ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৫৬

এবার তুলে নিয়ে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ, প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৩৫ ৬ জানুয়ারি ২০২০  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর তুলে নিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস। ক্ষুব্ধ সহপাঠী, শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল।

রোববার (০৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতাকে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সার্ভিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

রোববার ক্লাস শেষে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসে চড়ে কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তার সহপাঠীরা জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ওই শিক্ষার্থী।

এসময় পেছন থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার নাকমুখ চেপে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ওই শিক্ষার্থীকে পাশের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে ফেলে রেখে যায় ধর্ষকরা। রাত ১০টার দিকে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে আশপাশের মানুষের সহায়তায় সিএনজি অটোরিক্সায় চড়ে বান্ধবীর বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে রাত ১২দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে আসেন তার সহপাঠীরা।

ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মাঝরাতে ঢাকা মেডিকেলে জড়ো হন তার সহপাঠীরা। মেডিকেলে ছুটে এসে ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনতে সব ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


 

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এটা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। 

ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। 
দেশে ধর্ষকের বিচার হয় না বলেই খোদ রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের শিকার হতে হলো বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সহপাঠীরা। ধর্ষণের প্রতিবাদে এসময় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনা হলে এ ঘটনাগুলো কমে আসতো। আজকের এ ঘটনা হয়তো আমাদের দেখতে হতো না।

ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার জেগে থাকবে। 

সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান বলেন, পুলিশ ব্যর্থ। দেশে আইনের শাসন নেই। তাই এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী রওনক ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ঢাবির একটা মেয়ে যদি রাত ৮ টায় এ শহরে নিরাপদ না হয়, তাহলে বাংলাদেশের কেউ আর নিরাপদ না। 

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জানান, ধর্ষণের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রলীগ। 

উত্তরার এই সড়কগুলোতে এর আগেও বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপরও প্রশাসন নিরাপত্তা না বাড়ানোই ক্ষোভ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 
এদিকে, কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের বিষয়টিকে কলঙ্কজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রোভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন,  বিষয়টি দুঃখজনক, নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমাদের লজ্জার শেষ নেই। মেয়েটিকে প্রথমে পেটানো হয়েছে, পরে তাকে অপমান করেছে দুর্বৃত্তরা। আমরা সরকারের কাছে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে সোমবার তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।

ঢাবির প্রোভিসি আরও বলেন, মেয়েটি শারীরিকভাবে ভালো আছে। তবে তার মানসিক ক্ষত নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তার চিকিৎসার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা তার চিকিৎসার সব ধরনের দায়িত্ব নিয়েছি।

তিনি বলেন, সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো খুবই সক্রিয়। অচিরেই দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে প্রোভিসি মুহাম্মদ সামাদ আরও বলেন, মাত্র অফিস খুললো। ভিসির সঙ্গে কথা বলে বাকি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া, সরকারের কাছে আমরা অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাই। আমরাও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রীর বাবা। রোববার রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট থানার  এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। তার বাবা থানায় মামলার আবেদন করেছেন।