ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৭১

জয়-নাঈম বিতর্ক ও একটি সাক্ষাৎকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪২ ৬ এপ্রিল ২০১৯  

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নায়ক হয়ে ওঠে নাঈম ইসলাম। ফায়ার সার্ভিসের লিকেজ পাইপে পলিথিন পেঁচিয়ে পা দিয়ে চেপে পানি আটকে মানুষের বিবেক জাগ্রত করে সে। এমন দৃশ্যের ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়।

প্রশংসার জোয়ারে ভাসতে থাকে ৮ বছর বয়সী শিশু। এর পরের ঘটনাগুলো নাঈম আর তার পরিবারের জন্য অনেকটা বিব্রতকর। অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় নাঈমের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেন। পর পরই শুরু হয় বিতর্ক।

ওই সাক্ষাৎকার প্রচার করে জয় নিজেই ফেঁসে গেছেন। সাক্ষাৎকারে শিশুটির কাছে অভিনেতা জানতে চান, তাকে অনেকেই পুরস্কার দিতে চাইছে। তো পুরস্কারের টাকা কি করবে? জবাবে নাঈম জানায়, টাকা সে এতিমখানায় দিয়ে দেবে। এও বলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা লুট করেছেন।

এর পর অপর একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তাতে নাঈম জানায়, এমন জবাব দিতে তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়। এটি প্রচারের পর সমালোচনার কেন্দ্রে জয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আক্রমণের শিকার হয়ে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন অভিনেতা।

এছাড়া অন্য একটি আইডি থেকে ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন জয়। তিনি বলেন, এখন আমি আপনাদের কিছু কথা বলব। কথাগুলো অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনারা সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত। আমাকে আপনারা ফোন দিচ্ছেন, থ্রেট দিচ্ছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে। আমাকে গালাগালি করছেন। আমি একটা কথা আপনাদের খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই; ছেলেটির যে ইন্টারভিউ আমি নিয়েছি। আমি সবসময় ইন্টারভিউ প্রোগ্রাম করি। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি কোনো কথা তাকে শিখিয়ে দিইনি। নাঈম যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সে কোথা থেকে শিখে এসেছে আমি জানি না।

আমার অনুষ্ঠানে এসে নিজের দায়িত্বে এসব বলেছে। তিনি বলেন, কোনো জাতীয় নেতা নিয়ে মন্তব্য করার সাহস আমার নাই। আমি করতেও চাই না। কারণ, সবাই সম্মানিত। জাতীয় নেতা যারা, একসময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন বা এখন যারা আছেন তারা সবাই সম্মানিত। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের তাদের নিয়ে আলোচনা সাজে না।

জয় বলেন, হ্যাঁ আমি কোনো বিশেষ দলের সমর্থক হতে পারি। কিন্তু অন্য দল বা নেতা নিয়ে কটুক্তি করার অধিকার রাখি না। আমি সেটা করিও না। নাঈম যা বলেছে সেটি আমি নিজে শুনেও হতবাক হয়েছি। আমি তাকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করেছি। আমার ইন্টারভিউতে এরকম উত্তর আশা করিনি।  কিন্তু উত্তর হয়ে গেছে। আমি একটি দায়িত্ব নিতে পারি কেন সেটা প্রচার করেছি। তবে বক্তা যা বলে আমি সবকিছু দর্শকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আপনারা আমাকে মিছি মিছি ভুল বুঝছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড করেছেন। আমাকে অপমান করছেন। থ্রেট দিচ্ছেন। আমার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন।  কিন্তু আমি বলব আমি এটার জন্য দায়ী না।

তিনি বলেন, যদি কখনও কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি তাকে শিখিয়ে দিয়েছি। তবে আমি আর কোনো দিন উপস্থাপনা করব না। আপনারা না চাইলে আমি উপস্থাপনা ছেড়ে দেব। তবু আমাকে অপমান অপদস্ত থ্রেট দেবেন না। আমি বাঁচতে চাই, কাজ করতে চাই। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। আমার ক্ষতি করবেন না।

পুরো বিষয়টি জানতে সম্প্রতি করাইল বস্তিতে কথা হয় নাঈমের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। এর আগে টেলিফোনে দেখা করার কথা বলতেই তিনি বলেন, ছেলে অসুস্থ। সে নানা বাড়ি সাভার চলে গেছে। দুই সপ্তাহ পরে আসবে। কিন্তু বস্তিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে ওর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়।

তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়ের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার পর অনেকটা চাপে আছেন তারা। আগে সচরাচর সবার সঙ্গে কথা বললেও এখন এড়িয়ে যান। স্থানীয়রা মনে করছেন, কোনো মহল থেকে তাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা থেকে দুরে রাখা হচ্ছে।

বাসায় খোঁজ নিতেই নাঈমের ছোট বোন কাজল জানায়, তার মা নাঈমকে নিয়ে কোথাও চলে গেছেন। পরে নাজমা বেগমের কাছে ফোন দিলে জানান, তিনি অনেক দুরে আছেন। বাসায় আসতে অনেক দেরি হবে।

পরে স্থানীয় বাসিন্দারা কথা বলেন নাঈমের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। তাদের অনুরোধে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন তিনি ও তার ছেলে। নাজমা বেগম বলেন, আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত। জয় ভাইয়ের ইন্টারভিউতে আমার ছেলে একটা কথা বলে ফেলছে। এ কথাটা তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। সে নিজে থেকে এ কথাটা বলছে।  এজন্য মা হয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া ও  দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। সবাই যেন আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দেন।

আবার নাঈমও খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা  চেয়েছে। সে বলেছে, ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে সে বুঝে উঠতে পারে নাই।  সে যা বলেছে ভুল বলেছে। এটা বলা তার ঠিক হয়নি।

সাক্ষাৎকার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর