ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৪১৭

আবহাওয়া বদল, ঠান্ডা-কাশি-শ্বাসকষ্ট-জ্বর

বাঁচুন নিউমোনিয়া থেকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪৩ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

সারা দিন কাশি, ঠান্ডা লাগা, শ্বাসকষ্ট সঙ্গে ধুম জ্বর। সাধারণ চোখে ‘ভাইরাল ফিভার’ বলে দেগে দেওয়া যায় একে। তবে দিনের পর দিন সচেতনতার অভাব আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অনীহাকে কাজে লাগিয়ে যখন স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি আপনার শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার শিকড়বাকড়, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক।

ফুসফুসের সংক্রমণের প্রভাবে যে সব অসুখের হানা  উত্তরোত্তর বাড়ছে, তাদের অন্যতম নিউমোনিয়া। এই অসুখে ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হয়, অনেক সময় পানি জমতে পারে ফুসফুসে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটিরিয়া এই রোগের অন্যতম কারণ হলেও ভাইরাস বা ছত্রাকের প্রভাবেও এই অসুখ দানা বাঁধে শরীরে। তাই নিউমোনিয়ার নানা প্রকারভেদও রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত ক্রনিক ঠান্ডা লাগা, বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকার সূত্র ধরেই এই অসুখ ছড়ায় বলে বর্ষার পর হঠাৎই শরতের আবহাওয়া পরিবর্তন ও হিম পড়া শুরু হওয়ার সময়টাই এই অসুখের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। ঠান্ডা লাগলেই যে সবার নিউমোনিয়া হবে তা নয়, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মূলত, বয়স্ক ও শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ধুম জ্বর। ওষুধে জ্বর নামলেও আবার ওষুধের প্রভাব কাটলেই হু হু করে বেড়ে যায় জ্বর। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি উঠতে পারে জ্বর। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি তো থাকেই। অনেক সময় মাথা যন্ত্রণা, গা গোলানো, ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়াদাওয়ায় অনীহা এ সবও নিউমোনিয়ার জ্বর-শ্বাসকষ্টকে সঙ্গ দেয়। তবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ছুঁলেই নিউমোনিয়ার জীবাণু শরীরে ছড়ায় না। তবে আক্রান্তের কাশি বা হাঁচি থেকে তা ছড়াতে পারে। এই ‘ড্রপলেট ইনফেকশন’ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।


এই অসুখে ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হয়, অনেক সময় পানি জমতে পারে ফুসফুসে।

তবে সাধারণ সর্দি-জ্বরের সঙ্গে এর বেশ কিছু তফাত থাকে। একটু লক্ষ্য রাখলেই তাই রোগ নির্ণয় সহজ। 

চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি দিয়ে এই রোগ শুরু হলেও দেখা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে, কশিরও দমক বাড়ছে। সাধারণত ভাইরাল ফিভার যে সব ওষুধে কমে, দ্রুত সাড়া মেলে, এই ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। বুকের ব্যথাও বাড়তে থাকে। শ্বাসকষ্টের প্রাবল্য বাড়তে থাকে। অনেক সময় জ্বরের ওষুধের কড়া ডোজে জ্বর নামলেও ফিরে ফিরে আসে তা। অবস্থা গুরুতর হলে কাশির সঙ্গে রক্তও উঠতে পারে।

এ সব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন কোনও ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কি না। তবু নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। এক্স-রে, সিটি স্ক্যানও করে দেখা হয় অনেক সময়।

শিশুদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিউমোনিয়া প্রতিষেধক টিকা নেওয়ান।

অসুখের সময় সতর্কতা
আক্রান্ত রোগীকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতেই হবে। সঙ্গে প্যাসিভ স্মোকিং থেকেও দূরে রাখতে হবে রোগীকে।
দূরে রাখতে হবে যে কোনও দূষণ থেকেও। ধুপকাঠির ধোঁয়া, ধুনো, মশা মারার কয়েল রোগীর ঘর থেকে বাদ দিতে হবে এ সবও।
পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন নিউমোনিয়া রোগীর জন্য খারাপ। তাই প্রচুর পানি ও ফ্লুয়িড জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে রোগীকে।

জ্বর কমানোর ওষুধ ঘন ঘন খাইয়ে জ্বর নামানোর চেষ্টা না করে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়ানো দরকার।

রোগীকে ঠান্ডা আবহাওয়া থেকেও দূরে রাখতে হবে। অ্যাজমা থাকলে ইনহেলার সঙ্গে রাখুন। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ব্যবহারের বিধিনিষেধ মানতে হবে।

হার্ট ও লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগী ও ডায়াবেটিকরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকা নিতে পারেন।

সাধারণত দু’ সপ্তাহ সময়ে এই রোগের ধাক্কা অনেকটাই সামলে ওঠেন রোগী। তবে তার চেয়েও দেরি হলে অবশ্যই হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
 
নিউমোনিয়ার টিকা
নিউমোনিয়ার টিকা মূলত দুই রকম। বছরে একবার যেমন নেওয়া যায়, তেমনই পাঁচ বছর অন্তরও নেয়া যায় এই বুস্টার ডোজ। শিশুদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ মনে নিউমোনিয়া প্রতিষেধক টিকা দেয়া যায়।