ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৮০৭

কোকোর কত গুণ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:১৩ ২৯ জুন ২০২১  

কোকো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান উপত্যকার উদ্ভিদ। মধ্য আমেরিকায়ও চাষ হয় এ ফল। তারপর আফ্রিকার ঘানা, আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন এ ফল চাষ শুরু করে। এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি ও বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের ও ওড়িশায় কোকো ফলের চাষ হচ্ছে। 


কোকো গাছে ফুল ও ফল ধরতে সময় লাগে তিন-চার বছর। ফুল ফলে পরিণত হয় ছয় মাসে। প্রতিটি কোকো ফলের পাঁচটি সারিতে ৩০-৪০টি বীজ থাকে। বীজ কলাপাতায় পেঁচিয়ে গজানো হয়, তারপর বীজ সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। শুকানো কোকো বীজ সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে শাঁস পাওয়া যায়, যাকে বলে কোকো বীন। 


এই কোকো বিন থেকে অতি মূলবান কোকো গুঁড়া বা ডাস্ট (পাউডার) তৈরি হয়। কোকো বিনের গুঁড়াই কোকো পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। কোকো ডাস্ট দিয়ে উৎকৃষ্টমানের চকোলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনী সামগ্রী ও পানীয় তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, ক্যাডবেরির চকোলেট তৈরি হয় কোকো ডাস্ট দিয়ে।

প্রাকৃতিক কোকো পাউডারের প্রধান উপকরণ হলো ফ্লেবনোওড ক্যাটাচিন এবং ইপেক্টিন। শরীরের মধ্যে এই পদার্থগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমূহের কার্যকরী সঞ্চালন করে। তারা অক্সিডেনটিভ প্রসেসগুলো এবং কোষগুলোর পক্বতা হ্রাস করে। 


পাশাপাশি এই পদার্থ রক্ত সঞ্চালন এবং মেমোরি উন্নতি, চাপ স্বাভাবিক, ফ্লেভোনিয়েড, কোকো পাউডারের শুকনো ফরমের কারণে রক্ত শর্করাতে বিপজ্জনক উজ্জ্বলতা দেখা দেয় না, যার ফলে ডায়বেটিক চিনি ছাড়া কোকো পাইডারের ওপর ভিত্তি করে একটি পানীয় ব্যবহার করা যায়।


ব্রোচিয়ার হাঁপানি রোগীদের জন্য, কোকো পাউডার থিওফিলিন এবং জ্যান্থাইনের সামগ্রীতে দরকারী। এই সক্রিয় পদার্থের একটি এন্টিসপাসমোডিক প্রভাব আছে এবং প্যাথলজিক্যালি সংকোচিত ব্রোস্কাই সিথি, হাঁপানি, আঘাতে প্রতিরোধ এবং শ্বাস সহজ তৈরি করে। 


কোকো পাউডারের অন্য উপাদান হলো ফেনিলেথিল্যামাইন যার কারণে ক্লান্তি ও বিষণ্নতা থেকে রোগীরা মুক্তি পায়। এর অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছে যে, কোকো পাউডারের উৎপাদন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে দমন করে। 


যা নিঃসন্দেহে ক্যানসার চিকিত্সার জন্য একটি মূল্যবান আবিষ্কার। কোকো পাউডার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, পেশি এবং টিস্যু সমৃদ্ধ করে শরীরকে ক্ষতিকারক বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং কোকো পাউডারের পানীয় মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।


আমরা অনেকে জানি কোকো বিদেশি ফল। তবে একেবারেই নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। সিসিডিবি হোপ সেন্টার ছাড়াও আমাদের দেশেও আছে দুই চারটি গাছ। কোকো গাছের চারা তৈরির জন্য পরিপক্ব ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পরপরই সাধারণ মাটির বেডে চারা তৈরি করতে হবে। 


চারার বয়স একমাস হলেই নির্দিষ্ট জমিতে কোকো চারা রোপণ করা যাবে। বীজ সংগ্রহের পর নরমাল তাপমাত্রায় বেশি দিন বীজ রাখলে বীজ অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা হারিয়ে যায়। 


কোকো চির সবুজ গাছ, দেখতে ঝোপাল, ৭ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কোকো গাছ এমন একটি জায়গায় লাগানো দরকার যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে না। সাথী ফসল হিসেবে কোকো গাছ লাগানো যেতে পারে। 


দেশে প্রতি বছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২ লাখ টন কোকো ফল আমদানি করা হয় যার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে কোকো গাছ আবাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিয়ে এখনো কেউ ভাবছেন না। 


কোকো গাছের চাষ করলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও অনায়াসেই একটা স্থান করে নিতে পারব। কারণ বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু নিরক্ষীয় ও উপনিরক্ষীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। কোকো গাছের জন্য রেইনফরেস্ট সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। 


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শফিউল্লাহ বেতছড়ি উপজেলায় তার নিজস্ব উদ্যোগে ১০০টি কোকো গাছ লাগিয়েছেন। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি কোকো গাছ আছে। এসব গাছ নীরবে সফলভাবে ফুল ও ফল দিয়ে যাচ্ছে। সিসিডিবি হোপ সেন্টারেও অতিসম্প্রতি একটি কোকো গাছে অভাবনীয় কোকো ফল ধরেছে।
 

কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু (রেইনফরেস্ট) কোকো চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। ছাদ বাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়। কোকো গাছ ছাঁটাই করে গাছকে ছোট করে রাখা যায় এবং বড় বড় ছায়াবীথির নিচে এদের শ্রীবৃদ্ধি ভালো হয়। 


কোকো ফল রক্তচাপ কমায়। রক্তচাপকে প্রভাবিত করে। এটি সুখের উৎস। কোকো ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ। একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ প্রতিরোধ করে। কাশি কমায়। হার্টের জন্য ভালো। মস্তিষ্কের উন্নয়ন করে। হাড় ও দাঁত মজবুত করে। কোলেস্টেরল কমায়। 


ডায়বেটিস কমায়। স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন নিশ্চিত করে। ত্বক ভালো থাকে। অ্যান্টিডিপ্রেসন্টের প্রভাব রয়েছে। নিয়মিত ঘুম হয়। এটি জ্বালানি ডেটা। দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দূর করে। রক্ত পরিষ্কার করে। ওজন হ্রাস করে। হাঁপানি কমায়। স্ট্রেস কমায়। শর্করা বজায় রাখে। পুনরুদ্বারকে সহজ করে। 


মুটিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। হার্ট ভালো রাখে। ক্যানসার প্রতিরোধক। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো। কপার ঘাটতি কমায়। রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। কোকো দিয়ে ওষুধ ও প্রসাধনী তৈরি হয়। শ্বাসকষ্টের উপকার হয়। হূদেরাগে ভীষণ উপকারী। ক্লান্তিও দূর করে।
 

এ ফলের বীজে থাকে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে। কোকো পাউডার দিয়ে তৈরি একটি পানীয় পুরোপুরি টোন টোন করে এবং দ্রুত সম্পৃক্ত হয়। এটিকে কেবল ডায়েডে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারাও মাতাল হতে পারে, কেবল এক গ্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। 


কোকো চকোলেট যার মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি কোকো রয়েছে, এটিও দরকারী। এটি রক্ত নালিগুলোতে কেবল উপকারী প্রভাব ফেলে না, এটি একটি দুর্দান্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুভব করা ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি খাবারে যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

লেখক: কোঅর্ডিনেটর, অ্যাগ্রিকালচার,
সিড অ্যান্ড বায়োচার প্রোগ্রাম, সিসিডিবি