ঢাকা, ১১ আগস্ট সোমবার, ২০২৫ || ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
good-food
১৩

পঞ্চাশের পরে নারীর জীবন—এক নতুন অধ্যায়ের শুরু

তারিক বিজলী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৯ ১০ আগস্ট ২০২৫  

নারীর জীবনের প্রতিটি দশক একেকটি সংগ্রামের গল্প। তিরিশে সংসার গড়ার ছুটোছুটি, চল্লিশে দায়িত্বের চাপ, আর পঞ্চাশ? এ যেন ক্লান্ত শরীর, ক্লান্ত মন, আর আত্মা খুঁজে ফেরে একটু প্রশান্তি, একটু নিজের জন্য সময়। পঞ্চাশ পেরোনো মানেই জীবন শেষ—এমন ভাবনার দিন শেষ। এই বয়সটা আসলে একটা নতুন সূর্যোদয়, যেখানে আপনিই আসল নায়িকা, আপনার নিজের জীবনের।এখন সময় এসেছে একটু পেছনে তাকিয়ে নিজের কৃতিত্বকে স্যালুট জানানোর। আপনি বহুদিন ধরে সংসারের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি মানুষের জন্য নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। এখন সময় এসেছে নিজেকে ভালোবাসার।

 

হিসেব বন্ধ করুন, আশা কমান
জীবনের সমস্ত হিসেব মিলবে না—এই বাস্তবতা মেনে নিতে শিখুন। কে কতটা দিল, কে কতটা বোঝেনি, আর কে আপনাকে অবহেলা করল—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে যাওয়া মানেই নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলা। এখন দরকার মুক্তি—আত্মিক মুক্তি। আশা যত কমাবেন, তত শান্ত থাকবেন। দোষারোপের চক্র থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজের ভুলগুলো মেনে নিন, যদি সংশোধন সম্ভব না হয়, তাহলে ক্ষমা করে দিন নিজেকেই। আপনার অতীত ছিলো সত্য, কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো আপনার হাতে।

 

সংসার থেকে একটু সরে আসুন, দূরত্ব রাখুন
এখন আর দিনরাত ঘরের কাজে ডুবে থাকা নয়। জীবন অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছে, কিছু না পাওয়াও শিখিয়েছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে নিজের ঘরটাকে একটু হালকা করার। অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ধীরে ধীরে বিদায় দিন—সেই পুরনো কাপে ধরা স্মৃতি, সেই নষ্ট হয়ে যাওয়া আলমারির ভেতরের স্মৃতিভার—এগুলো ছেড়ে দিন। জিনিসের প্রতি মায়া কমান, কারণ আসল মূল্য আপনার শান্তির। কোমর ব্যথা, হাঁটুর যন্ত্রণা, ঘাড়ের টান—এসব বয়সের স্বাভাবিক উপহার। 

 

শুধু ওষুধে নয়, মানসিক ভারমুক্তিতেও আরাম আসে। ঘর যদি একটু অগোছালো থাকে, থাকুক না। সব কিছুই কি আর ঠিকঠাক থাকা দরকার? বরং এখন সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়ার। জানালা খুলে বৃষ্টি দেখুন, ছাদে উঠে চাঁদকে দেখে একটা গভীর নিশ্বাস নিন। নদীর ধারে হাঁটুন, গাছের নিচে বসে থাকুন, নিজের সঙ্গে সময় কাটান।

 

একাকীত্ব—ভয় নয়, অভ্যাস করুন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব আসবেই। কেউ যাবে, কেউ পাশে থাকবে না। এটাই স্বাভাবিক। তাই ধীরে ধীরে একা থাকার অভ্যেস গড়ে তুলুন। সিনেমা দেখুন একা, বই পড়ুন, গান শুনুন, রাস্তায় একা হাঁটুন—এভাবেই আপনি নিজেকে নতুন করে চিনবেন। নিজের শরীরের যত্ন নিন, মনকে সাজান। শরীরের ছোট ছোট লক্ষণগুলো উপেক্ষা করবেন না। স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পর্যাপ্ত ঘুম নিন। প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন। আর হ্যাঁ, একটু সাজুন, নতুন জামা পরুন, আয়নায় নিজেকে দেখে হাসুন।

 

সম্পর্ক—ভালোবাসুন, কিন্তু দূরত্ব রাখুন
সব সম্পর্ক হৃদয়ে ঢুকিয়ে রাখলে কষ্ট বাড়বে। ভালোবাসুন, সাহায্য করুন, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় আবেগে ডুবে যাবেন না।
যতো বেশি জড়িয়ে যাবেন, ততই মন ভাঙবে। তাই ভালোবাসাকে একটা সীমানা দিন। নিজের শান্তিকে আগে রাখুন।

 

জীবনের আসল শিক্ষা—অতিথির মতো বাঁচুন
এই পৃথিবী আমাদের চিরকালের বাড়ি নয়। আমরা অতিথি মাত্র। এই ভাবনাটা যদি প্রতিদিনের জীবনের অংশ করে ফেলতে পারেন, তাহলে দুঃখ, হিংসে, প্রতিযোগিতার মতো বিষাক্ত অনুভূতিগুলো নিজে থেকেই কমে যাবে। মনে রাখবেন—জীবন আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সব না হোক, কিছু মধুর মুহূর্ত ছিল। সেগুলোই আপনার সম্পদ।
প্রতিদিন অন্তত একবার সেগুলোর কথা ভাবুন, মনের ভেতর আলোর মতো জ্বলে উঠবে স্নিগ্ধ শান্তি।

 

একটি নতুন জীবন শুরু হোক আজ থেকেই—
নিজেকে ভালোবাসার এই যাত্রা আজ থেকেই শুরু করুন। এখন থেকে আপনিই আপনার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। আপনিই আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ। ভালো থাকুন, ধীরে হাঁটুন, গভীরভাবে বাঁচুন।

 

লেখক: তারিক বিজলী

সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়