ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৮৬

‘এক জীবনে আর কয় বার নদী ভাঙন দেখব?’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৫৬ ৯ আগস্ট ২০১৯  

চর শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুর্গম আর অবহেলিত জনপদের কথা। খড়ের চালার খুপরি ঘর, আলোহীন, স্বাস্থ্যহীন, শিক্ষাহীন ও নাগরিক সেবা বঞ্চিত অজানা জনপদ। যেখানে কৃষিকে পুঁজি করে চলে সংগ্রামী মানুষের জীবন। ভাঙা-গড়ার মধ্যে টিকে থাকার জীবনে সংগ্রাম নিত্য কাহিনী।

বর্ষা এলে সেখানে গিলে খায় বসতি। আবার শুষ্ক মৌসুমে জমে ওঠে নতুন ঘর তোলার প্রতিযোগিতা। বছরের পর বছর ঘর-বসতি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও চরের মায়ায় জীবনে জড়িয়ে থাকে অন্ধকারে আলোক বর্তিকা হয়ে। তাই বার বার চরেই গড়ে ওঠে তাদের জীবনের নতুন জয়গান।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর রাধানগর চরের আসমত আলী (৭৫) জানান এই জনপদের ভাঙা-গড়ার গল্প। তিনি বলেন, ‘এক জীবনে আর কয় বার নদী ভাঙা দেখব? এ পর্যন্ত ছয়বার যমুনায় ভেঙে গেছে বাড়ি-ঘরসহ ফসলি জমি। আবার নতুন করে অন্য জায়গায় বাড়ি তুলে জীবন শুরু করেছি। এখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বয়সের ভারে আর পারি না।’

আসমত আলী আরো বলেন, ‘যমুনা নদীর ভাঙনে ১৫ বছরে ৫ বার বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এবার নিয়ে ছয় বার চলছে। প্রতিবারই নতুন উদ্যোমে আরেক চরে ঘর তুলে জীবন শুরু করেছি। এখন বয়স হয়েছে, ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। ওরা এই ভাঙা গড়ার জীবনের ভার নেবে।’ 

বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির পুরোটাই ভেঙে গেছে। এ অবস্থা শুধু আসমত আলীর নয়। যমুনা নদীর রাধানগর ও বৈশাখী চরের প্রায় তিন শতাধিক পারিবারের একই অবস্থা।

রাধানগর গ্রামে রিফাস মন্ডলের জমি ছিল শতাধিক বিঘা। তার ছেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৮২ সালে রাধানগর গ্রামটি যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। ২৫ বছর পর আবারও চরটি জেগে ওঠে। প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি নিয়ে চরটি জেগে ওঠার পর আবার বসতি গড়ে ওঠে। 

চরটি আগের রাধানগর গ্রামের মতই সুজলা সুফলা হয়ে ওঠেছিল। এবার বন্যায় সমস্ত চর আবার ভেঙে গেছে। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে শূন্য হাতে কোনোরকমে জীবন নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

চরের মকবুল হোসেন, মুরাদ হোসেন, আবু হানিফ, নুরু মিয়া, আব্দুল মজিদ, শিপন মিয়া, আব্দুস ছালাম, শহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, বদি মিয়া, আব্দুল মান্নান, আব্দুল খালেক, নুরু গাড়িয়াল, আব্দুস সামাদ, আয়নাল হক, আব্দুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মুন্নাফ হোসেন, শফিকুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, আব্দুর রহিম, জেল কাদের, লাল মিয়া জানালেন, বাড়িঘর এবং জমিসহ যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তাদের সবকিছু। গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। সঙ্গে কিছু নিতে পারেননি তারা।

উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে জেগে ওঠা যমুনার চরে বসতি শুরু হয়। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এবার সেই রাধানগর ও বৈশাখী চর ভাঙনের কবলে পড়েছে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এক সপ্তাহে প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। 

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, এবারের বন্যায় বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাজ চলমান রয়েছে। আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। 

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর