ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৫৬৮

এবার নিশ্চয়ই গুদাম সরিয়ে নিতে আপত্তি করবেন না?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:২৮ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চকবাজার ট্রাজেডি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম মালিকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। এবার নিশ্চয়ই এসব গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে তারা আর আপত্তি করবেন না।

তিনি বলেন, এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেয়ার দাবি উঠেছে। তাতে আর কেউ আপত্তি করবেন না। চকবাজার বা নিমতলীর মতো মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সচেতন থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
গেল বুধবার রাতে চকবাজারের চুরিহাট্টা জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৬৭ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হন। পাঁচটি ভবন পুরোপুরি ভস্মিভূত হয়। যেখানে কেমিক্যালের মজুদ এবং বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের কারখানা ছিল। দমকল বাহিনীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।
এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় অনুরূপ এক রাসায়নিক গুদাম থেকে সৃষ্ট আগুনে অন্তত ১২৪ ব্যক্তি নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, যারা আহত তাদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যাপারে রোববার অফিস খুললে আমরা একটি শোক দিবসেরও ঘোষণা দেব। এসময় দমকল কর্মী এবং পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী এবং চিকিৎসকদের সচেতনতার এবং রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তাদের পাশাপাশি নিজেও নির্ঘুম থেকে সেদিন সারারাত আগুন নিভানোর বিষয়টি তদারকি করেছি। যেসব রোগী মেডিকেলে এসেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে অনেকের লাশ সনাক্ত হয়েছে এবং তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। কয়েকজন এখনো সনাক্ত হতে পারেননি, তাদের ডিএনএ টেস্ট করে স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হবে। সেই প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করেছি।
এসময় পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম রেখে দেয়ার বিষয়ে তিনি ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোপূর্বে নিমতলীতে যখন আগুন লাগলো সেসময় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখান থেকে যত কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রয়েছে সব সরানো হবে। সেজন্য কেরানীগঞ্জে একটি জায়গাও আমরা ঠিক করলাম। উদ্যোগটা নিলাম এবং সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হলো। এখানকার কেমিক্যালের যত গুদাম আছে সেগুলো কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হবে। যাতে করে এখানে আর ধরনের ঘটনা ঘটতে না পারে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাদের অনেকেই এতে রাজী হন নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরানীগঞ্জে সরকার বহুতল ভবন করে আধুনিক গোডাউন তৈরি করে দিতে চাচ্ছিল। যাতে করে এগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং কোনরকম দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। আবার ঘটলেও যেন একটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। সেভাবেই আধুনিক একটি পদ্ধতিতে এসব সরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেহেতু মালিকরা রাজী হন নাই তাই এটা আর কার্যকর করা যায়নি। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়।
তিনি বলেন, আশা করি এই দুর্ঘটনার পর যারা তখন এই আপত্তি জানিয়েছিলেন, তারা এখন আর সেই আপত্তি করবে না। এ সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে রাসায়নিকে গুদাম পুরান ঢাকার থেকে স্থানান্তরে সরকার উদ্যোগ নিলে তা কাজে আসেনি বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
দুর্ঘটনা থেকে পুরান ঢাকাকে রক্ষার জন্য রাসায়নিকের গুদামগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বহুতল গোডাউন গড়ে তোলার জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই অলি-গলি রাস্তাগুলোকে আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে দমকলবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে।
এসময় ঢাকার ধোলাইখাল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল থেকে শুরু করে ঢাকার অনেক খাল এবং জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুকুর খাল এগুলো যেন আর বন্ধ করা না হয়। এগুলো যেন রক্ষা পায়। কারণ ধরনের আগুন লাগলে পানির অভাবটা যেন আর না থাকে। সে বিষয়টি খেয়াল করেই সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করবেন। ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, উৎসুক জনতার জনসমাগম এবং ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেলে লাইভ প্রচার করতে গিয়ে উৎসুক সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
আমি জানি না, এই সময়টা কোনো প্রশ্ন করার সময় কিনা বা সেখান থেকে একটা উত্তর কিভাবে আশা করা যায়? টেলিভিশন সাংবাদিক বা নিউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণমাধমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি। ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মূল কাজ আগুন নেভানোর বিষয়ে আগে সবাইকে দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভদ্রলোক কাজে যাবেন তাকে ধরে রেখে একের পর এক প্রশ্ন, কোনো কোনো চ্যনেল এই কাজটি করেছেন। ভবিষ্যতে দয়া করে সেটা না করে সুস্থভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা সবাই নেবেন। সেটাই আমরা চাই।
এসময় দায়িত্ব পালনের নামে মেডিকেলে রোগীর কাছেও মিডিয়া কর্মীদের ভিড় করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এসমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা বা ৭২ ঘণ্টা না পার হলে সেসব রোগীর কাছে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, তাদের দেখানো বা তাদের ছবি তোলা- এসব বন্ধ করতে হবে। আমি দেশবাসীকেও বলব এই বিষয়গুলোর দিকে একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
কয়েকদিন আগেই সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে আগুন লাগার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত রোগীদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করায় সেখানে আল্লাহর রহমতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে, সেখানে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো তদন্ত চলছে।
এসময় নতুন রাস্তা-ঘাট, স্থাপনাসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণের সময় সেসব জায়গায় যেন পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা মজুদ থাকে সেই দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্ত ৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।