ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৬৬

ওড়না ছাই হয়ে বাঁধন খুলে যায়

গায়ে আগুন দেয় নেকাব-হাতমোজা প‌রা ৪জন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪১ ৮ এপ্রিল ২০১৯  

নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা প‌রা চারজন গা‌য়ে আগুন ধ‌রি‌য়ে দেয়। ওই চারজ‌নের একজনের নাম শম্পা। ওড়নাটা ছাই হয়ে যাওয়ার পর হাতের বাঁধন খুলে যায়।

ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান মৃত্যুশয্যায় দেয়া বক্তব্যে (ডাইং ডিক্লারেশন) এ তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, কেন্দ্রে ঢোকার পর একটা সময় তাকে ছা‌দে ডে‌কে নি‌য়ে যাওয়‌া হয়। তি‌নি নেকাব, বোরকা, হাতমোজা প‌রি‌হিত চারজন‌কে দেখ‌তে পান। তাঁ‌দের ম‌ধ্যে মূলত কথা বল‌ছি‌লেন একজন। তি‌নি মামলা প্রত্যাহার ক‌রে নি‌তে ব‌লেন। অধ্যক্ষের বিরু‌দ্ধে অভি‌যোগ অসত্য এ কথা বল‌তে চাপ দেন। মাদ্রাসাছাত্রী এতে অস্বীকৃ‌তি জানা‌লে ওই চারজন ওড়না দি‌য়ে তাঁর হাত বেঁধে ফে‌লেন। তাঁর গ‌া‌য়ে ওঁরা কিছু একটা ছু‌ড়ে দেন। তারপর ব‌লেন, ‘যা এবার পালা।’

গা‌য়ে আগুন লাগা অবস্থা‌তেই প্রাণরক্ষায় তি‌নি দৌড়ে পালান।

চারজ‌নের কেউ কারও নাম উচ্চারণ না কর‌লেও কো‌নো একপর্যা‌য়ে একজন শম্পা ব‌লে একজন‌কে ডাকেন। তি‌নি যে কণ্ঠ শু‌নে‌ছেন, তা নারীকণ্ঠ। ত‌বে মুখ ঢাকা থাকায় কাউকে চিন‌তে পা‌রেন‌নি।

 

ঢাকা মেডিকেল ক‌লেজের বার্ন ও প্লা‌স্টিক সার্জারি ইউনি‌ট সূত্র ত‌থ্যের সত্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছে।

দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী একজন চি‌কিৎস‌কের কা‌ছে বক্তব্য দেন।

মুমূর্ষু রোগী‌দের কাছ থে‌কে এ ধর‌নের বক্তব্য নেয়া হ‌য়ে থা‌কে, যা পরবর্তী‌ সময়ে আদাল‌তে সাক্ষ্য হি‌সে‌বে ব্যবহৃত হ‌য়।

 

ছ‌াত্রীকে উদ্ধৃত ক‌রে সূত্রটি জানা‌চ্ছে, ক‌য়েক বছর ধ‌রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নারী শিক্ষার্থী‌দের হয়রা‌নি ক‌রে আস‌ছেন। তি‌নি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দি‌য়ে দেয়ার প্রলোভন দেখা‌তেন। তাঁর কথায় রা‌জি না হ‌লে তি‌নি হেনস্থা ক‌রতেন। আগে এ বিষ‌য়ে প‌রিবার‌কে না জানা‌লেও গত ২৭ মার্চ তাঁর স‌ঙ্গে অধ্যক্ষ অশোভন আচরণ ক‌রেন। বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী প‌রিবার‌কে জানান, মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থী‌দেরও জানান। অধ্যক্ষের বিরু‌দ্ধে মামলা হবার পর থে‌কে তি‌নি ভাই‌য়ের স‌ঙ্গে মাদ্রাসায় যা‌চ্ছি‌লেন।

কিন্তু ঘটনার দিন তার ভাইকে ভেত‌রে ঢুক‌তে দেয়া হয়‌নি।

 

গেল শনিবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওইদিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এদিকে  ফেনীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের বিচার করা হবে বলে  তার স্বজনদের আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোববার রাতে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে নুসরাতের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন তিনি। 

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরইমধ্যে অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

দীপুমনি বলেন, অপরাধী কেউ ছাড়া পাবে না। ভিকটিমের চিকিৎসা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিষয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার এটা গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

নুসরাতকে দেখে হাসপাতাল ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার করা হবে।