ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৯৯

ভূমিকম্পে নিহত ৫ হাজার

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে তুরস্ক-সিরিয়া

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:৪৮ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫ হাজার। ব্যাপক বিপর্যয়ে  ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ প্রচেষ্টা। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় এমন হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে।

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর আন্তাকিয়ায় ১০ তলা একটি ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জরুরি কর্মীদের উদ্ধার কাজ চালাতে দেখেছেন রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।


শহরটিতে বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানিও নেই। এরমধ্যে বৃষ্টি পড়তে শুরু করায় তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে যায়।সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে।   

 

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলো দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে।

 

১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে সিরিয়া আগে থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, এখন ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

 

বিবিসি জানাচ্ছে, প্রথম ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই নিহতের সংখ্যা ২৯০০ ছাড়িয়ে গেছে আর আহত ১৫ হাজারেরও বেশি। প্রতিবেশী সিরিয়া জানিয়েছে, তাদের এখানে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়িয়েছে।

 

দুই দেশ মিলিয়ে কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া লোকজনের জীবন রক্ষার জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছেন উদ্ধারকারীরা। ৮৪ বছরের মধ্যে এটাকে তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান। ১৯৩৯ সালে তুরস্কের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এরজিনকানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

 

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলোজিক্যাল সার্ভের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২১ সালের অগাস্টের পর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল এটি। ভয়াবহ এই দুর্যোগের পর আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে তুরস্ক। এখন পর্যন্ত ৪৫টি দেশ তুরস্ককে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।


বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর একটিতে তুরস্কের অবস্থান। ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’ এর অবস্থান এই অঞ্চলে। তুরস্কের দক্ষিণপূর্ব সীমান্তের দক্ষিণপশ্চিম থেকে উত্তরপশ্চিম বরাবর এই ফল্ট ছড়িয়ে আছে। ভূমিকম্পবিদরা তুরস্কের এই ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’কে অনেক আগেই ‘খুব বিপজ্জনক’ বলে সতর্ক করেছিলেন।

 

তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের বাসিন্দা মেলিসা বিবিসিকে বলেন, “আজ যা হয়েছে, তেমন অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে প্রথম। আমরা ভেবেছিলাম কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে।” সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাস।

 

ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। প্রায় দুই মিনিট ধরে প্রচণ্ড কম্পন অনুভূত হয় বলে জানিয়েছেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা।যুক্তরাষ্ট্রের জিওলোজিক্যাল সার্ভের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২১ সালের অগাস্টের পর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল এটি।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর