ঢাকা, ০৭ জুলাই সোমবার, ২০২৫ || ২২ আষাঢ় ১৪৩২
good-food
১৪২১

মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন গ্রামের ঘ্রাণ তাড়া করে এখনো

রাশিদ পলাশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:২৩ ২৩ অক্টোবর ২০২০  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম রাধাকান্তপুর। আমার গ্রাম, আমার জন্মস্থান। দুই দিকে নদী 'পদ্মা' ও 'পাগলা'। সীমান্তের গ্রাম হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের একটা বড় অংশের মানুষের পেশা ছিল চোরাকারবারি। গ্রামের একপাশে বিডিআর ক্যাম্প। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে তখন আমরা তাদেরকে বুঝতাম। 

 

থানা অনেক দূরে হওয়ায় এ অঞ্চলের ভালো-মন্দ দেখভাল করতো বিডিআর। প্রতিবছর ধান কাটা শেষ হলে গ্রামের যুবকেরা মিলে যাত্রাপালা আয়োজন করতো। প্রতি সন্ধ্যায় রিহার্সেল হতো। মাসব্যাপী হতো যাত্রাপালা। গুনাই বিবি, কাসেম মালার প্রেম, আলাল দুলালের কষ্ট বুকে নিয়ে রোজ রাতে ঘুমাতে যেতাম আমরা। 

 

কেউ কেউ এত ভালো অভিনয় করতো যে, তার আসল নাম ভুলে চরিত্রের নামই হয়ে উঠতো পরিচয়। অদ্ভুত সুন্দর সবুজ গ্রামটি ছিল বন্দে আলী মিয়া'র কবিতার মতো 'পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই, একসাথে খেলি আর পাঠশালে যায়'। আমাদের গ্রামের শেষ মাথায় ছিল হিন্দু পাড়া। সনাতন এ ধর্মের অনেক বন্ধু ছিল আমাদের খেলার সাথী, পড়ার সঙ্গী। 

 

পূজার সময় গোটা গ্রামে গন্ধ ছুটতো। সেই ঘ্রাণ, ঢাকের আওয়াজে সারা গ্রাম গিয়ে জুটতাম সেখানে। তখন তাদের বাড়িঘর হয়ে উঠতো আমাদের। আনন্দের শেষ থাকতো না। মজার কত কি খেতাম-লুচি, মুড়কি, নাড়ু। শুধু রাতে ঘুমাতে যেতাম বাড়িতে। পূজার এ ক’টা দিনে তারা হয়ে উঠতো পরম আত্মীয়। 

 

এরপর থেকে দূর্গাপূজা যতবার এসেছে, আমি ফিরে গেছি আমার সবুজ 'বন্দে আলী মিয়া'র গ্রামে। এখনো যায়, তবে কল্পনায়। পূজার গন্ধ নাকে এলে এখনো মুখে মুড়কির স্বাদ পায়। এখনো স্বপ্নতাড়িত হয়ে এ বাড়ি, ও বাড়ি ছুটোছুটি করি। 

 

আমাদের সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই গ্রাম ১৯৯৬ সালে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফারাক্কার খুব কাছে হওয়ায় ভয়াল নদীভাঙনের শিকার এই পুরো অঞ্চল। ২৪ বছর আগে মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া গ্রামের ঘ্রাণ তাড়িয়ে বেড়ায় এখনো...

লেখক: রাশিদ পলাশ, টেলিভিশন প্রযোজক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা