ঢাকা, ১৩ মে মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
৮৪৯

পুরস্কার নয়, কিছুটা দায়মুক্তি

মেজর খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৫৭ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

১. গোল্ড ফিশের মতো স্মৃতি বিভ্রম হয়ে আমরা ক্রমশ বাতিঘরের আলোদের অস্তিত্ব ভুলে যাচ্ছি। বাঙালি মনন আর চৈতন্য বিনির্মাণ করেছেন যেসব কিষাণ-কিষাণি তাদের মধ্যে নিচের চারজন একুশে পুরস্কার ২০০০ - এ অভিষিক্ত হলেন। সুজাতা, পাপিয়া সারোয়ার, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাজী রোজী। এটি নিছক স্বীকৃতি নয়। বাংলা নামের জনপদের পলল জমিনে মেধাবৃত্তির যে চাষ তারা করেছেন, সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের সামান্য দায়মুক্তি। 

 

২. সুজাতা আজিম। রক্ষণশীলতার পঙ্কিলতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সিনেমা জগত। উর্দু ছায়াছবির কালো থাবার বিরুদ্ধে বাংলা ছায়াছবিকে টেনে তুলতে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মহিলা চরিত্র অভিনেত্রীদের আনতে বাধ্য হতে হতো। যে অল্প কজন বনেদী, মার্জিত রুচির শিল্পী সেই অমানিশাকে ভেঙেছিলেন সুজাতা তাদেরই একজন। সামন্তমনস্ক সমাজে বৈধব্যের তীব্র দহন উপেক্ষা করে আজও তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করে চলছেন।

 

৩. পাপিয়া সারোয়ার। অন্ধকারের শক্তি যখন রবীন্দ্র সংগীতের পায়ে বেড়ি পরাতে চেয়েছিল, তখন সনজিদা খাতুন, ওয়াহিদুল হকের কাছে তালিম নেন তিনি। প্রাণী বিজ্ঞানের উচ্চ ডিগ্রীকে উপেক্ষা করে রবীন্দ্র সংগীতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। কিন্নরী কণ্ঠী এ শিল্পী ' নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন'সহ বহু গগনচুম্বী জনপ্রিয় গান আমাদের উপহার দিয়েছেন।

 

৪.  কাজী রোজী। ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছেন। যিনি সংসদ সদস্য ছিলেন, তিনি আমাকে নিজে জানিয়েছেন চিকিৎসার খরচ যোগাতে প্রায় পর্যুদস্ত। ঘৃণ্যজীব কাদের মোল্লার অপকর্মের সাক্ষী দেন ট্রাইব্যুনালে। নিকটজন মেহেরুন্নেসার মৃত্যুর দাহ আর দহন নিয়ে সোনালী সকালের স্বপ্নে আজও বিভোর। এত পরিচয়ের পাশাপাশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যে পরিচয়ে সেটি হলো রোজী একজন কবি। তার কলম সৃষ্টি করুক অমর অজয় অক্ষয় আর অবিনাশী কবিতামালা। 

 

৫.  ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পকলার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম আবৃত্তি। সেই আবৃত্তি ছিল অপাংক্তেয়, অচ্ছুত। এবারই আবৃত্তি একুশে পুরস্কারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আর তিনিই হলেন তার পথিকৃত। চলচ্চিত্রে তার শক্তিমত্তা সময়ের প্রশ্নে উত্তীর্ণ। কবিতা কালজয়ী হোক। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কণ্ঠে ধ্বনিত হোক দিন বদলের অমিয় শব্দমালা। 

 

৬. আচ্ছা, কোভিডে ন্যুজ সারা পৃথিবী, সারা বাংলা। শুধু ফ্রন্ট লাইনার বলে হাততালি না দিয়ে অন্তত দু’একজন করোনা শহীদ চিকিৎসককে পুরস্কার দিলে কি ক্ষতি হয়ে যেতো? খুব ক্ষতি?

 

# মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
ক্লাসিফাইড স্পেশালিষ্ট, ফার্মাকোলজি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর