ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১১৫০

পুড়ে ছাই হচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’

আমাজনের আগুন কতটা ভয়াবহ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:০৬ ২৪ আগস্ট ২০১৯  

আগুনে পুড়ে উজাড় হচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত ব্রাজিলের আমাজন। মাইলের পর মাইল পুড়ে ছাই হচ্ছে। ধীরে ধীরে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে এ আগুন। বলা হচ্ছে, গত এক দশকের মধ্যে সেখানে লাগা সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল এটি।
এ আগুনে ব্রাজিলের উত্তরের রাজ্য রোরাইমা, একরে, রনডোনিয়া এবং আমাজনাস ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি মাতো গ্রোসো ডো সুল এলাকা গ্রাস করেছে।
তবে ভয়াবহ এ আগুনের যেসব ছবি হ্যাশট্যাগ #PrayforAmazonia হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এর সবগুলো এবারের নয়। অনেক ছবি কয়েক দশকের পুরনো। আবার কোন কোনটি ব্রাজিলেরই নয়।
তাহলে আমাজনে আসলে কী হচ্ছে? আর কতটা ভয়াবহ এর আগুন?
চলতি বছরে আমাজানে রেকর্ড সংখ্যক আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার(ইনপে) স্যাটেলাইট ডেটা তা তুলে ধরেছে। এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের এসময়ের তুলনায় ২০১৯ সালে আমাজনে আগুন লাগার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ব্রাজিলের আমাজনে রেকর্ড সংখ্যক ৭৫ হাজার বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক আগুনের ঘটনা। ২০১৮ সালের এ সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার।   
আমাজনে আগুন লাগছে কেন?

শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ আমাজনে আগুন লাগা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করে। প্রাকৃতিকভাবেই আগুনের ঘটনা ঘটে এখানে, যেমন বজ্রপাত। এছাড়া কৃষক ও রাখালদের বন উজাড় করার কারণে আগুনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
ইনপে জানিয়েছে, সম্প্রতি আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্রমবর্ধমান বন উজাড়ের ঘটনা সরাসরি জড়িত। বন উজাড়ের পরিসংখ্যান তুলে না ধরলেও সংস্থাটি জানিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় বন উজাড়ের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে বেড়েছে আগুনের ঘটনা।
স্যাটেলাইট ডেটায় বনের উজাড় হওয়া স্থান চিহ্নিত করে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কেবল চলতি বছরের জুলাইয়ে ১০ হাজারের বেশি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বন উজাড়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭৮ শতাংশ। 
আমাজনের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোন কোন অঞ্চল?
আগুনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চল। গত চার বছরে দেশটির রোরাইমা, একরে এবং আমাজনাস অঞ্চলে আগুন লাগার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
রোরাইমায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪১ শতাংশ, একরেতে ১৩৮ শতাংশ, রনডোনিয়াতে ১১৫ শতাংশ, আমাজনাসে ৮১ শতাংশ এবং দক্ষিণে মাতো গ্রোসো ডো সুল রাজ্যে বেড়েছে ১১৪ শতাংশ।
এর মধ্যে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় রাজ্য আমাজনাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শুধু ব্রাজিল নয়, ৭ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত আমাজন বেসিনের আরও বেশকিছু দেশ এ বছরের ব্যাপক দাবানলের আগুনের কবলে পড়েছে।
ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক আগুনের ঘটনা ঘটেছে ভেনেজুয়েলায়। সেখানে দাবানল হয়েছে ২৬ হাজারটি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলিভিয়া যেখানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ১৭ হাজারের বেশি।
বলিভিয়া সরকার দেশের পূর্বাঞ্চলে আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করার জন্য একটি বিমানের মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ভাড়া করেছে। প্রায় ছয় বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বলিভিয়ার বনাঞ্চল।
ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত জরুরিকালীন কর্মী। আগুনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পশু-পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করা হচ্ছে। 
আগুন থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস:
আগুন থেকে কুণ্ডলি পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়া আমাজনের পুরো এলাকাজুড়ে এবং আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের (ক্যামস্) তথ্য অনুযায়ী, এ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে আটলান্টিকের উপকূল পর্যন্ত। এমনকি ২০০০ মাইলেরও (৩,২০০ কিমি) বেশি দূরে সাও পাওলোর আকাশ এ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে।
এ আগুন থেকে ব্যাপক পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে, যার পরিমাণ এ বছর ২২৮ মেগাটনের সমপরিমাণ দাঁড়িয়েছে। ক্যামস্ বলছে, এ পরিমাণ ২০১০ এর পর সবচেয়ে বেশি।
এ ধোঁয়া থেকে কার্বন মনোক্সাইডও নির্গত হচ্ছে। কাঠ পোড়ালে সচরাচর এ গ্যাস নির্গত হয়। ক্যামস্ যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, খুবই চড়া মাত্রায় বিষাক্ত এ গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ছাড়িয়ে এখন আরও দূরে ছড়িয়ে পড়ছে।
আমাজন অরণ্যাঞ্চলে ৩০ লাখ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। সেখানে বসবাস করেন ১০ লাখ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এ বনাঞ্চল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বিশাল অরণ্যাঞ্চলের গাছপালা প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ান টন কার্বন শুষে নিয়ে বিশ্বের উষ্ণায়ন মোকাবেলা করে।
কিন্তু গাছ যখন কাটা হয়, অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়, তখন যে কার্বন গাছের মধ্যে সঞ্চিত থাকে তা বায়ুমণ্ডলে আবার মিশে যায়। উষ্ণমণ্ডলীয় এসব বৃক্ষের কার্বন শুষে নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।