ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪০২

গণপরিবহণ-রাস্তাঘাট-বাজারে ভিড়, করোনামুক্ত থাকতে যা যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০০ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা সংক্রমণ কমছে, এ দাবি নিয়ে পূর্ণোদ্যমে গণপরিবহনে মানুষের চলাচল শুরু হয়েছে। বাস, ট্রাক, কার, সিএনজিতে রাস্তাঘাট ভরপুর, পুরোদমে চলছে ট্রেন। স্বভাবতই রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ছে। এসব যানবাহনে ঠাসাঠাসি করে লোকজন বাড়ি, অফিস, কর্মস্থল, বাজারে যাতায়াত করছেন। 

এ পরিস্থিতিতে সাবধান না হলে প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জনমানুষ সতর্ক না হলে অত্যন্ত ছোঁয়াচে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবলভাবে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই যতটা সম্ভব নিজেদের সাবধান থাকতে হবে।
মাস্ক পরতে হবে

সবাইকে মাস্ক পরে গণপরিবহনে উঠতে হবে। সুরক্ষা দেয় এমন মাস্ক পরতে হবে। কাছে তা একাধিক রাখতে হবে। বাসা থেকে মাস্ক পরে বের হতে হবে। বাসে বসে ইচ্ছামতো সেটা খোলা যাবে না। গলায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। বাস থেকে নেমে অফিস কিংবা বাসায় পৌঁছে সবকিছুর আগে মাস্ক খুলে ফেলতে হবে। খুলে রেখে দেয়া মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে না।

গ্লাভস ব্যবহার করুন
করোনা থেকে সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হলো হাত পরিষ্কার রাখা। গণপরিবহনে ওঠার সময় হ্যান্ডেল ধরতে হয়। অনেক সময় বাসের সিটের ওপর হাত দিতে হয়। টাকা ধরতে হয় যাতে ভাইরাস থাকতে পারে। গণপরিবহনে বারবার হাতে স্যানিটাইজার দেয়া মুশকিল। এর চেয়ে হাতে গ্লাভস পরাই ভালো। এতে জীবাণু হাতে লাগার বদলে গ্লাভসে লাগবে। 

তবে ব্যবহার করা গ্লাভস কিভাবে ফেলবেন সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজোড়া গ্লাভস একবারই ব্যবহার করতে হবে। অফিসে বা বাসায় ঢোকার আগেই সেটি ফেলে দিতে হবে। গ্লাভস খোলার সঠিক নিয়ম হচ্ছে উপরের দিক থেকে ধরে টান দিয়ে উল্টো করে খোলা এবং উল্টো করেই সেটি ফেলতে হবে।

ব্যাগ বহন করা যাবে না
অফিসে বা অন্য কাজে যাওয়ার সময় অনেকেই সঙ্গে ব্যাগ বহন করেন। সেটি না করাই ভালো। কারণ, ব্যাগ ধুয়ে পরিষ্কার করা মুশকিল। নারীরা অনেক সময় চামড়ার তৈরি হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহার করেন। সেটি পরিষ্কার করা আরও সমস্যা। যতটা সম্ভব কম জিনিসপত্র নিয়ে বাইরে বের হতে হবে, যা পকেটে ঢোকানো যায়। মেয়েদেরও উচিত সালোয়ারে চেইন যুক্ত পকেট তৈরি করে নেয়া।

পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরুন
বাংলাদেশ গরমের দেশ। এখানে অনেকেই আরামের জন্য ছোট হাতার জামা পরেন। তবে করোনাকালে চলাচলের সময় এমন পোশাক পরা উচিৎ যাতে শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা থাকে। যেমন-ফুলহাতার শার্ট বা কামিজ পরা, টি-শার্ট না পরা, জুতো-মোজা পরা উচিৎ। 

সঙ্গে মাস্ক, গ্লাভস ও চোখে চশমা থাকলে অনেক সুরক্ষা পাওয়া যাবে। বাড়ি গিয়ে পোশাক খুলে সরিয়ে রাখতে বা ধুয়ে ফেলতে হবে। সামর্থ্য থাকলে 'ফেস-শিল্ড' ব্যবহার করতে হবে। এটি বারবার চোখ, মুখ, নাকে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে সহায়তা করবে।  অন্য কারো হাঁচি কাশি থেকেও রক্ষা করবে।
 

পথে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা
গণপরিবহনে উঠে অনেকেই বাদাম, চানাচুর, কাটা শসা, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। সাধারণত হকারদের কাছ থেকে এসব কেনা হয়। এটি একেবারে করা উচিৎ নয়। কারণ, তারা দিনভর রাস্তায় ও গাড়িতে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসেন।

এখন বাইরের খাবার একদমই খাওয়া উচিত নয়। কেননা, খাবার যিনি প্রস্তুত করছেন, বিক্রি করছেন, তাদের কার মধ্যে করোনা সংক্রমণ রয়েছে, হাতে কী লেগে আছে তা জানা নেই।
অধিকন্তু কিছু খেতে হলে মাস্ক খুলতে হবে। যা একেবারেই ঠিক হবে না।

থুথু ও কফ না ফেলা
বাংলাদেশে অনেকেই প্রকাশ্যে রাস্তায় থুথু ও কফ ফেলে থাকেন। গণপরিবহনের জানালা দিয়েও অনেকে সেটি করেন। থুথু ও কফে করোনা থাকতে পারে। গণপরিবহনে চলার সময় সঙ্গে টিস্যু রাখা। মুখে তা চেপে ধরে হাঁচি, কাশি দেয়া ও কফ ফেলতে হবে।

সেই টিস্যু ইচ্ছামতো যানবাহনের জানালা দিয়ে ফেলে দেয়াও মারাত্মক ভুল। গণপরিবহনে ওঠার আগে সঙ্গে একটা পলিথিন নিতে পারেন। ব্যবহৃত টিস্যু তাতে রেখে বাস থেকে নামার পর সঠিক জায়গায় ফেলা উচিত।

জুতোর নিচেও মনোযোগ দিন
রাস্তায় কফ ও থুথু ফেলা হলে সেটি জুতোর নিচে করে বাড়িতে অথবা গাড়িতে পৌঁছে যায়। গণপরিবহন ব্যবহার মানে বহু মানুষের পায়ের জুতো তাতে উঠেছে ও নেমেছে। সেই সঙ্গে কফ, থুথু ও করোনা। 

তাই জুতোর নিচের অংশ পরিষ্কার করার জন্য যানবাহনের প্রবেশদ্বারে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রাখা দরকার। যানবাহন থেকে নেমে অফিস বা বাড়ির বাইরে একইভাবে জুতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। সামর্থ্য থাকলে কিনে 'ডিসইনফেকট্যান্ট স্প্রে' দিয়ে জুতোর নিচে স্প্রে করা যেতে পারে।

দূরত্ব বজায় রাখুন
বিশ্বের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ এড়াতে একে অপর থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের সেটি ৩ ফুট। কিন্তু এদেশে সেটিও মেনে চলা কঠিন। লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে মানুষজনের ভিড়ের যে ছবি প্রকাশিত হচ্ছে তা রীতিমতো ভীতিকর।

কিন্তু মারণঘাতী ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যত পদ্ধতির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, তন্মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী হলো মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। সেজন্য দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।

বাস কন্ডাক্টরদের বুঝাতে হবে
বাসের কন্ডাক্টরদেরও যাত্রীদের দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে হবে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়িয়ে চলা। ড্রাইভার বা কন্ডাক্টরদের যাত্রী পিছু কমিশনের সিস্টেম বাড়তি ভিড়ের জন্যে দায়ী। এ সিস্টেম বদলানো দরকার। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যাপারটা সঠিকভাবে কার্যকর করা গেলেও অনেক সমস্যার সুরাহা হতে পারে।

সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে
নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাসা থেকে বের ও ঢোকার সময় তা অবশ্য করণীয়। অফিস বা কর্মস্থলে প্রবেশ ও বহির্গমনের সময়ও এটি প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে 
পারলে ঘন ঘন হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। কারণ, এ মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ঘটে। অন্যথায় সংক্রমিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি ষোল আনা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি আসল কি না সেটিও দেখে নিতে হবে। কারণ, নকল স্যানিটাইজারে বাজার এখন সয়লাব।