ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৮২

টিকা নেয়ার পরও যেসব কারণে ফের করোনা আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:০০ ১৮ অক্টোবর ২০২১  

দেড় বছরেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে করোনাভাইরাস (Coronavirus) আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। এখন, টিকাকারণ চলছে, মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে। তবে সতর্কতা না নিলে কিন্তু সমস্যা বাড়তে পারে। সেই ঝুঁকি এখনও রয়েছে। একটা কথা ভাল করে বুঝতে হবে যে কোভিড টিকা (COVID-19 Vaccine) আমাদের সুরক্ষা দেয়। এটি আমাদের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে না। টিকা আমাদের গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে, হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তবে, একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা গাঁজা, অ্যালকোহল বা তামাক সেবন করে তাদের সম্পূর্ণভাবে টিকা দেওয়া হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত (Breakthrough Infections) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমিত

যখন সম্পূর্ণভাবে টিকা নেওয়া কোনও ব্যক্তি করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়, তখন সেটা অবাক করে। বিপুল জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার ফলে এরকম অনেক সংক্রমণের খবর সামনে আসছে। এটা দেখা গিয়েছে যে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা হয় উপসর্গহীন (Asymptomatic) থাকেন, অথবা হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, বয়স, অন্য রোগের (Comorbidities) জেরে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। যাই হোক, এই সম্ভাবনা খুবই বিরল। বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে কোন টিকা নেওয়া হচ্ছে তার উপরেও। কারণ, প্রতিটি টিকার কার্যক্ষমতা সমান নয়। কোনও কোনও টিকা বেশি কার্যকরী এবং কোনও টিকা তুলনামূলক কম কার্যকরী।

 

সম্পূর্ণভাবে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে

যদি কোনও ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়, তিনি অবশ্যই কোভিড সংক্রান্ত গুরুতর অসুস্থতা থেকে নিরাপদ। তবে, তিনিও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। করোনাভাইরাসের নতুন রূপগুলি, বিশেষ করে ডেল্টা খুবই সংক্রামক। যা সর্বাধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune system) অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই সম্পূর্ণ রূপে টিকা নেওয়া লোকজনকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

যে কারণে টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণ

এমন অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রধান কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন রূপ। বলা হয় যে এগুলি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এবং টিকার প্রতিরোধ এড়াতে সক্ষম। করোনাভাইরাসের নতুন রূপগুলি অ্যান্টিবডি (Antibodies) এড়াতে পারে। একজন ব্যক্তির ইমিউনড সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এক্ষেত্রে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

 

টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত কমতে শুরু করে। যে কারণে বিশ্বের অনেক দেশই এই মুহূর্তে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে বা এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু কোভিড বুস্টার ডোজ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। অনেকে আবার মনে করছেন, কোভিডের তৃতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ একই। কিন্তু পুরো বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ দু'টি এক নয়।

 

ভ্যাকসিন মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং তার সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালণ করে। আর বুস্টার ডোজ কোভিড টিকা নেওয়ার পাঁচ থেকে ছয় মাস পর দেওয়া হয়। যাতে কোভিড টিকার কার্যক্ষমতা না কমে সেই কারণে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা নেওয়া ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের টিকার বুস্টার ডোজ জরুরি।

 

সর্বশেষ অনুসন্ধানে কী জানা গেছে

উপরে উল্লিখিত ঝুঁকির কারণগুলি ছাড়াও সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে টিকা নেওয়ার পরও গাঁজা (Marijuana), অ্যালকোহল (Alcohol), কোকেন (Cocaine) এবং তামাক সেবন করা ব্যক্তিদের সংক্রমণের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি হতে পারে। অন্যদের ক্ষেত্রে এই হার ৩.৬ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড সাইকোলজিতে (World Psychology) প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোভিডের বিরুদ্ধে টিকা অত্যন্ত কার্যকরী, তবে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে সতর্ক না হলে।

 

ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। অন্য কোভিড বিধি মানতেই হবে। যাদের মাদক ব্যবহার ব্যাধি (এসইউডি) আছে এবং গাঁজা, অ্যালকোহল, কোকেন, ওপিওইড, তামাকের ওপর নির্ভরতা রয়েছে, তাদের করোনা টিকার দুই ডোজ দিলেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

 

অনুসন্ধানে কী পাওয়া গেছে

প্রায় ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭২ জন সম্পূর্ণ রূপে টিকা নেওয়া ব্যক্তি গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে ৩০ হাজার ১৮৩ জন সাবস্ট্যান্স ইউজ ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ২০২০ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের অগাস্টের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছিল এবং টিকা দেওয়ার আগে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। সাবস্ট্যান্স ইউজ ডিজঅর্ডার (Substance Use Disorders) হল যথেষ্ট ক্ষতি এবং প্রতিকূল পরিণতি সত্ত্বেও ওষুধের (অ্যালকোহল সহ) ক্রমাগত ব্যবহার।

 

এই এসইউডি রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি তামাক সেবনের ক্ষেত্রে ৬.৮ শতাংশ, গাঁজা সেবনের ক্ষেত্রে ৭.৮ শতাংশ হয়ে যায়। অন্যদের ক্ষেত্রে এই হার ৩.৬ শতাংশ। এই তথ্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে সম্পূর্ণরূপে টিকা নেওয়া সাবস্ট্যান্স ইউজ ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তিরা সংক্রমণের জন্য বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

 

নিরাপদ থাকার জন্য যা করা উচিত

সতর্ক থাকা, টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মানা (Social Distancing) ছাড়াও যে কোনও ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যখন আসক্তির কথা আসে, তখন অনেকেই বুঝতে পারে যে তারা কী ক্ষতি করতে চলেছে বা করে ফেলেছে। তাই ড্রাগ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সুস্থ জীবনযাপনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সঠিক আহার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধূমপান সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধূমপানের প্রবণতা থাকলে করোনা থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে বা সমস্যায় পড়তে হয়।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর