ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৯৪

তিস্তার বুকে কর্মহীন হাজার হাজার জেলে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪১ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

রিপন দাস : প্রমত্তা তিস্তার বুকে দিনরাত মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকতেন জেলেরা। কিন্তু এখন তা ভিন্নরুপ। বিশাল তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বালির চর। পায়ে হেঁটে মানুষ এ পার থেকে ওপারে যাচ্ছে। দু-একটি নৌকা দেখা গেলেও তা কাজে আসছে না জেলেদের।  
অথচ বহু প্রাচীনকাল থেকেই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নগরী। বিশেষ করে মানব জাতির বড় অংশই নদী ও এর আশেপাশের বসতি গড়ে তোলেন। বর্তমানেও এর প্রভাব থাকলেও নদী কেন্দ্রিক মানুষে আছে নানা কষ্টে। নদী অঞ্চলের মানুষ অনেক বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে। বাংলাদেশের বড় বড় নদীগুলোর মধ্যে তিস্তার গুরুত্ব অনেক বেশি। তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে বহু জেলে পরিবারসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের বিভিন্ন কর্মকা-ের কারণে তিস্তা নদী এখন মরতে শুরু করেছে। তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী।  তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। ভারত এ নদীর উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেয়ায় এবং বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প করে পানি তুলে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশের অংশে দেখা দিয়েছে পানি শূন্যতা। তিস্তার বুকে এখন শুধু বালি আর পলি রয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকার মানুষের জীবন যাত্রা ও জীববৈচিত্র্য স্থবির হয়ে পড়ছে। 
এরপরেও প্রমত্তা তিস্তার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু জেলে ও মাঝি পরিবার। রয়েছে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাও। তবে এসব নৌকায় করে জেলেরা মাছ ধরতে দিনরাত পড়ে থাকতো নদীর বুকে। কিন্তু বিস্তৃর্ণ এ নদী অববাহিকায় এখন পানির অভাবে হাহাকার করছে। চরের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অংশে পানি থাকায় জেলেরা মাছের টানে ছুটে যায় সেখানে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই পাই না তারা। অনেক কষ্টে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। মাছ ধরে যে পরিবারগুলো জীবন যাপন করতো, তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। 
জেলা মৎস্য কার্যালয়ের এক সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলায় কার্ডধারী জেলে সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৩১৬ জন। এছাড়ার এর বাইরে অনেক জেলে পরিবার রয়েছে। তবে অনেকেই এখন নিজ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে নদীতে যখন পানি আসে তখন আবার মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এসব জেলেরা। 
চরে আসা জেলেরা জানান, এখন নদীতে পানি না থাকায় বাড়ীতে বসে জাল বুননের কাজে ব্যস্ত সবাই। আবার অনেকেই কৃষি কাজ করেও সংসার চালাচ্ছেন। তবে সব জেলেরায় আশায় আছেন তিস্তা নদীতে পানি আসলে আবার তারা মাছ ধরতে পারবেন। 
তিস্তা পাড়ের জেলেদের দাবী সরকারী বা বেসরকারীভাবে যদি কোন কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে তাদের আর কষ্ট থাকবে না। 
লালমনিরহাট মৎস্য কার্যালয়ের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারিফুর রহমান সরকার জানান, এ সময় নদীতে পানি না থাকায় জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তাই যে সময়টা নদীতে পানি থাকে না, সে সময় জেলেদের অন্য কোন কর্মসংস্থান অথবা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তাদের রাখা যায় কি না, এ ব্যাপারে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 
তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সরকার যদি বাংলাদেশের নদীতে পানির ভারসাম্য নিয়ে আসতে পারে তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান কমবে বেকারত্ব।   
 

অর্থনীতি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর