ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৭২

করোনায় বাড়ছে চোখের জটিলতা, আগে থেকে সজাগ থাকুন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:০৩ ৮ মে ২০২১  

করোনার উপসর্গ হিসেবে এখন শুধুই জ্বর, গা-হাত ব্যাথা বা নিঃশ্বাসের সমস্যা নয়। এর সঙ্গে জুড়েছে নানাবিধ চোখের সমস্যা। সচেতন থাকুন। হালকা চোখ ফুলে গেলে বা লাল হলে খেয়াল নিন। হতেই পারে এটাই করোনার প্রথম উপসর্গ। 


এছাড়া ঘরবন্দি দশায় চোখের উপর বাড়ছে চাপ যা মারাত্মক আকারও নিতে পারে। কীভাবে চোখের খেয়াল রাখবেন, জানাচ্ছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার কান্ডার-


১) এখন তো করোনায় চোখের উপর প্রভাব পড়ছে। কী খেয়াল রাখতে হবে চোখ লাল হলে বা ফুলে গেলে?


উত্তর- করোনার ফলে দু'রকমভাবে চোখে সমস্যা হতে পারে। এক, সরাসরি করোনাভাইরাস আক্রমণে চোখের সমস্যা, অন্যটা হলো এই মারণভাইরাস সম্পর্কিত কোনও চোখের জটিলতা। ফলে চোখে পানি পড়া বা লাল হওয়ার মতো সমস্যা হচ্ছে। এর সঙ্গে অবশ্যই থাকছে করোনার অন্যান্য উপসর্গ, যেমন জ্বর বা গা ব্যাথা। 


তখন রোগী যেমন আইসোলেনে থাকছেন, তেমনই চোখ মুছে তার টিস্যু বা রুমাল একেবারে সরিয়ে রাখবেন, যাতে কারও সংস্পর্ষে না আসে। কোনও কিছু চোখের ছোঁয়া না লাগে। এছাড়া অন্যভাবেও চোখে সমস্যা হতে পারে, যা করোনার প্রত্যক্ষ প্রভাবে যা আরও বেশি জটিল এবং ফলও মারাত্মক। যেমন-হঠাৎ করে চোখ কটকট করা বা জ্বালা করা। 


তখন কিন্তু করোনার অন্য কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। সেরে গেলেও রোগের সুদূর প্রভাব হিসেবে এসব সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা বাঞ্ছনীয়। 


এ থেকে বাঁচতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক এবং চোখের লুবরিকেশন দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এই সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যাতে রোগীর চোখের সংস্পর্ষে আসা কোনও কিছুই অন্যরা ব্যবহার না করেন।


২) তাহলে এইরকম চোখের সমস্যা হলেও কি করোনা পরীক্ষা করতে হবে?


উত্তর- সবসময় নয়। হঠাৎ করেই চোখের সমস্যা হলে কয়েকদিন অপেক্ষা করে দেখুন। যদি জ্বর বা অন্য কোনও উপসর্গ না তৈরি হয়, তাহলে পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই।


৩) যাঁরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা বেশিক্ষণ মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেন না। মোশন সিকনেস বা গা গুলিয়ে উঠছে। কেন এমন হচ্ছে? এর থেকে মুক্তি কীভাবে? এটা এড়াতে কী করতে হবে?


উত্তর- করোনায় শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে দুর্বলতাও খুবই বেড়ে যায়। শরীরে শক্তি না থাকলে এমনিতেই চোখের উপর চাপ পড়লে কষ্ট হয়। করোনা আক্রমণের ফলে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হন রোগী। 


তাই শারীরিক ও মানসিক দুইভাবে দুর্বল হওয়ার ফলে কর্মক্ষমতা কমে যায়। চোখ খুলে কিছু পড়ার চেষ্টা বা মোবাইল-ল্যাপটপ স্ক্রিন দেখতে গেলে সরাসরি মাথার উপর চাপ পড়ে। নিউরো সাইকায়েট্রিক প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে। এর ফলে এক ধরণের গা গুলিয়ে ওঠা বা বিরক্তি তৈরি হয়। এই সময়টা তাই চোখের বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।


৪) চোখের ডাক্তারদের অনলাইনে দেখানোটা কিছুটা সমস্যার। মানে চক্ষু চিকিৎসার জন্য প্রথমিক পরীক্ষাতেই তো বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন। তাহলে কীভাবে ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কনসাল্ট করতে হবে?


উত্তর- যদি দেখার ক্ষমতা কমতে থাকে, এমন কিছু সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে প্রথমে অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে কিছু প্রশ্ন করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন চিকিৎসক। অনেক সময় শরীর দুর্বল হলেও এমন সমস্যা বোধ করতে পারেন রোগী। 


তাই প্রাথমিক প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে ডাক্তার বুঝতে পারবেন সমস্যাটা কতটা গুরুতর। সেভাবে চিকিৎসা শুরু হবে। প্রয়োজন হলে তখন চেম্বারে আসতে হবে। তবে এটা ঠিক চোখের কোনও সমস্যা হলে অনলাইন চিকিৎসা খুব বেশি কাজ দেয় না।


৫) চোখের কোনও রকম সমস্যা হলে, প্রাথমিক কী করণীয়?


উত্তর- প্রথমে জানতে হবে করোনায় চোখের কী কী সমস্যা হচ্ছে। সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন। সঙ্গে দেখবেন যেকোনোভাবে চোখের জ্যোতি কমে যাচ্ছে কী না। কারণ এটাই খুব ভয়ঙ্কর হতে পারে পরবর্তীতে। এর থেকে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে। 


বাড়িতে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন ইউভিয়াইটিস বা গ্লোকমা। এগুলো খুবই স্পর্শকাতর। অনেক সময় দেখা গিয়েছে করোনার ফলে চোখের প্রেসার বেড়ে গিয়েছে বা এই ধরণের নানা জটিল সমস্যা হচ্ছে। তখন চিকিৎসক দেখাতেই হবে।


৬) অনেক সময় দেখা যাচ্ছে চোখে ব্লাড ক্লট করছে। এটা কেন হয় এবং এর থেকে প্রতিকার কীভাবে মিলবে?
উত্তর- ব্লাড ক্লট বা চোখে রক্ত জমাট অনেক কারণে হতে পারে। সাধারণভাবে এতে চোখের দেখার সমস্যা হয় না। তবে রেটিনাতে হলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। যদি চোখের ধারে রক্ত জমাট বাঁধে তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন। এরপর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


৭) বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চারিদিক দেখার অবকাশ কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের মধ্যেই ঘুরছে চোখ। এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট চোখের ব্যায়াম বা ঘন ঘন পানির ঝাপটা দিতে হবে?


উত্তর- মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি এখন দূরে সরিয়ে রাখলে চলবে না। বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাসও চলবে। সেক্ষেত্রে মোবাইলে না হয়ে যদিও একটু বড় স্ক্রিনে ক্লাস করতে পারে তাহলে ভালো। যদি বাচ্চাদের চোখে হালকা পাওয়ার থাকে, তাহলেও চশমা পরতে হবে। 


এছাড়া আই লেভেলে ল্যাপটপ রেখে কাজ করা, চোখের থেকে স্ক্রিনের দূরত্ব বাজায় রেখে কাজ করতে হবে। পানির ঝাপটা, মাঝে মাঝে ব্রেক নেওয়া বাঞ্ছনীয়। বড়রা তো ব্যবহার করেনই, ছোটরাও চোখের জন্য ড্রপ ব্যবহার করলে ভালো। 


দূরের দিকে তাকিয়ে থাকা, সম্ভব হলে সবুজ কিছুর দিকে কিছুক্ষণ তাকাতে পারলে ভালো হবে। এছাড়া কনভার্জেন্স এক্সসারসাইজ করা যেতে পারে।


৮) চোখের যত্নের জন্য কিছু বেসিক টিপস?


উত্তর- ভালো খান, নিয়ম করে ঘুমান। দিনে অন্তত এটা হলুদ বা কমলা সবজি বা ফল খেতে হবে। এতে চোখ ভালো থাকবে।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর