ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭২৪

অং সান সুচির না জানা কথা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:১০ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

অং সান সূ চী একজন বর্মী রাজনীতিক, কূটনীতিক, এবং লেখিকা যিনি মিয়ানমারের প্রথম ও বর্তমান রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী।

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো তথা অনানুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত।

অং সান সু চি ১৯৪৫ সালের ১৯শে জুন ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন) জন্মগ্রহণ করেন। পিটার পপহ্যামের বর্ণনানুসারে, তিনি রেঙ্গুনের বাইরে হামওয়ে সাউং নামক একটি ছোট গ্রামে জন্ম নেন।

তার বাবা অং সান সেসময় আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং আলাপ-আলোচনা করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের থেকে বার্মাকে স্বাধীন করেন।

কিন্তু ঐ বছরই তিনি বিপক্ষদের গুপ্তহত্যার শিকার হন। সু চি তার মা খিন চি এবং দুই ভাই অং সান লিন ও অং সান ও-এর সাথে রেঙ্গুনে বড় হন। 

তিনি চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন: বর্মী, ইংরেজি, ফরাসী ও জাপানি। ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি থেরবাদী বৌদ্ধ।

সু চির মা খিন চি নবগঠিত বর্মী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৯৬০ সালে তাকে ভারত ও নেপালে বর্মী রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেয়া হয়, সু চিকেও তিনি সাথে নিয়ে যান।

নয়াদিল্লিতে কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরি স্কুলে সু চি পড়াশোনা করেন, পরে ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লেডী শ্রী রাম কলেজ থেকে রাজনীতি বিষয়ে ডিগ্রি পাশ করেন। 

এরপর ১৯৬৭-তে অক্সফোর্ডের সেন্ট হাগস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ. ডিগ্রি নেন; এবং তার তৃতীয় ডিগ্রি এম.এ. অর্জন করেন রাজনীতি বিষয়ে।

১৯৭২ সালের ১লা জুনে সু চি এবং অ্যারিস, ভুটানে বসবাসরত তিব্বতি সংস্কৃতি বিষয়ের পণ্ডিত গবেষক, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

অং সান সু চি প্রথম নারী হিসেবে তিনি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী, বিদ্যুৎশক্তি ও ক্ষমতা বিষয়ক মন্ত্রী, এবং শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট তিন চিওয়ের কেবিনেটে কাজ করেন; আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মিয়ানমারের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তথা নিম্নকক্ষে কৌমু টাউনশিপের এমপি ছিলেন।

আধুনিক মিয়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চী এর কন্যা সূ চী এর জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে।

১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন।

১৯৭২ সালে মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে হয়। 

১৯৮৮-র গণ আন্দোলনের সময় সূ চী সবার নজর কাড়েন এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সাধারণ সম্পাদক হন।সেসময় সদ্যগঠিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক জান্তার বিরোধী অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। 

১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়।

এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সূ চী-কে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। 

১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন।

সু চির দল ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়।

২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। 

২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অব দি ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭% সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। 

সূ চী-র প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান।

গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। 

এছাড়াও ২০২০ সালে মিয়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতার প্রতি অভিযোগ আনে দেশটির সামরিক বাহিনী তাতমাদও।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতা গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর