ঢাকা, ২৭ জুলাই শনিবার, ২০২৪ || ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
good-food
১৬৬

বাংলাদেশে ঢুকতে সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:১৩ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চলমান রয়েছে। গত শনিবার থেকে নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুরু হওয়া সংঘাত থামছেই না। দুই বাহিনীর গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে সীমান্তজুড়ে।

 

চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির চাকমা সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। পাশাপাশি কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাও সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান মুঠোফোনের মাধ্যমে এ কথা নিশ্চিত করেছেন। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা।

 

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া হচ্ছে গুলি ও মর্টার শেল। গুলির মুহুমুহু শব্দে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘর ছেড়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ।

 

এরই মধ্যে দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা একটি মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হয়েছেন স্থানীয় জলপাইতলী গ্রামের গৃহবধু ও এক রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হয়েছে এক শিশু। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতায় টেকনাফ হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সিমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় এক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করেছে বিজিবি। এর আগে বিদ্রোহীদের গোলাগুলির মুখে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৯৫ জন মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর সদস্য। তাদের মধ্যে আহত ৯ জনকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 

এদিকে সীমান্তে মর্টার শেলে দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানানোর কথা জানিয়েছেন রিজওয়ান কমন্ডার। সোমবার মর্টার শেলের আঘাতে নিহতরা হলেন, নাই্ক্ষ্যংছড়ির ধুমধুম তুমব্রু জলপাইতলী এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা (৫৫) এবং উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮/ই এর ডি ব্লকের বাসিন্দা মৃত ধলু হোছেনের ছেলে নবী হোছন (৬০)। আহত নুসরাত মনি (৬) স্থানীয় শহিদুল ইসলামের মেয়ে। নিহতরা চাষের জমিতে কাজ শেষে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

 

তথ্যমতে, মিয়ানমারের আরকান রাজ্য 'স্বাধীনের' জন্য সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আসছে স্থানীয়দের সংগঠন আরাকান আর্মি। প্রতিদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো কোনো এলাকায় চলছে দুই বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ। ইতিমধ্যে আরকান রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখলেরও দাবি করেছে আরকান আর্মি। দুই পক্ষের চলমান সংঘর্ষে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ধুমধুম ইউনিয়ন এবং উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

 

গতকাল রোববারের প্রচণ্ড সংঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতে সোমবার সকাল থেকে তুমব্রু সীমান্ত এবং টেকনাফের উলুবনিয়া এবং উখিয়ার পালংখালীর বটতলী সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। আকাশপথে হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের জন্য হাজারো রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অবস্থান করছে।

 

সোমবার সকালে অনুপ্রবেশের সময় উলুবনিয়া সীমান্ত থেকে এক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করেছে বিজিবি। শুধু রোহিঙ্গা নয়, বিদ্রোহীদের ভয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর সদস্যরা। ইতিমধ্যে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে ৯৫ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ওপার থেকে রোহিঙ্গা এবং বিজিপি সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে- এমন আশঙ্কায় সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সাগরে কোস্টগার্ড সদস্যরাও রয়েছে। কোনো অবস্থায় আমরা রোহিঙ্গা কিংবা অন্য কাউকে ঢুকতে দেবো না। সকালে রোহিঙ্গা পরিবারের অনুপ্রবেশের বিষয়টি আমি এখনও অবগত নই।

 

৩৪ বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, কোনো অবস্থায় মিয়ানমারের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

 

বিজিবি কক্সবাজার রিজিওয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বলেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলা সংঘাতের কারণে আমরা সদর দপ্তরের অনুমতিক্রমে ৯৫ জন বিজিপির সদস্যকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের মিয়ানমার হস্তান্তর করার জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। যে ৭ জন আহত বিজিপি সদস্য রয়েছেন তাদেরকে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। জলপাইতলীতে দু'জন সাধারণ নাগরিক নিহতের ঘটনাটি অত্যান্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছি মিয়ানমার সরকারকে।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর