ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৬৪

সময় ব্যবস্থাপনার ৫ টি অব্যর্থ কৌশল

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:৪২ ৯ মার্চ ২০২২  

সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করেনা। তাই সময়ের কাজ সময়ে না হলে অসময় হয়ে যায়, গুণতে হয় অনেক মাশুল। কথায় আছে, সময়ের এক ফোড় আর অসময়ের দশ ফোর। মানুষের জীবন যত বড় সময় ততটাই কম। ছোট্র এই জীবনে সময় ব্যবস্থাপনায় যদি কোনো কমতি থাকে তবে, সময় চলে যাবে কিন্তু লক্ষ্য অর্জন হবেনা। সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার ৫ টি পদ্ধতি সময়ের ব্যবহারে আপনাকে করে তুলবে আরও কৌশলী ও দক্ষ। যেটা অত্যন্ত প্রয়োজন সফল, সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনের জন্য।

 

প্যারেটো নীতি (Pareto Principle)

প্যারেটোর নীতি বলে, যে যেকোনো ফলাফল ক্রিয়ার সমান  হয়না। আপনার ৮০ শতাংশ ফলাফল আসে আপনার ২০ শতাংশ কাজের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ আপনার সারাদিনের কাজের বেশিরভাগ ফলাফলই নির্ভর করে আপনার কাজের অতি সামান্য অংশের উপর। যেমন ভাবে সারা দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে মাত্র কিছু শতাংশ মানুষের উপর। বাকিরা সেই ফলাফল ভোগ করে মাত্র। তাই আপনার সারাদিনে সেই ২০ শতাংশ কাজের অংশটিকে খুঁজে বার করতে হবে। সেই কাজটিকে সবচেয়ে মনোযোগ সহকারে করতে হবে যেটি আপনার আশি শতাংশ ফলাফলের জন্যে দায়ী হবে। বুদ্ধিমান মানুষেরা তাই এই ৮০-২০ এর সূত্র ধরেই স্মার্ট ওয়ার্ক করেন এবং কম পরিশ্রম করে বেশি মুনাফা লাভ করেন। আপনিও আপনার সারাদিনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টুকু কে বেঁধে ফেলুন কোনোরকম বাহ্যিক হস্তক্ষেপ বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়া। যাতে আপনার মূল্যবান সময়ের অনেকটাই আপনি বাঁচাতে পাররেন।

POSEC পদ্ধতি (POSEC Method)

POSEC নামকরণ হয়েছে পাঁচটি ইংরিজি শব্দের আদ্যক্ষর দিয়ে। P - Prioritize, O - Organize, S - Streamline, E - Economize, C - Contribution। এর মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহারের জন্যে প্রথম তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও, শেষের দুটি লম্বা রেসের ঘোড়া হতে গেলে অবশ্যই মাথায় রেখে চলতে হবে। 

Prioritize এর মাধ্যমে আপনি আপনার সারাদিনের কাজ গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে নিন।

Organize এর মাধ্যমে কখন কোন কাজটা করবেন সেটা ঠিক করে নিন। 

Streamline এর মাধ্যমে নিজে না করে কিছু কাজ অন্য কাউকে দিয়েও করানো যায় কিনা এবং সেক্ষেত্রে ফলাফল আরো ভালো হবে কিনা ভেবে ঠিক করে নিন। 

Economize এর মাধ্যমে আপনার যে কাজটি এখন করার কোনো দরকার নেই কিন্তু ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে, বা কখনো করতে হতে পারে সেই সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা করে রাখা যায়। তার জন্যে নতুন কিছু শেখার প্রয়োজন কিনা, তার জন্যে কতটা খরচ এবং সময় লাগতে পারে, সেই সম্পর্কে প্ল্যানিং করে রাখা জরুরী।

Contribution হল সেইসব কাজের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া যেগুলির ফলাফল এই মুহুর্তে হাতেনাতে না পেলেও কিছুদিন পরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পোমোদোরো পদ্ধতি (Pomodoro Method)

এই পদ্ধতিতে আপনাকে সবার আগে একটি কাজ ঠিক করতে হবে যেটি আপনি করতে চান। তার জন্যে ২৫ মিনিটের টাইমার সেট করে কাজে মন দিতে হবে। ২৫ মিনিট হয়ে গেলেই পাঁচ মিনিটের ব্রেক নিতে হবে। এই ব্রেক বা বিশ্রাম কে বলা হয় পোমোদোরো ব্রেক (Pomodoro Break)। এইভাবে চারবার পঁচিশ মিনিট করে কাজ করার পর একটি লম্বা পোমোদোরো ব্রেক নিতে হবে যেটি ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে কাজের মান এবং গতি বৃদ্ধি পায় এবং সহজে হার মেনে নেওয়ার মানসিকতা দূর হয়। 

পোমোদোরো নাম কেন? ইতালিতে টমেটো কে বলা হয় পোমোদোরো। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা ফ্রান্সিস্কো সিরিলো (Francesco Cirillo) তাঁর কলেজ জীবনে এই টাইমারের জন্যে একটি টমেটোর আকারের রান্নার টাইমার ব্যবহার করতেন, তাই এ ব্রেক কে টমেটো ব্রেক বা পোমোদোরো ব্রেক নাম দেন। 

ABC পদ্ধতি (ABC Method)

এই পদ্ধতি ABC এর মত সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে ABC কখনো অক্ষরমালায় একে অপরের আগে পরে আসেনা এবং আমাদের মাথায় সারা জীবনের মত ঢুকে আছে যে আগে A, তারপর B, এবং তারপর C। সেইভাবেই কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী A, B এবং C এর জন্যে কাজগুলিকে ভাগ করে নিতে হবে। 

A হল সেই কাজগুলি যা জরুরী(Must do) এবং এক্ষুণি করতে হবে। 

B হল সেই কাজ যা করা উচিৎ(Should do) কিন্তু একটু পরে করলেও হবে।

C হল সেই কাজ যেগুলি করলে ভালো (Nice to do), কিন্তু বাধ্যতামুলক নয়।

এই সহজ পদ্ধতিটা আমরা সকলেই জানি কিন্তু কাজের সময় মাথায় থাকেনা। তাই আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে এমন কাজে মন দিয়ে ফেলি যার এই মুহুর্তে কোনো প্রয়োজন নেই। তাই কাজের আগে সর্বদা নিজের কাছে একটি খাতা বা নোটবুক রাখবেন, যেখানে কাজগুলিকে ABC এর মধ্যে ভাগ করে দেবেন। কোনো কাজ করতে গিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করবেন, কাজটা কার? A, B নাকি C এর?

পারকিনসনের সূত্র (Parkinson’s Law)

ইতিহাসবিদ এবং লেখক সিরিল নর্থকোট পারকিনসন (Cyril Northcote Parkinson)  এর মতে, স্বভাব অনুযায়ী আমাদের যদি কোনো কাজ করতে দেওয়া হয় এবং তার জন্যে সর্বোচ্চ সময় বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে কাজও সেই বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী চলে। প্রতিটা কাজের প্রাথমিক সময়ে চেষ্টা বেশি থাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে বেঁধে দেওয়া সময় যদি প্রয়োজনের থেকে বেশি হয়ে যায় তাহলে কাজও সেই মত ধীর হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক ঘন্টায় করা যায় এমন কোনো কাজ যদি কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে শেষ করার জন্যে একটা দিন দেওয়া হয়, তবে সেই ব্যক্তি সারাদিন নিয়েই কাজটি করবে। কিন্তু যদি এক ঘন্টা সময় বেঁধে দেওয়া হত, তাহলে এক ঘন্টায় সেই কাজ সম্ভব হত। তাই কাজের যে সময় লাগা উচিত তার বেশি সময় কখনো নেওয়া উচিত নয়। পারকিনসনের এই সূত্র থেকে বেরোনোর উপায় হল, সময় হাতে থাকলেও নিজের কাজকে কঠিন সময়ের মাপকাঠিতে বেঁধে নিতে হবে এবং সময়ের আগে শেষ করার জন্যে নিজেকে পুরস্কার দিতে হবে। তাতে মনও সময়ের আগে কাজ শেষ করায় আনন্দ পাবে এবং নিজের কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

আশা করা যায় সময়ের সঠিক ব্যবহারের এই ৫টি অব্যর্থ পদ্ধতি অনেকটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। মোটামুটি এই কয়েকটা পদ্ধতি মেনে যদি রোজকার জীবনে চলা যায় তাহলে নিজের উন্নতির সাথে সাথে কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি অবধারিত। কারণ মানুষ কখনো সফল হয়ে জন্মায়না। নিজের মধ্যে সাফল্যের জন্যে প্রয়োজনীয় অভ্যেস তৈরী করে। আর মানুষ হল অভ্যাসের দাস। যেমন অভ্যাস তেমনই ফলাফল। তাই নিজের ব্যর্থতা বা আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ার পেছনে অন্যের দোষ না খুঁজে নিজের মধ্যে থাকা অভ্যেস গুলিকে একবার ঝালিয়ে নিন।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর