ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৪১

একটি বিপজ্জনক স্বাস্থ্যসমস্যা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:১১ ৫ জুন ২০২১  

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। আস্তে আস্তে শরীরের নানাবিধ স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম অস্থিতিশীল বা অকার্যকর হয়ে পড়ে। শরীর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না বলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব দুর্ঘটনার মাত্রাও বাড়তে থাকে।

 

আজকে এমন একটি স্বাস্থ্যসমস্যার কথা লিখব যা অনেক জোয়ান-বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে এবং এ কারণে অনেকেই মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয় বা অনেক সময় মারাও যায়। যেমন বয়স্ক মানুষের অনেকেই বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে চট করে  বসতে গেলে বা নিচে বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়াতে গেলে মাথায় চক্কর দিতে থাকে, শরীরের ব্যালেন্স বা ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, চোখ ঝাপসা হয়ে যায় এবং ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

 

বহু মানুষ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে ফ্লোর, চেয়ার, টেবিল, খাট, সোফা, শক্ত ধাতব বস্তুর ওপর পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলে, মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং এ কারণে অজ্ঞান হওয়া ছাড়াও  মারাও যায়। প্রায়শ এ ধরনের ঘটনার খবর আমরা শুনে থাকি।

 

এর কারণ কি?
এর কারণ হলো হঠাৎ উঠতে গেলে রক্তচাপ কমে যায়। এতে করে রক্তপ্রবাহ কমে যায় বলে মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ হ্রাস পায়। অল্প বয়স্ক মানুষের ঘাড়ে এক ধরনের রিসেপ্টর থাকে, যা হঠাৎ ওঠার সময় রক্তচাপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে রক্তনালিকে সংকুচিত করে দেয়। ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এসব রিসেপ্টর কাজ করে না।

 

তাই কোনো কোনো সময় মাথায় রক্ত সরবরাহ ও চাপ কমে যাওয়ার কারণে হঠাৎ ওঠার সময় বয়স্করা পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়, সে জন্যে  বয়স্ক মানুষের (কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্পবয়সীরাও) শোয়া বা বসা থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। ধীরে ধীরে ওঠা উচিত। এসব ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়।

 

হঠাৎ শোয়া থেকে বসে পড়া বা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য রক্তচাপ কমে যাওয়াকে বলা হয় পস্টিউরাল হাইপোটেনশন (Postural Hypotension) বা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic Hypotension)। আগেই বলেছি- পস্টিউরাল হাইপোটেনশনের ফলে পড়ে গিয়ে উরুর হাড় ফাটা বা ভাঙা, হাত-পা ভাঙা ও মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য বয়স্ক মানুষ গুরুতর আহত হন বা মৃত্যুবরণ করেন।

 

এ মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে হলে সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে আর নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে। 
এক, আপনি দীর্ঘ সময় শোয়া অবস্থায় থাকলে কাত হয়ে আস্তে আস্তে ওঠে বসুন এবং দাঁড়ানোর আগে কয়েক মিনিট বসে অপেক্ষা করুন।

 

দুই, আপনি দীর্ঘক্ষণ বসা অবস্থায় থাকলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান। চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে যাবেন না। হঠাৎ করে ভুলে উঠে গেলে এবং মাথা ঘুরতে থাকলে পাশে যা-ই পান ধরে শরীর ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিন অথবা আবার বসে বা শুয়ে পড়ুন যাতে আপনাকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেতে না হয়।

 

তিন, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে গেলেও এ সমস্যাটি হতে পারে। যাঁদের প্রায়ই এ সমস্যা হয়, তাদের উচিত আশেপাশে ধরার মতো সাপোর্ট আছে এমন যায়গায় নামাজ পড়া বা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা। অনেক সময় রুকু বা সেজদা থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে পস্টিউরাল হাইপোটেনশনে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সাবধান হওয়া উচিৎ। আমার মাঝে মাঝে এ সমস্যা হয়। 

 

চার, ডিহাইড্রেশনের কারণেও পস্টিউরাল হাইপোটেনশন হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলবেন না। 
পাঁচ, অ্যালকোহল পান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। 

ছয়, ডায়াবেটিস ও লো প্রেসারের রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 
মনে রাখবেন- বয়স যত বাড়বে, এ সমস্যাও ততো বাড়বে। বৃদ্ধদের উঠা-বসা, চলা-ফেরায় সাহায্য করুন। নতুবা পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে বা মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হলে ঐ বয়সে সঠিক চিকিৎসা পাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে এবং পঙ্গুত্ব নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে হতে পারে।

 

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহকে স্মরণ করুন, জীবনকে ভালোবাসুন।

 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।