ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬২৭

স্ত্রীর সামনে নৃশংস হত্যাকাণ্ড

রিফাত ফরাজী গ্রেপ্তার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৫৫ ৩ জুলাই ২০১৯  

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।  

আজ বুধবার সকাল ৯ টায় বরগুনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ  জানায় মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগের উপ মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম ও বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।  এ সময় আসামি রিফাত ফরাজীকে উপস্থিত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তারে ৭ দিন ধরে অভিযান অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মঙ্গলবার ভোরে। 

গ্রেফতার রিফাত ফরাজী নিহত নয়ন বন্ডের অন্যতম সহযোগী।

 

গেল  ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ দুর্বৃত্তরা। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিফাত শরীফকে কোপানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে নয়ন ও রিফাত ফরাজীকে রামদা দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে দেখা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া রিফাত ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। রিফাত ফরাজীর ভাই রিশান ফরাজীও এ মামলার আসামি।

 

দুই আপন ভাই একসঙ্গেই সব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকার দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী।

ধানসিঁড়ি সড়কের রিফাত ফরাজী ও রিশান বাড়ির মূল ফটক ও বাসার দরজা তালাবদ্ধ। ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিফাত শরীফ খুন হওয়ার পর থেকে রিফাত ফরাজীদের ঘরের দরজা তালাবদ্ধ ও বাড়ির গেট ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান তারা।

ধানসিঁড়ি সড়কের কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নয়ন বন্ডের ডান হাত ও বাম হাত হিসেবে কাজ করতো এই দুই ভাই। মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাই ছিল তাদের মূল পেশা।

তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই ও ছাত্রদের মেসে ঢুকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রিফাত ফরাজী।

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান চার আসামি যথাক্রমে নয়ন বন্ড (বন্দুকযুদ্ধে নিহত), রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও চন্দনএছাড়া, এই গ্রুপের নিয়মিত সদস্য ছিল আমতলার পাড় এলাকার চন্দন, বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি রোড এলাকার মো. মুসা, কেওড়াবুনিয়া এলাকার কালাম আকনের ছেলে রাব্বি আকন, কলেজিয়েট স্কুল রোড এলাকার মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, কেজি স্কুল এলাকার রায়হান, একই এলাকার মো. হাসান, সোনালীপাড়া এলাকার রিফাত, একই এলাকার অলি ও টিকটক হৃদয়।

 

নয়ন ও রিফাত দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধে জড়িত থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না। বারবার আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়তো তারা। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিফাত ও নয়নের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

নৃশংস ওই ঘটনার পরদিন ২৭ জুন ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রিফাতের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। আসামিরা হলো - সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড (২৫), মো. রিফাত ফরাজী (২৩), রিফাত ফরাজীর ভাই মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)। বাকি পাঁচ থেকে ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

 

এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে রিফাত ফরাজীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দুই আসামি হলো - চন্দন ও মো. হাসান। এছাড়া, সন্দেহভাজন আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো - তানভীর, মো. সাগর, কামরুল হাসান সাইমুন ও মো. নাজমুল হাসান। আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। 

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর