ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৬৮১

এখনই দরকার ‘কমন স্পেস’ ব্যবহারে বিশেষ আইন

মৌমিতা সরকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৩৯ ২৫ অক্টোবর ২০১৯  

এখন বর্তমানে যে অবস্থা, দেশে অতিদ্রুত  ‘ফ্ল্যাট মালিক এবং নগর ব্যবস্থা’ বিশেষ  আইন করা উচিত। একটা ভবনে ফ্ল্যাট কিনলেই আপনার কি কি অধিকার বর্তায়, আর কি কি বর্তায় না - এ ব্যাপারে সুসম্পূর্ণ লিখিত আইন দরকার। জনস্বার্থে তার ব্যাপক প্রচারও দরকার। এছাড়া এই নগরায়নের যুগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে বসবাস সম্ভব হবে না। এবং তা হচ্ছেও না। 
আমার জানা মতে এমন কোন বিল্ডিং বা হাউজিং প্রজেক্ট নেই যেখানে এই কমন স্পেসগুলা ব্যবহার এবং উপভোগ করা নিয়ে কোন ঝামেলা হয়নি। হোক সেটা ছাদে গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ছাদে যাওয়া, লিফট ব্যবহার করা থেকে সিঁড়িতে বসা, লবিতে গাছ অথবা শোকেস রাখা, গ্যারেজে গাড়ি ঢুকানো কিংবা গাড়ি রাখা। মোট কথা কমন স্পেস ব্যবহার নিয়ে কমন সেন্স খুবই কম। 
এখানে ক্ষেত্রবিশেষে ল্যান্ডওনারের অসামঞ্জস্যপূর্ণ চাহিদা অথবা প্রভাব বিস্তারের কথা আর নাই বললাম। অতি সম্প্রতি সাভারে যে মহিলাকে আটক করা হলো তথ্যচিত্রের প্রমাণ সাপেক্ষে আমার জানা মতে এর চেয়েও বেশি অন্যায় - নির্যাতন এবং অঘটন ঘটে থাকে। বাস্তবে তা খুবই কম সামনে আসে। এক শ্রেণীর মানুষই বাসাকে "শান্তির নীড়" মনে করে খুব কমই ঝামেলায় জড়াতে চান। তাই এর পুলিশ রিপোর্টিংও হয় খুব কম। 
আবার উল্টোদিকে খুব ছোট ছোট বিষয়াদি নিয়েও হাজার হাজার মানুষকে মামলা করতে ছুটে যেতে দেখা যায় কেবলমাত্র ইগো প্রটেকশনের কারণে। এসব মামলা আশার আলো খুব কমই দেখে এবং বছরের পর বছর ঝুলে থেকে কেবলমাত্র ফ্ল্যাটবাসিন্দাদের মধ্যে তিক্ততার জন্ম দেয়। আর এরকম দুই যমের কোন্দলের মাঝে পড়ে মধ্যবর্তিনীরা কেবল চ্াপা খায় আর কিছু সুবিধাবাদী উস্কে দেয়ার তালে কেবল সুবিধা ভোগ করে। 
মনে রাখতে হবে, এখানে কিন্তু সব ধরণের লোকেরই বাস এবং এটা সম্পূর্ণ মানুষের পূর্ববর্তী সংস্কার, আচার এবং শিক্ষার ভিত্তিতে নির্ভর করে। 
বর্তমানে শহরের একই বিল্ডিংয়ে যেমন সব শ্রেণী এবং পেশার মানুষেরই ডাইভার্সিটি দেখা যাচ্ছে পূর্বে এমনটা দেখা যেত না। এমতাবস্থায় আর কয়েকদিন পরে যদি সঠিক নিয়ম প্রণয়ন-ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে এই পারিবারিক রেশারেশি আর প্রভাব খাটানোর অহমিকায় থানায় ফাইল বাড়তে থাকবে, আর লোকজনকে কোর্টের চক্করই কাটতে হবে, ব্যাস্। আর এইসব কোন্দল-ফ্যাসাদে যে মানহানি তদুপরি প্রাণহানিও ঘটা বাদ থাকবে না তা বলা বাহুল্য। মালামালসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের কথা বাদই রাখলাম। এইসব বাড়তে বাড়তে নাগরিক জীবন হয়ে উঠবে আরো অসহ্য।
তাই এখনই সর্বাগ্রে দরকার – 
১. লিফট, লবি, সিড়ি, ছাদ, গ্যারেজ তথা অন্যান্য কমন স্পেসের ওপর প্রত্যেক ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া অথবা জমির মালিকের কতটুকু অধিকার থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয়া এবং কে কতটুকু অধিকার কিভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে নীতিমালা তৈরী করে দেয়া। তা লংঘনে কি কি শাস্তি তথা জরিমানার পরিমাণসহ উল্লেখ করে দেয়া।
২. এর বিপরীতে গ্রাম সরকারের মত নগরপিতার অধীনে প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশনেই উচিত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিশেষ বেঞ্চ তৈরী করা, যেখানে এই সংক্রান্ত বিবাদ-গন্ডগোলের বিচার দেওয়া তথা সালিশ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন সম্পূর্ণটা সমাধা করা।
৩.প্রত্যেক বিল্ডিংয়েই কমিটির নামে যে একটা "উপহাস" আছে তা যে আসলে কতটা কাজের তা জানতেও সার্ভে করা এবং কমিটির দায়িত্ব পালন সম্ভব না হলে তাকে সাহায্য করা অথবা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তিতে কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা তথা প্রয়োজনে সাজা দেয়ারও ব্যবস্থা করা।
যে ভিডিওটির জন্য সাভারের মহিলাটিকে গাছ কাটার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় তা যে কেবলইমাত্র ফেসবুক শেয়ার আর সাপোর্টের ভিত্তিতে, এ নিয়ে কোন যুক্তিতর্ক থাকার কথা না। এমনটাও অনেক ক্ষেত্রে হয় যেখানে ফোনে ছবি তুলতে গেলেও ফোন আছাড় মেরে ভেঙ্গে দেয়ার আশংকা থাকে। যদি এক্ষেত্রেও তাই হত তাহলে কিন্তু আর এসব বিচারের আশাও করা যেত না। কিন্তু এইটাও মনে রাখা উচিত অপরাধটা উনি নিজের হাতে করলেও সেখানে বিল্ডিং কমিটির সাপোর্ট ছিল। যা তাকে সাহস আর উৎসাহ যোগাতে কমতি রাখেনি এবং সেটি ছিল তার খুঁটির জোড়। তাই এই একই দোষে তারাও দুষ্ট। তাদের সাজা দেয়া সম্ভব হবে কি? যদি কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকত এবং জনগন তা নিয়ে সচেতন থাকত তবে। সঠিক বিচার করতে গিয়ে ভুল বিচার পিছু না ছাড়লে সামগ্রিক আইনের প্রণয়ন এবং পরিবর্ধন ছাড়া উপায় নাই।

ভুলে গেলে চলবে না এসব ঘটনা বাঙালির আজকের কথা নয়, যখন গ্রামে গ্রামে ক্ষেতের আইল ভাঙ্গা নিয়ে লোকে লাঠি, কুড়াল, কিরিচ-চাপাতি- দা নিয়ে মারামারি করত। এমন কাউকেই হয়ত পাওয়া যাবে না যে গ্রামে থেকেছে অথচ এই দৃশ্য নিজে প্রত্যক্ষ করেনি। সেই লোকেরাই এখন নগরায়নের যুগে একটু ফর্ম আর শেপ চেঞ্জ করে একই কাজটাই বংশ পরাম্পরায় চালিয়ে যাচ্ছে, শুধু সেটা কমন স্পেসগুলো নিয়ে। এদের বুঝতে এখনো অনেক দেরি যে কমন স্পেস কাকে বলে এবং সেটা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। এতে করে গুটিকতক সুনাগরিকের অবস্থা শোচনীয়। কারণ এদের অধিকাংশের মানসিকতা এখনো, "যুক্তি মানি, বিচার বুঝি কিন্তু তালিগাছটা আমার" - এ আটকে আছে। এদের জন্য আগে গ্রাম পঞ্চায়েতেরা দুটো কথা বলে, করে কম্মে খেতে পারত। এখন গ্রাম থেকে ওই গোষ্ঠী এসে সরাসরি শহরের সুনাগরিকের পদপ্রাপ্ত হচ্ছে, কিন্তু সুনাগরিক হিসেবে তৈরী হওয়ার প্রশিক্ষণ তাদের নাই। তাই এখন খুবই প্রয়োজন এই নগরায়নের যুগে নগরে থাকার নীতিমালার উন্নতি করা। 
মনে রাখা দরকার প্রাচীন নাগরিক শব্দটি কিন্তু এমন একটি সংজ্ঞা থেকেই এসেছে যা বিশিষ্ট গুণাবলি সম্পন্ন নগরবাসীকে বোঝায়। এই গুণাবলি যাদের ছিল কেবল তাদেরই নাগরিক বলে ধরা হত। নচেৎ নয়। যাকে এখন আমরা সুগারকোটেড করে  "সুনাগরিক"  বলে থাকি। অথচ কন্সেপ্টটা কিন্তু একই। আমরা নাগরিক করতে পেরেছি ভুরি ভুরি, অথচ সুনাগরিক গড়তে পেরেছি কি? তাই সুনাগরিক গড়তে চাইলে সুগঠিত আইন চাই, যার বাস্তবায়নও সুলভ্য এবং কম ব্যয়সাপেক্ষ।