ঢাকা, ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
good-food
৪৩

টেলিগ্রামেও ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের চাঁদাবাজি’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:২৮ ৩০ জুলাই ২০২৫  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়েও আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছেন— দলটির একাধিক নেতার বরাতে এমন খবর প্রকাশ করেছে ‘নিউজ-এইটটিন’। গত সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, নেতাকর্মীদের টেলিগ্রাম গ্রুপে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীকে অনুপ্রবেশের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুব একটা অবাক হননি। তারা এর চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন টেলিগ্রামে ‘চাঁদাবাজির’ ঘটনায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, তাদের দলের সাবেক এমপি ও কিছু মন্ত্রী টেলিগ্রামে কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে মোটা অঙ্কের অর্থ চাওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন অননুমোদিত টেলিগ্রাম গ্রুপ তৈরি হচ্ছে।

 

তারা বলছেন, এসব গ্রুপে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক বছরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একত্রিত হওয়ার প্রাথমিক একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে টেলিগ্রাম।

 

নিউজ এইটটিন বলছে, কিছু কিছু গ্রুপে ২০ থেকে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছেন। এসব গ্রুপে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়, যেগুলো শুরু হয় রাত ৯টা থেকে; চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এসব বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলের সাবেক এমপি এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

 

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যেসব বৈঠকে শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন, সেগুলোতেও চাঁদাবাজি চলে। সেখানে দলীয় প্রধানের উপস্থিতিতে কারা কারা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন, সেটার জন্য টাকা লেনদেন হয়।

 

এজন্য কেউ কেউ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যিনি টেলিগ্রামকে নিজের প্রাথমিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বানিয়েছেন। অভিযোগ তোলা ব্যক্তিরা বলছেন, ওবায়দুল কাদের ‘ঢাকা ঘেরাও’ করার মতো গরম গরম বক্তৃতা দিচ্ছেন, কিন্তু তার বক্তব্যে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পরিকল্পনা বা নির্দিষ্ট সময়সীমা আসেনি।

 

নিউজ এইটটিনের খবরে বলা হয়, ওবায়দুল কাদের এখন এসব টেলিগ্রাম গ্রুপে বক্তব্য দেওয়ার জন্য নিজের মতো করে সময়সূচি নির্ধারণ করেন। তবে দলের অনেকেই মনে করেন, তার এসব কর্মকাণ্ড যতটা না কৌশল, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

 

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিউজ এইটটিনকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে দলের কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখছেন। কিন্তু এগুলো দলের কোনো কাজে আসছে না, বরং আর্থিক প্রতারণার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। টেলিগ্রামে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেনে গেছে।

 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিষয়টি কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল কিংবা মহিবুল হাসানোর মতো নেতাদের জন্যই নয়, এটা দলের প্রধান খোদ শেখ হাসিনার জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ ধারণা করা হয়, অনেক গ্রুপে গোয়েন্দা সংস্থার ইউনূসপন্থি লোকজনও অনুপ্রবেশ করে।

 

নিউজ এইটটিন বলছে, জামায়াত ও বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশের ঘটনা আওয়ামী লীগে আগে থেকেই আছে। এর মধ্যে আবার ইউনূস অনুগত গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছেন দলটির অনেক নেতা। তারা বলছেন, এসব অনুপ্রবেশকারী কথোপকথন রেকর্ড করছে এবং পরে সেগুলোর ভিত্তিতে নেতাকর্মীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

 

এ ধরনের সন্দেহ কীভাবে তৈরি হলো, সেই প্রশ্নে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, মাঝে মধ্যে কিছু অশোভন মন্তব্য আসত। ‘ধানমন্ডি ৩২’ এর মতো পরিচিত গ্রুপেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য লেখা হতো, যা আমাদের নজরে আসে। এর মধ্যে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আলোচনার ভিত্তিতে যখন আমাদের কর্মীদের তুলে নেওয়া হলো, তখন আমরা বুঝতে পারলাম, আমরা যা দেখছি, তার চেয়েও বেশি কিছু ঘটছে।

 

শেখ হাসিনা এখন কীভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চান, সেই প্রসঙ্গে নিউজ এইটটিন বলছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের বলা হয়েছে, হয় রাজপথে নামুন, নয়তো পদত্যাগ করুন। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শেখ হাসিনা চান, নতুন নেতৃত্ব আসুক; তারা নতুন চিন্তা ও উদ্যোগ নিয়ে রাস্তায় নামুক। নেতাকর্মীরা শুধু কিবোর্ড যোদ্ধা হয়ে থাকুক, সেটা তিনি চান না।

 

খবরে বলা হয়, অনেক তথ্য ফাঁস হচ্ছে কিংবা ডার্ক ওয়েবে চলে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের সব টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীকে ভিপিএন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এক বছর হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের পক্ষে লড়াই করতে চায়। তাই অচিরেই প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ‘প্রতিরোধ কমিটি’ দেওয়া হবে।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর