ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩২৩

করোনা আক্রান্ত মনে হলে কী করবেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৩ ১১ জুলাই ২০২০  

এখন কারো জ্বর, সঙ্গে শুকনো কাশি বা শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। স্বাভাবিক প্রশ্ন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলাম নাতো? অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেগুলোতে সেবা না পাওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। 
প্রেক্ষাপটে অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হাসপাতালে যাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। কিন্তু আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনার মধ্যে করোনা সংক্রমণের একাধিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাহলে কী করবেন?
এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাবেরা গুলনাহার, ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজি সাইফুদ্দিন বেন্নু এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন। 
তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো-
শুরুতেই আলাদা হয়ে যান
করোনা সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর ও শুকনো কাশি। এছাড়া থাকতে পারে শরীরের পেশীতে ও গলায় ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না থাকা, শ্বাসকষ্ট, কখনো পেট খারাপ ও বমি বা বমি বমি ভাব।
চিকিৎসকেরা মনে করেন, কেউ যদি নিজের মধ্যে এরকম একাধিক উপসর্গ দেখতে পান, তাহলে শুরুতেই 'সেলফ-আইসোলেশনে' চলে যান। অর্থাৎ নিজেকে পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলুন।
এতে পরিবার, কর্মস্থল এবং আশপাশের মানুষের মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে। সম্ভব হলে আলাদা একটি ঘরে থাকুন। সেখানে যেন প্রাতঃকর্ম এবং অন্যান্য কাজের জন্য বাইরে বের হতে না হয়। 
খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধ ঘরের দরজার বাইরে রেখে যাবেন পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন এবং মাস্ক পরুন।
নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে
চিকিৎসকেরা বলছেন, এখন সাধারণভাবে জ্বরের সঙ্গে আরো এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড-১৯ ধরে নিয়েই ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নমুনা পরীক্ষা করানো যায়। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৬২টি সরকারি পরীক্ষাগারে করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২টি ঢাকায়। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হটলাইন নম্বরে ফোন দিয়ে কিংবা স্থানীয় সিভিল সার্জন বা সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করতে হবে।
সরকারি পরীক্ষাগারে বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করানো যাবে। বেসরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালে ৩,৫০০ টাকা এবং বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ বেঁধে দিয়েছে সরকার।
গরম পানির গার্গল ও ভাপ
আপনি হয়তো নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছেন। কিন্তু তার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত বসে না থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু কাজ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে গরম পানির গার্গল করা এবং চিকিৎসকেরা বলছেন দিনে অন্তত চার থেকে ছয়বার গার্গল করুন। এছাড়া দিনে কয়েকবার গরম পানির ভাপ নিন।
পুষ্টিকর খাবার খান
চিকিৎসকেরা মনে করেন, এসময় ইম্যুনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খান। এজন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খান। স্যুপ খেতে পারেন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
এসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক মাধ্যমে কারো শেয়ার করা প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ খেতে নিষেধ করছেন। টেলিফোনে কিংবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের উপসর্গ ও লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। তবে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি জাতীয় ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই সেটি প্রেসক্রিপশন ছাড়াও খেতে পারেন।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা খেয়াল রাখুন
এসময় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রার ওঠানামা খেয়াল রাখতে হবে। পালস অক্সিমিটার নামে ছোট একটি মেডিকেল যন্ত্র এক্ষেত্রে হাতের কাছে রাখতে পারেন। আঙুলের মাথায় লাগিয়ে হৃৎস্পন্দন ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা যায়। সাধারণত পালস অক্সিমিটারে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেন মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।
অর্থাৎ অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের কম হলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বুক-ব্যথা কিংবা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। তখন অক্সিজেন দিতে হবে। ওই সময় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে অথবা বাড়িতেই অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে শ্বাসকষ্ট না হলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ। চিকিৎসকেরা মনে করেন, এসময় রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং তাকে সাহস দিতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা করতে সহায়ক কাজকর্ম করা এবং প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের বিশেষ সতর্কতা
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অ্যাজমার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিংবা যাদের বয়স বেশি তাদের ঝুঁকি অন্য রোগীদের চেয়ে বেশি। সেজন্য আপনাকে বাড়তি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
অন্যান্য কোভিড-১৯ রোগীর জন্য যা যা করনীয়, তাদের জন্যও সেগুলো প্রযোজ্য হবে। খেয়াল রাখতে হবে শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম করুন। সেই সঙ্গে আগে থেকে যেসব ওষুধ চলছিল, সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর