত হবে পুনঃ পুনঃ।

দর্শনশূন্যতার শূন্যস্থানে যদি কোনো ভিত্তিকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না করা হয় তবে অশ্রুপাত কোনো টেকসই সমাধান আনতে পারবেনা।

আর একটা কথা বিবেচনায় রাখতে হবে, কল্যাণকর মানবিকতা ও মানুষের জন্য আন্তরিক দরদ বিবর্জিত মেধাবীরা দেশের তথা মানবসমাজের সম্পদ নয়, শত্রু। কাজেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অন্তত একটা ধারণা মনে স্থান দিতে হবেঃ শুধু মেধা নয়, দরদি মানুষ চাই।