ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০০৭

নিরাপত্তা বাড়লেই বাঘের সংখ্যা বাড়বে

সুন্দরবনে ১১৪ বাঘ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৫৩ ২৯ জুলাই ২০১৯  

বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে গেল ৩ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৪ টি। অর্থাৎ ৩ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে ৮টি। চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪ বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে।

 

বনবিভাগ সূত্র বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৩ বছরে বাঘের এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

তবে, ৩ বছরে মাত্র ৮ বাঘ বাড়া সংখ্যায় খুব একটা বেশি নয়। বলছেন, বিশেজ্ঞরা।

 

তারা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বন বিভাগ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ন নিরাপদ করতে পারেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা বাড়বে। বর্তমানে সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।

 

সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে রবার্ট হনড্রেকিসের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিলো ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরপি চালিয়ে ৪৩০ থেেক ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।

 

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়।

২০০৪ সালে জরিপে বাঘরে সংখ্যা ছিলো ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।

 

২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায়। চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪ টিতে।

 

সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে। বাকি ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা।

 

সুন্দরবনে চোরা শিকারি ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

 

এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েক শত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই অবস্থায় সুন্দরবনে বাঘের আবাসভূমি এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

 

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসর্মপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে।

 

এরইমধ্যে বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফঁাড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালু করা হয়েছে।

 

বাঘের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগষ্ট এই ৩ মাস সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ করতে যাচ্ছে বন বিভাগ। এতে করে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পাবে। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর জন্য সম্পূর্ন নিরাপদ করতে কাজ করছে বন বিভাগ।

 

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বেঙ্গল টাইগার আছে প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুন্দরবনে আছে ১১৪টি ও ভারতীয় সুন্দরবনে ৮৪টি। বাকিরা ভারতের অন্য বনাঞ্চলে এবং নেপাল ও ভুটানে থাকে।

যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ বৈচিত্র্যময় এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বেশি।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন। এতে দেখা গেছে, জিনগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সুন্দরবনের বাঘের তিনটি ধরন (হেপলোটাইপ) আছে। ভারতে দুই, নেপাল ও ভুটানে এক ধরনের বেঙ্গল টাইগার আছে। জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও সুন্দরবনের বাঘ এখনো টিকে আছে।

এমনি অবস্থায় আজ ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এবছর বাঘ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য - ‘বাঘ বাঁচাতে শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি’। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বাঘের বসবাস এমন দেশগুলোতে বাঘের বংশ বৃদ্ধির অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে দিবসটিতে নেয়া হয় নানা কর্মসূচি।