ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৪১৫

ঢাকার শাহবাগের মালিক ছিলেন নবাব আবদুল গনি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪২ ২১ জানুয়ারি ২০২১  

নবাব আবদুল গনি (১৮৩০- ১৮৯৬) ঢাকার বড় জমিদারদের মধ্যে অন্যতম। যিনি উনিশ শতকের শেষার্ধে পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ঢাকার জমিদার নবাব খাজা আহসানউল্লাহ্‌ ছিলেন তার পুত্র এবং নবাব সলিমুল্লাহ ছিলেন নাতি।

 

এ নবাব পরিবারের সদস্যরা আজীবন ঢাকাতেই বাস করেছেন এবং এখানেই তারা পরলোকগমন করেছিলেন। নবাব আবদুল গনি পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মিরী। এই পরিবার ঢাকাবাসীর কাছে 'নবাব পরিবার' ও 'খাজা পরিবার' হিসেবে পরিচিত ছিল।

 

জীবনকাল

আবদুল গনির জন্ম ১৮৩০ সালে। তাকে নবাব উপাধিতে ভূষিত এবং তা বংশানুক্রমে ব্যবহার করার অধিকার দিয়েছিলেন তৎকালীন বৃটিশ সরকার। তার জমিদারি এবং বৃটিশ সরকারের সঙ্গে সু-সসম্পর্ক তাকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছিল। ওর বাসভবন আহসান মঞ্জিলে দরবার ছিল, যেখান থেকে তিনি পঞ্চায়েত এর মধ্যমে জমিদারির প্রজাদের সহ ঢাকার মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। 

 

আবদুল গনি বর্তমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আদি ছাত্রদের একজন। তার সহপাঠীদের মধ্যে, ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজসুন্দর মিত্র, জনিদার নিকি পোগজ, জমিদার মৌলভী আব্দুল আলী ছিলেন অন্যতম। 

 

আবদুল গনিকে মাত্র ১৮ বয়সে পরিবারের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল। ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন মাত্র সাত বছর বয়সে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ইংরেজদের অর্থ, হাতি, ঘোড়া, নৌকা সবকিছু দিয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন। সেজন্য বাংলার শাসক হ্যালিডের রিপোর্টে গনি মিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। 

 

১৮৬০ সালে ঢাকায় মুসলমান শিয়া-সুন্নীদের দাঙ্গা যখন ইংরেজ সরকার থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল, তখন নবাব আবদুল গনি নিজের চেষ্টায় তিনদিনের মধ্যে ঢাকা শহরকে শান্ত করেছিলেন। এজন্য সরকার তাকে সি.এস.আই (কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অব দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। 

 

১৮৬৭ সালে ভাইসরয় আবদুল গনিকে আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। ১৮৭৫ সালে তাকে বংশানুক্রমিক'নবাব' উপাধি দেওয়া হয়।  ১৮৬৮ সালে কে.সি.এস.আই (কিং কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অব দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধি লাভ করেন।

 

ঢাকা শহরে নবাব আবদুল গনির প্রভাব প্রতিপত্তের প্রতীক ছিল আলী মিয়ার কেনা রংমহল। যা বর্তমানে 'আহসান মঞ্জিল' নামে পরিচিত। তিনি বাড়ীটিকে মেরামত করে ছেলে আসহানউল্লাহ্‌ এর নামে নামকরণ করেন।  বাড়ীটি ঢাকাবাসীর কাছে 'নবাব বাড়ী' হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। 

 

ঢাকা শহরের শাহবাগ, বেগুনবাড়ীসহ অনেকাংশেরই মালিক ছিলেন নবাব আবদুল গনি। তিনি বেগুনবাড়ীতে চা বাগান করেছিলেন। বর্তমান রাজধানীতে পেশাদারী ঘোড়দৌড় শুরু করেছিলেন বলে অনেকের মতে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানও নাকি তার সম্পত্তি ছিল। তখন ঘোড়দৌড় শহুরে বিনোদন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

 

নবাব আবদুল গনিই ঢাকা শহরে প্রথম বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন।১৮৭৯ সালে তার কে.সি.এস.আই উপাধি পাওয়া এবং প্রিন্স অফওয়েলসের সুস্থ হয়ে ওঠা উপলক্ষে সরকারকে ৫০ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তখন একটি কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঢাকাবাসীর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে।

 

নবাব আবদুল গনি আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই প্রকল্পে। ব্যক্তিগতজীবনে তিনি দুইবার বিয়ে করেছিলেন। তার সন্তানাদির সংখ্যা ছিল ছয়জন। ১৮৭৭ সালে খাজা পরিবারের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন পুত্র আহসান উল্লাহর উপর।  ১৮৯৬ সালে যেদিন গনি পরলোকগমন করেন, সেদিন ঢাকার সব স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ছিল।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর