ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৫৫

রওশন - কাদের, কে হবেন বিরোধী নেতা?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১৪ ৩ জানুয়ারি ২০১৯  

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। এই ২৮৮ আসনের মধ্যে মহাজোটের অন্যতম শরিকদল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২ টি আসন। যা এই নির্বাচনে ২য় বৃহত্তম নির্বাচনী ফলাফল। এই ফলাফলকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কে হবেন বিরোধী নেতা? 

দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতাই এ পদে বসতে যাচ্ছেন। এটা তো সহজ হিসাবের কথা। তবে হিসাবটা একটু জটিল। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতার পদে তার ভাই জিএম কাদেরকে চান। তবে এরশাদপত্নী বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও এ পদের দাবিদার। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি পেয়েছে মাত্র ৫টি আসন। বিএনপিকে ছাপিয়ে ২২ আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে জাতীয় পার্টি। দলটি সরকারে অংশ নেবে, নাকি বিরোধী দলে থাকবে- আজ শপথ শেষে সংসদীয় দলের সভায় সে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।

তবে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত এমপির অধিকাংশই দশম সংসদের মতো এবারও মন্ত্রিসভা ও বিরোধী দলে দ্বৈত ভূমিকায় থাকতে চান। গতকাল বুধবার দলের এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের যৌথসভায় এ মতামত দেন তারা। 

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩৪ আসন পেয়েছিল নির্বাচন বর্জন করা এরশাদের জাতীয় পার্টি। এবার আসন কমেছে ১২টি। ২২ আসন পেয়ে দলটি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে পারবে কি-না সে বিতর্কও রয়েছে। তবে আইনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্‌দীন মালিক। 

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ২৯৩ আসন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র, ন্যাপ ও জাসদ পায় বাকি সাত আসন। বিরোধী সাত এমপি আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা নির্বাচিত করেন। তাকে বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা দিতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন তারা। আতাউর রহমানকে বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা দিতে আপত্তি করেছিলেন সেই সময়কার সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার যুক্তি ছিল- বিরোধী দল গঠনে কমপক্ষে ২৫ আসন পেতে হবে। তিনি বিরোধী সাত এমপিকে 'বিরোধী সংসদীয় গ্রুপ' হিসেবে গণ্য করতে বলেন। প্রথম ও স্বল্প মেয়াদের ষষ্ঠ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ শূন্য ছিল।

এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের একতরফা নির্বাচনে ১৯ আসন পেয়েছিল 'সম্মিলিত বিরোধী দল' নামের ৭২ দলের জোট। জোটের প্রধান আ স ম আবদুর রব বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা ছিল ১৯-এর বেশি, তাই বিরোধী দল গঠনে বাধা নেই বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। 

প্রতিবেশি দেশ ভারতের সংবিধানে বিরোধী দল হতে লোকসভার মোট আসনের অনূ্যন ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫৫টি আসনে জয়ী হতে হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে ৪৪ আসন পাওয়া কংগ্রেস এ কারণে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পায়নি। 

বাংলাদেশের সংবিধানে সংখ্যার বাধা না থাকায় জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হতে বাধা নেই। তবে কে হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না জাতীয় পার্টির নেতারা। এরশাদ গত মঙ্গলবার 'উইল' করেছেন, তার অবর্তমানে জিএম কাদেরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এ থেকে স্পষ্ট- নিজের ছোট ভাইকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে চান এরশাদ। 

এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, জিএম কাদেরকে উত্তারাধিকারী মনোনীত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা পদে জিএম কাদেরকেই চাইছেন এরশাদ। 


মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। সংসদীয় দলের সদস্যরা মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তার নির্ধারণ করবেন।