ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ৯ পৌষ ১৪৩২
good-food

ইসলামে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার শাস্তি কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৮ ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫  

মহান আল্লাহই সমগ্র মানবজাতির স্রষ্টা এবং তার দৃষ্টিতে সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। ইসলামে কোনো মানুষকে আলাদা করে দেখা বা বৈষম্য করা ঠিক নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরো পৃথিবী এক পরিবারের মতো, যেখানে মর্যাদা ও অধিকারে কোনো ভেদাভেদ নেই।

এছাড়া, জনরোষ, গুজব, সন্দেহ, প্রতিশোধ, বিদ্বেষ, অসতর্কতা বা অতিউৎসাহ যে কারণেই হোক না কেন, বিচার ছাড়া কারও প্রাণনাশকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।

মহান আল্লাহর নবি হজরত মুসা (আ.) এর আগমন ঠেকাতে ফেরাউন বনি ইসরাইলের ছেলে শিশুদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এটি ছিল নির্বিচার গণহত্যার এক প্রকাশ্য ঘোষণা। পবিত্র কুরআনেও এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

ফেরাউন বলল, ‘আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২৭)

তাদের হত্যার কারণে ফেরাউনের পরিণতি হলো ভয়াবহ। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং ওরা মনে করেছিল যে, ওরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না। অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩৯, ৪০)

ইসলামের মতে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মহাপাপ। বিচার ছাড়া কাউকে মারধর করা বা শাস্তি দেওয়া আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো নরহত্যা কিংবা পৃথিবী বা সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে বিচারের রায় ছাড়া যদি কেউ কোনো মানুষকে হত্যা করে, তা হলে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো।’ (সুরা: মায়েদা, আয়াত: ৩২)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘যে লোক কোনো মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ৯৩)

গণপিটুনি সম্পর্কে প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সবাই মিলিত হয়ে যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরিক হয়, তাহলে আল্লাহ তাদের সবাইকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (তিরমিজি) 

প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথমেই যে বিষয়ে ফয়সালা হবে; তা হলো রক্তপাত বা হত্যাকাণ্ড।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হজরত ওমর (রা.) তার শাসনামলে গণপিটুনির অপরাধে ইয়েমেনবাসী সাত জন অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ‘যদি ইয়েমেনের রাজধানী 'সানাআ'র সব মানুষ মিলে হত্যা করত তবে আমি সানাআর সব মানুষের ওপর আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতাম।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক)

গণপিটুনির বিরুদ্ধে সাহাবা কিরাম, বিভিন্ন মাজহাবের ইমাম, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিনের সর্বসম্মত ঐকমত্য হলো- যদি একসঙ্গে সারা পৃথিবীর হাজারো মানুষ একত্র হয়ে কোনো একজন নিরপরাধ মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে, তাহলে তাদের সবাই অপরাধী এবং এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।