ঢাকা, ১৮ আগস্ট সোমবার, ২০২৫ || ২ ভাদ্র ১৪৩২
good-food

জুলাই সনদে যা যা আছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৫৩ ১৭ আগস্ট ২০২৫  

গণ অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদ ‘সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে’ কার্যকরের পাশাপাশি তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখতে চায় না ঐকমত্য কমিশন। পট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ফসল হিসেবে প্রণয়ন করা এ সনদের ’পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়ায়’ দলগুলোর কাছে এমন অঙ্গীকার চায় কমিশন।

 

একই সঙ্গে বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলেও এ সনদের বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন আটটি অঙ্গীকারনামা রেখে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পাঠিয়েছে সংস্কার বিষয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পাশাপাশি এ সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এতে।

 

আইনি সুরক্ষাসহ এ সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নে এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আগেই অঙ্গীকার চায় রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করে আসা এ কমিশন।বহুল আলোচিত এ সনদে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা সই করবেন। শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সনদের খসড়া পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন। তবে অঙ্গীকারের বিষয়বস্তু ও চূড়ান্ত সংস্কারগুলোর বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

 

সনদের এ খসড়া পাওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব দেখে মনে হয়েছে, ওনারা ঐকমত্যের প্রস্তাব না, বিশেষ গোষ্ঠীর প্রস্তাব দিয়েছেন।

 

সনদের খসড়ার সঙ্গে আট দফার অঙ্গীকারনামায় সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না- এমন প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছেন সংলাপে অংশ নেওয়া আরেক বামপন্থি দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা। তিনি বলেন, যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার জনগণের আছে এবং থাকা উচিত। সেখানে অঙ্গীকারনামায় সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলা হয়েছে- এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সেটা মানতে পারছি না।

 

জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া পাওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাসও। তবে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। 

 

দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠানোর তথ্য দিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ বলেন, আগামী ২০ অগাস্টের মধ্যে এ খসড়ায় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। আমরা ২০ তারিখ বিকালের মধ্যে দেওয়ার জন্য বলেছি, সেখানে কোনো বাক্য কিংবা শব্দ, ব্যাকরণগত ত্রুটি থাকলে তা জানানোর জন্য বলেছি। 

 

কবে নাগাদ সই হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ তারিখ পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেন কি না সেটা আগে দেখি। তারপরে সিদ্ধান্ত। চূড়ান্ত এ খসড়া নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আবার মাসের শেষ সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে বসবে বলেও তুলে ধরেন তিনি। আলী রিয়াজ বলেন, আমরা আরেক দফা বসব, এটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছি। তারা যে পরামর্শ দেবেন সে অনুযায়ী ২৫ বা ২৬ তারিখে যে সপ্তাহ শুরু হবে সেখানে ওনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) সাথে বৈঠক করতে পারব।

 

সমন্বিত খসড়ায় সনদের পটভূমি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রাথমিক খসড়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন করে এই ‘সমন্বিত খসড়া’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে দুই পর্বের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামতের প্রতিফলন রাখা হয়েছে।

 

সনদকে ‘বিশেষ মর্যাদা’, ৮ দফা অঙ্গীকারনামা 

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করেছে সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে জাতীয় সনদকে বিশেষ মর্যাদা ও আইনি ভিত্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে সমন্বিত খসড়ায়। জুলাই সনদের সমন্বিত এ খসড়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- যেটির প্রথম ভাগে জুলাই সনদের পটভূমি, সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে বর্ণনা করা আছে।

 

দ্বিতীয় ভাগে ঐকমত্য হওয়া ৮৪ সংস্কার প্রস্তাব এবং সর্বশেষ ভাগে রয়েছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের

 

অঙ্গীকারনামা, যেখানে ৯ দফায় দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অঙ্গীকারনামার পটভূমিতে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের সব কার্যাবলি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়;

 

একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানোত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো আইনি কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরনের কার্যাবলিকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণ-অভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে।

 

উপরে উল্লেখ করা এমন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং ‘সাংবিধানিক কনভেনশন’ বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নিচের অঙ্গীকারগুলো করার কথা বলা হয়েছে।

 

সমন্বিত খসড়ায় থাকা অঙ্গীকারগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো- 

১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

 

২) এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সকল বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করব এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

 

৩) এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

 

৪) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ ’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

 

৫) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

 

৬) আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

 

৭) আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

 

৮) আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর যে সকল প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

 

চার মূলনীতি প্রশ্নে আগের অবস্থানেই বামপন্থী কয়েক দল

কয়েকটি দলের আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত সংবিধানের বিদ্যমান মূলনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত যে খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে তাতে আলোচিত আরও কয়েকটি বিষয়ে বদল আনতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। সমন্বিত খসড়ায় চার মূলনীতি নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখ থাকবে।

 

তবে এ নিয়ে পাঁচটি দলের আপত্তি থাকায় তা আবারও নতুন বিতর্ক তৈরি করবে বলে মনে করছেন কয়েকটি দলের নেতারা। তাদের কথায় সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকার আভাস মিলেছে। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।

 

চার মূলনীতিতে পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, আমরা যেটা দিয়েছি, সেখানে পাঁচটি দল ছাড়া সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। এখানে তো বলা হয়নি বাদ দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি” উল্লেখ্য থাকবে।

 

খসড়ায় চার মূলনীতি নিয়ে কিছু বলা না হওয়ায় কয়েকটি দলের নেতারা বলছেন, আগের চার নীতি বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? জানতে চাইলে আলী রিয়াজ বলেন, আমরা বাতিলের কথা বলিনি, আমরা বলেছি মূলনীতি অংশে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি” উল্লেখ্য থাকবে।

 

জাতীয় চার মূলনীতি প্রস্তাবিত সনদে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাসদ (মার্কসবাদী) এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি নিয়ে কমিশনের যে প্রস্তাব ছিল, এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে আমরা বামপন্থি দল সংলাপ বর্জন করেছিলাম। কিন্তু এর কোনো উল্লেখ আমরা আজকের দেয়া খসড়ায় দেখছি না। আগের চার মূলনীতি বহাল রেখে নতুন প্রস্তাব? না কী চার মূলনীতি বাদ দেওয়া হয়েছে সেটাও বলা নাই। প্রকারান্তে কৌশলে তারা বাদ দিয়েই প্রস্তাব রেখেছে। সব থেকে বড় কথা, মূলনীতির অংশে তারা লিখেছে ৩১টি দল একমত হয়েছে। আমরা চার দলতো সংলাপ বর্জন করেছি, নোট অব ডিসেন্টও দেইনি, এটাও এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এটা কোন ধরনের কথা। আমরা এখন দলগতভাবে বসব, স্বাক্ষর করব কি না সেটা জানাব।

 

একই সুরে কথা বলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, সবশেষ প্রস্তাবে মূলনীতি নিয়ে যা লিখছে, সেখানে আমাদের চার বাম দলের বয়কট এবং গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ আরও কয়েকটি দলের নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ নেই। তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিলে এটা আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না। এখন আমরা দলীয়ভাবে আলাপ আলোচনা করব, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবো কিনা।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর