ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১১৫১

বাংলাদেশি গবেষকের কৃতিত্ব

ট্রেন চলবে দ্রুত, মাটি ছোঁবে না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪৯ ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

ভাসমান ট্রেন আবিষ্কার করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন বাংলাদেশি গবেষক ড. আতাউল করিম।

বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী এমন একটি ট্রেনের নকশা করেছেন - যা চলার সময় ভূমিই স্পর্শ করবে না! তাঁর এ অভিনব আবিষ্কার গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশে এই ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে তৈরির বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। 

ড. আতাউল এ ভাসমান ট্রেনের প্রকল্পটি হাতে নেন ২০০৪ সালে। দেড় বছরের মাথায় ট্রেনটির প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সক্ষম হন তিনি। অথচ সাত বছর চেষ্টা করেও সফলতা পাননি ওল্ড ড্যামিয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।

পরের সময়টায় নামকরা বিজ্ঞানীরা মডেলটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু কোনও খুঁত খুঁজে না পাওয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রেনের প্রচলিত ধারাকে পেছনে ফেলে ড. আতাউল করিম সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতিতে এই ট্রেনের নকশা করেছেন। ট্রেনটির গঠনশৈলীও খুবই আকর্ষণীয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য, এটি চলার সময় ভূমিই স্পর্শ করবে না। ট্রেনটি চুম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাবলীলভাবে চলবে। গতিও হবে অনেক বেশি। অনেকটা বুলেট ট্রেনের মত!

 

জার্মানি, চীন ও জাপানে ১৫০ মাইলের বেশি গতির ট্রেন আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এগুলোর সঙ্গে আতাউল করিমের ভাসমান ট্রেনের পার্থক্য হচ্ছে, ওই ট্রেনে প্রতি মাইল ট্র্যাক বসানোর জন্য গড়ে খরচ পড়ে ১১ কোটি ডলার। আর ড. আতাউলের আবিষ্কৃত এই ট্রেনে খরচ হবে মাত্র এক কোটি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার।

 

ইতিহাস বলে, ট্রেন বা রেলগাড়ি আমাদের সবার প্রিয় এক বাহন। প্রথম দিকে এই রেলগাড়ি দড়ি দিয়ে ঘোড়া বা মধ্যাকর্ষণের টানে চালিত হত। এরপর জেমস ওয়াট ১৭৬৯ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করলে ট্রেনের গতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। মাঝের কয়েক দশকে ডিজেল থেকে শুরু করে দ্রুত গতির বৈদ্যুতিক ট্রেন আবিষ্কার হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখানেই থেমে নেই তাঁরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিভাবে দ্রুত থেকে দ্রুত গতির ট্রেন তৈরি করা যায়। শুধু তাই নয় তারা কাজ করছেন ট্রেনের সার্বিক দিক নিয়ে, যেখানে থাকছে ট্রেনের বগি থেকে শুরু করে ট্রেন লাইন সবকিছুর উন্নতি। সম্প্রতি দ্রুত গতির এমন এক ট্রেন আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে ট্রেন চলবে কিন্তু লাইন স্পর্শ করবে না। চুম্বকের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত গতির এই ‘ম্যাগলেভ ট্রেন’ আবিষ্কারে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম।


১৯৫৩ সালের ৪ মে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার মিশন হাউজে জন্মগ্রহণ করেন আতাউল করিম। বাবার নাম আব্দুর শুকুর, পেশায় ডাক্তার ছিলেন, মা একজন গৃহিণী। ১৯৭৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সেতারা বেগমের সাথে। স্ত্রী সেতারা বেগম একজন প্রাণরসায়নবিদ। তাদের এক পুত্র সন্তান ও দুই মেয়ে রয়েছে।


বড়লেখার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় আতাউল করিমের। এরপর ভর্তি হন বড়লেখার পিসি হাইস্কুলে। ১৯৬৯ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে। স্নাতকে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৭৬ সালে বিএসসি শেষ হলে মার্কিন যুক্ত্রারাষ্ট্রে পাড়ি জমান উচ্চ শিক্ষার জন্য। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব আলবামাতে। ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ও ১৯৭৯ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি শেষ করেন ইউনিভার্সিটি অব আলবামা থেকে। ১৯৮১ সালে তিনি পিএইচডি শেষ করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।


পড়ালেখা ইতি টেনে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন গুণী এই বিজ্ঞানী। শুরু হয় নতুন নতুন গবেষণা, নতুন নতুন লেখালেখি। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আরাকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে  তিনি আবার তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন উইচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৮৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব ডেইটনে সহকারি অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়ে ১৯৯৩ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এখানে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইলেকট্রোঅপটিক্স প্রোগ্রামের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি টেনিস বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়ে ২০০০ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। এরপর তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

মাঝে তিনি ওহিওর রাইট প্যাটার্সন বিমান ঘাঁটিতে এভিওনিক্স পরিচালক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৪ সালে যোগ দেন ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিভাগে এবং এখানেই তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের (গবেষণা) দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৯ বছর ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রোভোস্ট এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অপটিক্যাল সিস্টেম, অপটিক্যাল কম্পিউটিং এবং প্যাটার্ন রিকগনিশন বিষয়ে বিশ্বের ৫০ শীর্ষ গবেষকের মধ্যে একজন ড. আতাউল করিম। 


স্কুলে থাকাকালীন সময়েই আতাউল করিমের লেখালেখির হাতেখড়ি হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালে পর্যন্ত বিজ্ঞান সাময়িকী ও বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান পত্রিকায় তাঁর ৩০টিরও বেশি লেখা প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে ‘বিবর্তন কাহিনী’ ও ‘সাম্প্রতিক’ অন্যতম। ‘বিবর্তন কাহিনী’-তে তিনি মহাজাগতিক ও জৈবিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন। ‘সাম্প্রতিক’ নামের সাথে মিল রেখে বইটিতে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে বই প্রকাশ করার জন্য পাণ্ডুলিপি জমা দিলে, বাংলা একাডেমি থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মত কিশোর লেখকের বই তারা প্রকাশ করবে না। এমন ঘটনায় মর্মাহত আতাউল পরবর্তীতে তার সমস্ত বই ও নিবন্ধ তিনি ইংরেজিতে লিখেন, এমন কি বাংলাদেশের বাইরে থেকে সেগুলি প্রাকাশ করেন। ফলে বাংলাদেশ তাঁর মত একজন গুণী লেখককে হারায়।


তিনি মূলত গবেষণামূলক বই লেখেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৫টির বেশি বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসাবে পড়ানো হয়। বিশ্বের খ্যতনামা বিভিন্ন জার্নালে তাঁর ৩২৮টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :


৥   Digital Design: Basic Concepts and Principles(2007)
৥   Continuous Signals and System With MATLAB (2001)
৥   Optical Computing: An Introduction (1992)
৥   Electro Optical Devices and Systems (1990)
৥   Digital Design: A Pragmatic Approach(1987)

 

তাঁর কিছু সফল গবেষণার বিষয়বস্তু হলো -


@   নন লিনিয়ার ইমেজ প্রসেসিং
@   শ্যাওলা থেকে জ্বালানী তৈরি
@   টারগেট রিকগনিশন
@   নাইট ভিশন
@   বায়োফিজিক্স
@   অপটিক্যাল কম্পিউটিং

 

পেটেন্ট : 


ড. আতাউল করিমের অনেকগুলো আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য -


#  ট্রাইনারি এসোসিয়েটিভ মেমরি
#  ফাইবার অপটিক কাপলিং সিস্টেম
#  ইনার প্রোডাক্ট এরেই প্রসেসর ফর রিট্রাইভাল অব স্টোরড ইমেজ
#  র‍্যাস্টার স্ক্যানার উইথ এ সিলেক্টেবল স্পট ডাইমেনশন
#  অ্যাপটিক্যাল প্যাটার্ন রিকগনিশন টেকনিক।

সাকসেস স্টোরি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর